Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

সিভিলাইজেশন!

নামকরণে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করলাম কারণ বরাবর এই শব্দটি আমাকে অবাক করেছে। এই শব্দটি যেন মানুষের অধঃপতনের একটি সমার্থক শব্দ। যেদিন মানুষ প্রথম আগুন জ্বালানো শিখলো, প্রথমবার নিজ হাতে অক্সিজেন নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশিয়ে দিল বাতাসে। যেদিন প্রথম চাকা আবিস্কার করলো, সেদিন প্রথম গাছ কেটে ফেললো। এরপর থেকে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়লো সিভিলাইজেশন। চাকার দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চললো সিভিলাইজেশন। আজ থেকে কত কাল আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিখে গিয়েছিলেন 'সভ্য ও অসভ্য'। কিন্তু আমরা সেই গল্পের সারমর্ম আর গ্রহণ করিনি। আজও দেখি উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস চলছে। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ পথ রুদ্ধ করে নির্মাণ হচ্ছে ব্যারেজ। অচিরাচরিত তথা সবুজ শক্তি নামে খ্যাত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্মাদনায় ঠিক কতটা ক্ষতি করে চলেছি আমরা? আচ্ছা, এই যে মনুষ্যেতর জীবকূল যে পৃথিবীতে আছে, তারা তো আগুন জ্বালেনি, চাকা গড়ায়নি? তারা টিকে আছে কি করে? সবুজ উদ্ভিদের মতো স্বয়ং সম্পূর্ণ আমরা নই, তবু অহংকার আমাদের ষোল আনা। লজ্জিত হই না নিজেদের জীবশ্রেষ্ঠ বলতে। মানুষ লজ্জা ঢাকতে বস্ত্র পরিধান শিখলো, আধুনিক বস্ত্র নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু অত্যাধুনিক বস্ত্রে আবার লজ্জা ঢাকাই দায়... সিভিলাইজেশনের কি করুণ রেট্রোগ্রেসিভ আচরণ। হয়তো অনেকে ভাবেন, লেখালেখি করছো হে ছোকরা? তোমার লেখায় প্রতিবাদ কই? সমাজের কলুষিত ঘটনাগুলোয় তুমি চুপ কেন? তোমার লেখনীতে তো উঠে আসেনা কারখানা বন্ধ, চাকরিহীনতার কথা? লাঞ্ছিতা নারীর কথা? রাজনৈতিক হিংসার কথা? ধর্মীয় মেরুকরণের কথা? হ্যাঁ উঠে আসে না। আপনারা আছেন তো সসব লেখার জন্য। আমি না হয় সত্যিকারের অবলাদের হয়ে কথা বলি। কারণ ওই নারীবাদী কথা বলতে বলতে পুরুষদের সবেতেই দোষ আর নারীরা ধোওয়া তুলসী পাতা, বা পিছিয়ে পড়া জাতিকে তুলে ধরতে তথাকথিত এগিয়ে থাকাদের কোনঠাসা করে দেওয়া এসব আমার দ্বারা হয় না। তাই আমি প্রকৃতি প্রেমে মজি, পরিবেশের স্বার্থেই গর্জে উঠি। মানুষের সভ্যতার নামে অসভ্যতাকে গালিগালাজ করি, আর নিজে মানুষ বলে লজ্জিত হই। এরপর আছে উন্নত দেশগুলোর যুদ্ধবাজ মূর্তি। কে বলবে এরা উন্নত? যতনা মানুষ মরছে, তারচেয়ে বেশি আহত হচ্ছে মৃত্তিকা কণারা। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে মিসাইলের আঘাতে, তৎ কর্তৃক নিঃসৃত বিষাক্ত ধোঁয়ায় মৃত্যু হচ্ছে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদের। এরা কি উন্মাদ হয়ে গেছে? যে জাত যুদ্ধের কারণ, যে ধর্ম মৃত্যুর কারণ, যে ভাষা মনের সুমনোভাব বোঝাতে অক্ষম, সেই ভাষা যা আন্দোলনের কারণ, কি লাভ সেসব জাত-ধর্ম-ভাষা দিয়ে? এর চেয়ে তো একটা জানোয়ার শ্রেয়, তার না আছে জাত, না ধর্ম, না ভাষা। মানুষ প্রকৃতিকে নিষ্ঠুর বলে। কারণ প্রকৃতিতে খাদ্য-খাদক শৃঙ্খল