Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - নয়

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - নয়

টুকরো হাসি - নয়

রান্নার বই

‘তোমার বাবা মা বোনের সঙ্গে থাকা যায় না। আমরা আলাদা থাকব। ’রুচিরার রোজই এক ঘ্যানর ঘ্যানর। প্রবাল মাকে জানাল। মা বলল, ‘এই দিন দেখার জন্যই তো বড়ো করেছি। আলাদা থাকলে তোর যে খাওয়া জুটবে না। বউমাকে দু’বছরেও রান্নাটা শেখাতে পারলাম না। সবই আমার কপাল।’ প্রবাল রুচিরা কে বলল,‘তুমি তো রান্না জান না। আলাদা থেকে দু’জনে কি না খেয়ে মরব?’ ‘তা কেন? আমার মা তো রান্না জানত না। আমরা হোমডেলিভারির খাবার খেতাম।’ ‘তাতে লাভ কি হল? যে মহিলা হোমডেলিভারির রান্না করত তোমার বাবা ভালো খাবার জন্য তোমাদের ছেড়ে ওই মহিলার সঙ্গে লিভ টুগেদার শুরু করল।’ ‘বাবা তুলে কথা বলবে না। তুমিও তোমার মায়ের মতো কুচুটে, মুচটে ,ঘুচুটে। আমরা আলাদা থাকব। এই আমার শেষ কথা।’ প্রবাল মায়ের চোখের জলকে পাত্তা না দিয়ে আলাদা হল। সেখানে হোম ডেলিভারির টাকা নিতে এসে মহিলা প্রবালের সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছিল। রুচিরা বলল, ‘বহিরাগতর এত কথা কিসের?  টাকা পেয়েছ ভাগো হিয়াসে।’ মহিলা রেগে বলল, ‘লজ্জা করে না? যাকে চা হোমডেলিভারি নিতে হয়, তার এত রোয়াব কিসের? আমি এখানে চা খাবার কিছুই দেব না।’ প্রবাল বলল,‘আমি অফিস চললাম।’ রুচিরা বেরুল। কিছু আনাজ কিনল। দোকানের সবজি রুটি খেয়ে পেটের ভিতরে ঘুট্টু ঘুটুর। এভাবে চললে মারা পড়তে হবে। প্রবালকে ফোনে ধমকাল, ‘খবরদার তুমি ওই হোমডেলিভারিওয়ালির খপ্পরে পড়বে না।’ রুচিরা কি ভেবেছে প্রবাল রুচিরার বাবার মতো ঘর বদল করবে? তাই মেজাজ তিরিক্ষি। কতদিন বাজার করেনি। প্রবাল বাড়িতে খেতে চাইলে কি রুচিরার রুচি জ্ঞান থাকবে? ঝাঁটার মতো হাত তুলে ক্যানেস্তারা পেটানোর গলায় হয়ত বলবে, ‘তুই বাজার করেছিস্‌? যে খেতে চাইছিস্‌। তুই বাজার করেছিস্‌? যে খেতে চাইছিস।’ ডোর বেল বাজাতেই রুচিরার চিৎকার,‘চলে এস।’ ঘরে ঢুকতে গিয়ে একটু হলেই আছাড় খেত। ঘরগুলিতে যেন বন্যা হয়েছে। প্রবাল ভয় পেয়ে বলল, ‘তুমি কোথায়?’ ‘আমি এখানে। ’রান্নাঘর থেকে রুচিরা বলল। জলকেলি করতে করতে প্রবাল রান্নাঘরে গেল। দেখল রুচিরা একটা টুলে দাঁড়িয়ে একহাতে চোখের সামনে বই মেলে ধরেছে।অন্য হাতে কড়াইতে জল ঢালছে। ‘কী করছ?’

‘রান্না। এমন জমাটি খ্যাটন হবে, খেয়ে তোমার মায়ের হাতের রান্না, ফান্না, টান্না ভুলে যাবে। তখন আর ওই হোমডেলিভারিওয়ালির সঙ্গে কুটুস কুটুস কুটুস করবে না।’

‘ঘরগুলি তো জলে ভেসে যাচ্ছে। হায় সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।’ ‘গেলে যাক। আমাকে রান্নাটা, ফান্নাটা, টান্নাটা তো করতে হবে। তুমি খাবে। বইতে লিখেছে যতক্ষণ না সবজি ডোবে ততক্ষণ কড়াতে জল ঢালুন।ঘন্টা দু’য়েক ধরে জল ঢেলেই যাচ্ছি ছ’টুকরো বেগুন কিছুতেই ডুবছে না।’ গলার শিরা ফুলিয়ে খ্যাক্‌ খ্যাক্‌ করে বলল, ‘এই বেগুন, ফেগুন, টেগুনকে আমি জলে ডুবিয়ে তবে ছাড়ব।’ যেন গভীর সমুদ্রে ডুবতে ডুবতে প্রবাল বলল, ‘ওভাবে রান্না হয় না।’ ‘তুমি বইয়ের চেয়ে বেশি জান? এই দেখ এখানে সব লেখা আছে। এটা রান্নার বই।’

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register