Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১৭)

রেকারিং ডেসিমাল

১৭

এ বাড়ির আগের প্রজন্মের চার মেয়ে। সবচেয়ে বড়, দাদু দিদার প্রথম সন্তান দিদি পিসি। সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া রোগা-সোগা চেহারা। বিরাট লম্বা বিনুনি। দুই ছেলে স্বামী ইত্যাদি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। মা বাবার কাছে তাও আসা-যাওয়া চলে অনেক। ছেলেরা মামাবাড়িতে আসে, থাকে ; অনেক সময় পড়াশোনাও করেছে এখানে থেকেই। এখন তারা কাজকর্ম করে দূরে দূরে। স্বামী অবসর নিয়েছেন। তাই স্বামী স্ত্রী দুজনেই চলে আসেন বাপের বাড়িতে। এসে কিছুদিন থেকে তারপর বাড়ি ফেরেন। এ বাড়ির নতুন নাতবৌয়ের ঘরে ঢুকে ত পিসিমার চক্ষু ছানাবড়া। হাউ মাউ করে উঠলেন। একি!! এটা বাড়ি না হোস্টেল ? চারদিকে এত বই, খাতা, কাগজ, আবার দরজার পিছনে পোস্টার সাঁটা ? ছি ছি কি অসভ্য, কে কার গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে, তারমধ্যে ইংরেজিতে হিজিবিজি লেখা!!! ছ্যা ছ্যা। কোন ভদ্রঘরে এইসব চলে ? আর এত বই ছড়ানো কেন খাটে ? হুংকার দিতে দিতেই বড় বউকে ডাকতে চললেন পিসিমা। কিরে বড় বউ, কি শিক্ষা দিচ্ছিস বউকে ? এটা গেরস্ত বাড়ি না কি ভুতের আড্ডা ? নতুন বউ হাসি মুখে এসে বারান্দাতেই প্রণাম সারল। আবার আঁতকে উঠলেন পিসি! একি? বউ মানুষ, নতুন বউ তার ওপরে, এই রকম সেমিজ মার্কা একখানা ম্যাক্সি পড়ে ? বাড়ি কি রসাতলে গেছে ? নতুন বউ বুঝল তার শাশুড়িকেই তার অপরাধের জন্য গলা টিপুনি দিতে রেডি হচ্ছেন ইনি। তাই আরও চওড়া হাসি হেসে বলল আগে দিদার ঘরে এসো না। মা ওখানেই জলখাবার নিয়ে গেছে তো।
দিদার ঘরে ঢুকে চীৎকার শুরু করতে যাচ্ছিলেন মহিলা। তারমধ্যেই দাদু আরো জোর গলায় বলতে শুরু করে দিলেন , এই ত। এসেছিস ? এই দ্যাখ কুমারের বউ। কত চুল দেখেছিস ? তোর চেয়েও বেশি। কেমন পুতুলের মত ছোট্ট বল দেখি ? আমি প্রথম দিনই বলে দিয়েছি, আমার বাড়িতে তোমার কোন বাধ্যবাধক নেই। তুমি এই ছোটদের নিয়ে সব জায়গায় দৌড়ে বেরাবে। এত এত বারান্দা করেছি কেন বল? আমি আর তোর মা এদের ছুটোছুটি দেখেই সারা দিন মজায় থাকি। আবার সবাইকে নিয়ে গান করে, নাচে, খুব আনন্দ হচ্ছে বাড়িতে বুঝলি --- নতুন বউ দেখে শাশুড়ি মা জল খাবারের থালা হাতে চোখ নিচু করে মুচকি হাসেন। তারপর তাড়াতাড়ি বলেন দিদি তুমি এ ঘরেই বস। তোমাদের খাবার ও এখানেই দিই। মায়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে খেয়ে নাও। নতুন বউকে কনুই ধরে টেনে নিয়ে যান শাশুড়ি। চল চা করবি। রান্নাঘরে ঢুকে আগে বড় করে নিঃশ্বাস ফেলেন বড় বউ। বাবা। মস্ত ফাঁড়া কেটেছে। এখুনি ত ধুন্ধুমার লাগাতে। ইনিও চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করতেন আর তুমিও ছাড়তে না। নানা, আমি চেঁচাতাম না। নতুন বউ ঘাড় নাড়ে। এ রকম পেশেন্ট পার্ক সার্কাস এরিয়াতে অনেক আসে। আমরা সামলে অভ্যস্ত। আমি আস্তে আস্তে ইংরেজিতে গালি দিতাম।
চুপ, চুপ। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কুলকুল করে হেসে কাত হয়ে যান বাড়ির বড় পুত্রবধূ।
থাক, আর উপকার করতে হবে না মা। তুই ঘরে যা। চান করে একটা সুন্দর তাঁতের শাড়ি পরিস আজ।
আমি এদের সামলাচ্ছি।
ভালমানুষের মত মাথা নেড়ে ঘরের দিকে হাঁটা লাগায় নতুন বউ। একবার খালি দাদুর ঘরের দিকে কাত হয়ে তাকিয়ে নেয়।
এইসি কি তেইসি। আবার পোস্টার সাঁটা নিয়ে কিছু বললে, এরপর দিদার স্টিলের আলমারির গায়ে ডেনিস দা মেনাস সেঁটে রাখব। দিদার সেন্স অফ হিউমার কে একটু সুড়সুড়ি দিলেই রাজি হয়ে যাবেন। তখন বুঝবে ঠেলা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register