Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৭

maro news
ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৭

দুই পা ফেলিয়া

দুই পা ফেলিয়ার আজকের লেখায়, একজনের গল্প শোনাবো সবাইকে। আমরা যারা বেড়াতে যাই, তাদের প্রত্যেকের সাথে প্রতিটি বেড়ানোর কোনো না কোনো লোকের আলাপ হয়, যারা সেই ট্যুরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ব্যস ঐ পর্যন্ত। ট্যুর শেষ, আলাপ শেষ। কিন্তু বাকি জীবন তাদেরকে মনের মাঝে রেখে কোনো গভীর রাতে স্মৃতির সরণি বেয়ে এক ঝলক তাদের কে মনে করা। এরা যে কেউ হতে পারে। সহযাত্রী, গাড়ি চালক, ট্যুর গাইড, এক ঝলক দেখে কোনো ভালো লাগা কেউ, যে কোনো কেউ। আজ আমার ফিরে দেখা মিকি কে। মিকি, শুধুমাত্র মিকি। তার বেশি কিছু জানি না। হাসিখুশি ফর্সা হিমাচলি যুবক। আমাদের হিমাচল ভ্রমণের সারথি। বয়স ছিল খুব বেশি হলে চব্বিশ। সেটি ১৯৯৬ সাল। পাঠানকোটের বাসিন্দা মিকি ও তার মারুতি ওমনি আমাদের দলের চার জন কে( আমি, বাবা, জেঠু, জেঠি) এক স্বপ্ন সফর করিয়েছিল। ডালহৌসি, খাজিয়ার,চাম্বা, ধর্মশালা, কুলু হয়ে মানালি। আমরা কোনোদিনই হোটেল বুক করে যেতাম না। কম খরচে ভালো হোটেল, ভালো খাবার জায়গা সব মিকি ভাই নিয়ে যেতো। গাড়িতে ওর ভরসায় পার্স রেখে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে ঘুরেছি, এসে সব ঠিকঠাক পেয়েছি। আমার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল, কারণ আমার থেকে একটু বড়ো ওর নিজের একটি ছোটো ভাই ছিলো। দুজন দুজনকেই ভাইয়া ডাকতাম। একদিন গল্পচ্ছলে জানা হয়েছিল ওর জীবনের সংগ্রামের কথা। বারো তেরো বয়সে বাবা চলে যান অ্যাক্সিডেন্টে, তারপর মা আর ছোটো ভাই কে নিয়ে লড়ে চলেছে। প্রথমে হেল্পারি,তারপর নিজে ড্রাইভারি।পাশাপাশি পড়াশোনা ও চালিয়ে যাচ্ছে, বলেছিল মনে আছে পরের বছরের মধ্যে স্কুলে পড়ানো শুরু করবে। বাবা আর জেঠু খুব খুশি হয়েছিলেন, অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন ওকে।
মানালি পৌঁছে, মিকি আমাদের সাথে সফর শেষ করে। যেদিন বিদায় জানিয়েছিল, সেদিন সবার চোখে যে জল ছিলো এটা আজো মনে আছে।
তারপর একে একে চব্বিশ বছর কেটে গেছে। আর কোনোদিন দেখা হয়নি, হয়তো আর কোনোদিন হবেও না। শুধু পরমপুরুষের কাছে প্রার্থনা করি, যেন ভালো থাকে, সুখে থাকে ঐ ভালো মানুষটি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register