Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পতে মধুমিতা কর্মকার

maro news
গল্পতে মধুমিতা কর্মকার

দেখা

চৈত্র-বৈশাখ মাস প্রচণ্ড গরম পড়েছে। হালের বলদগুলোও নাকাল হয়ে পড়েছে। মেঠো পথে ধীর পায়ে বলদ দুটো এগিয়ে চলেছে। নফর তাদের পুকুরে জল খাইয়ে, গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করিয়ে নিয়ে তারপর বাড়ির পথ ধরে। কিছু কচি কলা পাতা মুখের সামনে ধরে আয় আয় করে ডেকে বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর পিছন পিছন আসছে দাদা জফর। পাড়ার ফকির চাচা মাঠের কাজ সেরে রোদ মাথায় বাড়ি ফিরছেন। তিনি বেশ রসিক মানুষ। কী জফর নফর তোদের মাঠের কাজ শেষ। হ‍্যাঁ চাচা আজকের মতো শেষ। চাচা এবার একটু মুচকি হেসে বলেন হালের কটা বলদ নিয়ে বাড়ি ফিরছিস নফর? দুটো না তিনটে? নফর তা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসে। তা দেখে জফর একটু রাগত স্বরেই বলে কলাপাতা গুলো মুখের সামনে ধরলেই তো ওরা চলে যায়। আ আ আয় আয় করে ডাকার কী হয়েছে? দে দে কলাপাতাগুলো আমার দে আমি খাওয়াতে খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছি। ফকির চাচা ওদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। এবার নফর জফরের আগে আগেই যায়। তাই দেখে দাদা ভাইকে বলে তুই বলদগুলোর পিছনে পিছনে আয়।দাদা ওরাতো দিব‍্যি চলে আসছে তাহলে আর পিছনে যাবার দরকার আছে কী । জফর নফরের যুক্তি শুনে আর কিছু বলতে পারেনা। নফর এবার একটু মাথাচুলকিয়ে বলে এছাড়া তুমিতো আমাকে আগে যাবার জন‍্য গিরিন ছিগলান দেখাচ্ছ। এই শুনে জফর গরম তেলে জল পড়ার মতো চিরবির করে আরো রেগে গেল। গোটা রাস্তায় জফর আর কোনো কথা বলেনা। এবার দু ভাই বাড়ি ফিরে হাল বলদগুলো গোশালায় রেখে কুয়োতলায় হাত পা ধোয়। নফর হাত পা ধুতে ধুতেই কুয়োতলা থেকেই হাক পারে আম্মিজান আম্মিজান ভাত দ‍্যান খিদেতে পেটে ছুচোয় হাঁচর - পাঁচর করছে। জফর কোন কথা না বলে পা ছড়িয়ে বসল মাটির দাওয়ায়। নফর না বসে সোজা চলে গেল আম্মিজানের রান্নাঘরে পান্তাভাত, কাচালঙ্কা, কাচাপেয়াজের ফরমায়েশি দিতে। তারপর দুঘটি জল নিয়ে জফরের পাশে এসে বসল। মা রোজিনা সিলবারের থালায় দুথালা ভাত দিয়ে গেল দুভাইকে। নফর বাক‍্যব‍্যয় না করে জল ঢেলে নুন তেল লঙ্কা দিয়ে ভাত মেখে গপাগপ খাচ্ছে। খেতে খেতে বলে আজকাল লঙ্কাগুলোও হয়েছে ভেজাল। ঝাল নেই। ভাড়ার ঘরে গেল দু-চারখানা লঙ্কা আনতে। দাদা আমার ভাতের থালাটা দেখিস তো, দু-চার খানা লঙ্কা নিয়ে আসি। তোর লাগবে নাকি দাদা? তবে আরো দুখানা বেশি আনব। জফর কোনো উত্তর দেয়না। লঙ্কা হাতে ফিরে এসে নফরের চোখ কপালে উঠে গেল। ভাঙা ভাঙা গলায় বলছে কীগো দাদা তোমাকে যে বললাম আমার ভাতের থালাটা একটু দেখো। জফর বলছে দেখলাম তো হাঁসদুটো নিমেষের মধ‍্যে তোর ভাতের থালার অর্ধেক ভাত সাবার করে দিল। আর তুমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলে তাড়ালে না? তুই তো আমায় দেখতে বললি তাড়াতে তো বলিসনি।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register