Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ৪)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ৪)

নর্মদার পথে পথে 

  আমার চেতনায় বয়ে চলা সুরধূনীর মূর্ছনায় আমি বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। তপোভূমি' বইটা আমার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান - তপস্যা হয়ে উঠেছিল। বইটা আমাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছে। একটু একটু করে আবার মনের জোর ফিরে পেয়েছি। বইটা পড়তে পড়তে মনের মধ্যে চলার আনন্দ জেগে উঠেছে আর একই সাথে জেগে উঠেছে নর্মদা পরিক্রমার অদম্য ইচ্ছা। আমি আরো একবার মৃত্যুর সাথে চোখে চোখ রেখে উত্তর দিতে পেরেছিলাম নর্মদার মহাবীজ জপ করে। আবারো আমার ছুটে চলা শুরু হল জীবনের পথে। জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে জন্মের সাথে সাথে যা কিছু এসেছে তার মধ্যে মহৎতম, চরমতম এবং অনিবার্য হল মৃত্যু। প্রতিটি নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে জীবন প্রতিবার মৃত্যুর চরম সীমা স্পর্শ করে। যদি শ্বাস ফিরে আসে তবে জীবন হয় অনন্ত শক্তিস্রোতের প্রবাহধারা আর যদি শ্বাস ফিরে না আসে তবে সেটাই শেষ নিঃশ্বাস হয়ে যায়। কখন সে এই শরীরখাঁচায় ফিরবে আর কখন থেমে যাবে কেউ জানেনা। এই চরম সত্যিটা আমি আমার জীবন দিয়ে বুঝেছি। সাতবার আমার এই শরীরে বিভিন্ন ধরনের কাটাছেঁড়া হয়েছে সম্পূর্ণ এনেস্থেসিয়া করে। প্রতিবার অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে মনে হয়েছে বাড়ির সবাইকে একবার ভালো করে দেখে নিই। আর যদি না দেখতে পাই! যদি এই যাওয়া শেষ যাওয়া হয়! বুকের ভেতরটা দুমরে মুচরে গেছে। কি যে হারিয়ে যাচ্ছে জানি না তবে নিস্বঃ হয়ে যাবার একটা অনুভূতি, একটা বিচ্ছেদের ব্যথায় চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে নিজের অজান্তেই। নানাধরনের জটিল অস্ত্রোপচার করে শরীরের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক যন্ত্রপাতি বাদ দিতে হয়েছে আমার শরীর থেকে। ফলে এই আধখানা খাঁচাটাকে নিয়ে চলতে গিয়ে হাজারো যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। ভালো আছি আর ভালো নেই এর ব্যবধান হচ্ছে একটা ছোট্ট মুহূর্ত। কখন নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা তো কখনো চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারছিনা। কখনো পেটে - বুকে - হাতে - পায়ে এমন ক্র্যাম্প হচ্ছে যে চিৎকার করে কাঁদতে হচ্ছে। এইসব হঠাৎ হঠাৎ উপসর্গ যখন দেখা দিচ্ছে তখন মনে হচ্ছে এবার শেষ। তবুও যে আজও বেঁচে আছি এটা আমার কাছে একটা ম্যাজিকের মতো মনে হয়। তখন থেকে খোঁজ খবর চলছে নর্মদা দর্শন করাতে কারা নিয়ে যায়? বছরের কোন সময়ে পরিক্রমা শুরু হয় ইত্যাদি। অবশেষে দু'হাজার উনিশের নভেম্বরে কলকাতার কেশবানন্দজী বনমহারাজের সাথে অমরকন্টকের পথে রওনা দিলাম। শালিমার থেকে পেন্ড্রারোড স্টেশন। সেখান থেকে মহারাজের সঙ্গী একশতধিক যাত্রী নিয়ে দুটো বড় বাস আর দুটো দশসিটারের ছোট গাড়ি যেগুলো আগে থেকেই রিজার্ভ করা ছিল। কিছুদূর গিয়ে মহারাজ আর রাঁধুনিরা মিলে বড়বাজার থেকে বাজার করে গাড়িতে তুলে নিলেন। আমাদের দুদিনের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে গেল। এবার এগিয়ে যাবার পালা। পাহাড়ের গায়ে গায়ে রাস্তা ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। মাঝে মাঝে এলাকার নাম লেখা ছোট বড় হোর্ডিং চোখে পড়ছে। অবাক হয়ে দেখছি পাহাড়ের ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া এই বনভূমি। এই পথ ধরে কত পূণ্যার্থী অমরকন্টকে পৌঁছেছে । লালমাটির এই পথের ধূলায় কত ঋষিমুনির পায়ের ধুলো রয়েছে! ভাবতেই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছি। বাস বেশ স্পিডে চলছে বলে কাছের দৃশ্য মুহূর্তেই বদলে যাচ্ছে কিন্তু দূরের সবুজ গাছগাছালির দৃশ্যপট মনের মধ্যে একটা অজানা আনন্দে ভরে দিচ্ছে। ক্রমশ...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register