Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ২)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ২)

নর্মদার পথে পথে 

কথায় আছে, নর্মদা কা কঙ্কর /হর কঙ্কর মে শঙ্কর। নর্মদায় অবগাহন করলে শিব সান্নিধ্য লাভ হয়। নর্মদা পরিক্রমা করলে সূক্ষ্মরূপে মাহেশ্বর যোগ নামক একটি যোগক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ভূগোলে পড়েছি গঙ্গা ভারতের বিখ্যাত নদী এবং এর উৎপত্তি হয়েছে গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে। উৎপত্তিস্থল থেকে দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত এই নদী হল ভাগীরথী। দেবপ্রয়াগে এসে পঞ্চপ্রয়াগ সৃষ্টিকারী অলকানন্দার সাথে মিলিত হয়েছে। সেই মিলিতধারা গঙ্গা নামে উত্তর ভারতের ওপর দিয়ে বয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। শাস্ত্রমতে শিবের জটা থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে গঙ্গার জল অত্যন্ত পবিত্র এবং দৈবগুণ সম্পন্ন বলে যেকোনো শুভ কাজে গঙ্গার জল ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ গঙ্গা একটা নদী হলেও এর দৈবীসত্ত্বা ও শক্তি রয়েছে। ঠিক তেমনি শিবের কন্ঠ থেকে উৎপন্ন মধ্যভারতের নর্মদা নদীরও দৈবীশক্তি রয়েছে। নর্মদা হল সিদ্ধিদায়িনী ও মোক্ষদায়িনী। প্রাচীন ভারতের অঙ্গিরা, আঙ্গিরস, সাংখ্যদর্শন রচয়িতা মহামুনি কপিল যিনি সগর রাজার বংশ ভস্মীভূত করেছিলেন, ঋষি মার্কন্ডেয়, মহাতেজা দুর্বাসা, দত্তাত্রেয়, মৎস্যেন্দ্রনাথ, গোরক্ষনাথ, পতঞ্জলি, সনক ইত্যাদি মুনিঋষিরা নর্মদার তটে এসেছেন। হিন্দু ধর্ম পুনর্জাগরণের পথিকৃত শঙ্করাচার্যও এখানে তপস্যা করেছেন। এমনকি সর্বজন পূজিত বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীও নর্মদার দৈবীসত্ত্বা প্রতক্ষ্য করেছেন। পৌরাণিক মতে, সমুদ্র মন্থনের বিষ কন্ঠে ধারণ করে শিব হয়েছিলেন নীলকন্ঠ। সেই বিষের তীব্র দহনজ্বালা আত্মস্থ করতে মহাদেব ধ্যানমগ্ন হন। ধ্যানস্থ নীলকন্ঠ শিবের গলা থেকে ঝরে পড়ে স্বেদবিন্দু। এই স্বেদবিন্দুই থেকেই কুমারীকন্যা মোক্ষদায়িনি নর্মদার উৎপত্তি হয়েছে । এই জন্যই নর্মদা শিবের কন্যা এবং শিবশক্তি সম্পন্না। অমরকন্টকের চূড়ায় একাদশ কোণবিশিষ্ট নর্মদার উৎসকুন্ডের পরিধি আনুমানিক চৌদ্দ/ পনেরো মিটার এবং গভীরতা প্রায় আড়াই মিটার । কাঁচের মতো পরিষ্কার জলের তলায় বিরাজমান নর্মদেশ্বর শিব। তাঁরই ডান পায়ের ওপর বিরাজমান কালো কষ্টিপাথরের নর্মদার ছোট মূর্তিটি কৃতাঞ্জলিপুটে অর্থাৎ দুহাত জোর করে নমস্কারের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পিতৃ বন্দনায় রত। এখন যেখানে এই কুন্ডটি আছে অতীতে সেখানে ছিল গভীর বাঁশবন। এই বাঁশবনের মধ্যে মাটির তলা থেকে অফুরন্ত জলের উৎসটি আবিষ্কার করেছিলেন পেশোয়া প্রথম বাজীরাও। পরবর্তীকালে ইন্দোরের মহারাজ এই বিশাল মন্দিরটির সংস্কার করেন। প্রসঙ্গত বলা যায় যে প্রাচীনকাল থেকেই মারাঠা রাজবংশগুলো শিব ভক্ত। মহারাণী অহল্যাবাঈয়ের মহান কীর্তি নর্মদা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে। কাকচক্ষু জলে ভরা এই নর্মদাকুন্ডটির আকৃতিকে শাস্ত্রে বলে "বিশাযন্ত্র" যেটি মহাসিদ্ধির আধার। এই কুন্ড থেকে 'নর্মদা' একটা নালার মতো কিছুদূর বয়ে গিয়ে অন্য একটা কুন্ডে পড়েছে। এর নাম কোটিতীর্থ। এখানেই তীর্থযাত্রীরা স্নান করতে পারেন। পরিক্রমাকারীরা এই কোটিতীর্থের ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং এখানেই পরিক্রমার সমাপ্তি পূজা হয়। অবশ্য নর্মদার যেকোন ঘাট থেকেই পরিক্রমা শুরু এবং শেষ করা যায়। কোটিতীর্থ থেকে বেরিয়ে নর্মদার ধারা আবার মাটির তলা দিয়ে বেশ কিছু দূর বয়ে গেছে। তারপর জালেশ্বর শিব মন্দিরের কাছে প্রকটিত হয়েছে। জালেশ্বর মন্দিরের ভিতরে সব সময়ই মাটির তলা থেকে জল এসে ভিজিয়ে দেয়। এখান থেকেই নর্মদা ভীমগর্জনে পশ্চিমঢাল অনুসরণ করে বয়ে গেছে আরব সাগরের দিকে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register