আছে। আমি জানি আমার কথাকে কাউন্টার করতে বাঘের হরিণ শিকার, হরিণের তৃণ ধ্বংস উদাহরণ হয়ে ফিরবে। কিন্তু এই যে ঘটনা, তা শৃঙ্খলাবদ্ধ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এর প্রয়োজন আছে। মানুষ আজকাল আমিষ, নিরামিষ নিয়ে পড়েছে। মাছ, মাংস, ডিম ভক্ষণে হাজারো অন্যায়। অথচ তারাই বাছুরের খাদ্য গরুর দুধ ডাকাতি করে খায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এর ওপরেও একটি কথা আছে। উনি দুধ খেতেন না একারণেই। কিন্তু আমরা ঈশ্বর খুঁজে ফিরি মন্দির-মসজিদ-গির্জায়, কিন্তু সাক্ষাৎ দেবতার দেখানো পথ অনুসরণ করি না, পাছে আমাদের সখ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হয়। শাক-সবজি থেকে শুরু করে প্রধান খাদ্য ভাত বা রুটি, তাদের উৎসেরও কিন্তু প্রাণ আছে। তাই বলছি বেঁচে থাকতে যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন ততটুকু আমরা খেতেই পারি, তার জন্য জীবহত্যা পাপ নয়। অপ্রয়োজনে জীবহত্যা পাপ। এলাকা দখল নিয়ে বা সঙ্গী নির্বাচনের জন্য প্রাণীদের মধ্যে লড়াই হয় না এমনটা বলছি না, এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে অন্য কোন জীবের প্রাণ যায় না। ওরা এত নিখুঁত কিভাবে? যার সাথে লড়াই, শুধু সেই আক্রান্ত হয়। অথচ আমরা মানুষেরা পৃথিবীর সেরা ব্রেইনের অধিকারী হয়েও নির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানতে ব্যর্থ। আমাদের নিশানায় বিরোধী মানুষ থাকলেও, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্যান্য কোটি কোটি জীব। কিছু মানুষ বলে, মানুষ আছে বলেই সংরক্ষণ করছে অন্য প্রাণীদের। হাস্যকর, চূড়ান্ত হাস্যকর। মানুষ যতদিন ছিল না, ততদিন তাহলে কে সংরক্ষণ করতো? আসলে এ হলো জুতো মেরে গরু দানের মতো বিষয়। কিছু মানুষ মনুষ্য জাতির কৃতকর্মের পাপ স্খলনের ক্ষুদ্র চেষ্টা করে এর মাধ্যমে, আর কিছু নয়। মানুষ যেদিন নিশ্চিহ্ন হবে এ পৃথিবী থেকে, এ পৃথিবীর অন্যান্য সন্তানেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। সভ্যতার করাল গ্রাসে হাঁসফাঁস করছে পৃথিবী। সেই হাঁসফাঁস অবস্থা পৌঁছে গেছে মহাকাশে, চাঁদে ও মঙ্গলে। ভয়েজার যান যতদূর পথ অতিক্রম করেছে, বিষবাষ্পের স্পর্শ রয়েছে ততটা পথেই। কিসের এতো জানার ইচ্ছা তোমার মানুষ? এত জেনে কি করবে? পারবে তুমি একটা নতুন পৃথিবী গড়তে? যে পৃথিবীটা সুন্দর ছিল, তাকেই তো টিকিয়ে রাখতে পারছো না। পড়াশোনা জেনে কি হবে? কেন করছি আমরা পড়াশোনা? টাকা দিয়ে কি হবে? টাকা না থাকলে খেতে পাবো না, কে বলে এসব ফালতু কথা? পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীরা খেতে পায় না? ওদের তো পয়সা নেই, শিক্ষা নেই। বিজ্ঞান এতো উন্নত হলো তবু আমাদের দেহে ক্লোরোফিল তৈরি হলো না। বিজ্ঞান এতো উন্নত হলো তবু অক্সিজেন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না এক মুহূর্তও। উদ্ভিদের থেকে ভালো কিছু নিতে পারলাম না আমরা, নিলাম মাদক দ্রব্য, কি দারুণ না? কারণ আমরা অহংকারী... আমাদের ডিকশনারিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে হাস্যকর শব্দ 'সিভিলাইজেশন'।

সায়ন্তন ধর

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register