Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

চন্দ্রাণী বসুর গল্প

maro news
চন্দ্রাণী বসুর গল্প

বার - বদল

বাবার চেয়ে বয়সে বছর ষোলোর বড় আমার এক জেঠু আমাদের সাথেই থাকতেন। জন্ম থেকেই তাঁঁকে দেখে আসছি। আমরা তাঁঁকে সবাই মেজো জেঠু বলেই ডাকতাম। যদিও শুনেছি তিনি আমার বাবার আপন দাদা নন। দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কোনো এক দুর্ঘটনার পর তাঁর কিছুটা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছিল ও মাঝে মাঝেই স্মৃতি লোপ পেতো। ছোটো থেকেই আমরা দেখেছি সারাদিন তিনি বাড়িতেই থাকেন। খুব ভালো গানের গলা। মাঝে মাঝেই গান গাইতেন। আর অকৃতদার এই মেজো জেঠুর ছিল পত্র মিতালীর ব্যাপক নেশা। প্রায় শ'খানেক বেশি বন্ধু ছিল তাঁর। সোম থেকে শনি পিওনের অবধারিত গন্তব্য ছিল আমাদের বাড়ির ডাকবাক্স। প্রতিদিন কমপক্ষে খান পাঁচেক চিঠি আসতই। আর রবিবার ছিল জেঠুর উত্তর দেবার দিন। অদ্ভুত ব্যাপার হল সব চিঠির উত্তর ওই রবিবারেই লিখবেন। সারাদিন লিখবেন। খেতে - নাইতেও ভুলচুক হতো সেদিন কিন্তু কখনো এ নিয়মে ভুলচুক নেই। আমরা ছোটরা আড়ালে রবিবারকে মজা করে ডাকতাম উত্তর দিবস। বাবার ছিল বদলির চাকরি তাই বাসা বদল হত, এর চিঠির উত্তর ওকে দেওয়ার মতো ভুলও শুনেছি মাঝে মাঝেই হত, কিন্তু ওই রবিবারের নিয়ম বদল হতো না কখনো।
তো একবার হল কি, এক রবিবারে জেঠুর মুখ ভার। জেঠু সেদিন চিঠি লিখতে বসে নি। আমাদের বাড়িতে এ হেন দৃশ্য কোনো ঘটনা নয় একেবারে দুর্ঘটনার সামিল। সবার কপালে ভাঁজ। মায়ের তো চিন্তার শেষ নেই। জেঠুর কি তবে শরীর অসুস্থ ?
জেঠুর সেদিন  শুধু একটাই প্রশ্ন জনে জনে... আজ কি বার‌ ? ক্যালেন্ডার সহ রবিবার দেখানোর পরেও অবিশ্বাস ! শেষে  দ্বিপ্রাহরিক উপবাসও শুরু হল। কিন্তু কারণ জানা ভারি দুষ্কর !
জানতে গেলেই উত্তর আসে - চার কুড়ি ছুঁতে চললাম, ইয়ার্কি হচ্ছে, আমার সাথে ?
অবশেষে আমার পিতৃদেব অফিস থেকে ফেরার পর তাকে সবিস্তারে জানানো হল। তার কপালেও ভাঁজ পড়ল। এদিকে মেজো জেঠুর একই গোঁ।  বাবা এবার বন্ধ দরজার আড়ালে তদন্তের ভার নিলেন‌। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে অট্টহাস্যে একটি খাম হাতে বের হলেন যেটি আজকের উপবাস থেকে উপসংহার এর কেন্দ্রই বলা যায়। আজ নিয়ম ভঙ্গ করিয়া উত্তর দিবসে এর প্রবেশ ঘটেছে ও তাকে নিয়েই জেঠুর বার-গোলমাল। মাকে মেজো জেঠুকে কিছু খাইয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে সবিস্তারে আমাদের ঘটনার বিবরণ জানালেন‌।
আসলে বাবার বদলির চাকরি ছিল। তো সেইবার  আমার পিতৃদেবের কর্মযোগের কারণে বাসা বদল হয়েছিল দেশের কোনো শহরে নয়। প্রতিবেশী দেশের শহরে, যেখানে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন হল শনিবার এবং রবিবারেও জেঠুর একটি পত্র এসেছিল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register