Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব - ১)

১| বিন্দু ডট কম

সকালে ফোনটা পাবার পর থেকেই সবসময় কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে শুভব্রতর।অবশ্য এই ধরনের ফোনে সে অভ্যস্ত।গতবছর এই সময়ে ফোনটি এলে সে হয়তো নতুন স্পর্ধা নিয়ে জেগে উঠতে পারতো।কিন্তু সে পরিস্থিতি এই বছর নেই।একটা ঘন অন্ধকার মেঘ অতিমারীর রূপ নিয়ে ক্রমশ গ্রাস করে ফেলছে চারিদিক।প্রথম প্রথম শুভব্রত ভেবেছিল,এই অতিমারী অতিমারী বাতিকটাও স্বল্পসাময়িক।যেমন ঝুপ করে এসেছিল,তেমনই কিছুদিন পরেই চলেও যাবে।অথচ বাস্তবে তা হলো না।বরং সে অন্ধকার কালো মেঘ হয়ে গেল। সেই কৃষ্ণমোহন মেঘে হারিয়ে গেল শুভব্রতর স্বপ্নর ইমারতগুলো।সে হাতড়াতে হাতড়াতে টেবিলের কোণা পেরিয়ে,দালানের আরামকেদারা পেরিয়ে,রাণাঘাটের চূর্ণীর ঘাট পেরিয়ে সোজা আছড়ে পড়ল কলকাতার কৃষকায় রমানাথ মুখার্জি স্ট্রিটে।রাস্তা সপসপে।সামান্য কাদা জমে আছে একপাশে।সেখানে একটা লালতিখড়া প্রজাপতি ধুলো মাখামাখি মরে পড়ে আছে।শুভব্রত জানে এই প্রজাতির প্রজাপতির আনুষ্ঠানিক নাম ইন্ডিয়ান রেড অ্যাডমিরাল।নামটা শুনলেই কেমন বুকের মধ্যে দামামা বেজে ওঠে যুদ্ধের।যেন নাছোড়বান্দা সাহসী এক নির্ভীক সৈনিক।অথচ আদপে কতো অসহায়। শুভব্রত সেই অসহায় সৈনিক সব পেরিয়ে পারিজাতদার দোকানের দিকে এগিয়ে গেল।পারিজাতদার বাড়ি মদনপুরের রেল কলোনিতে।সেখান থেকে রোজ সকালের সাতটা পঁয়ত্রিশের কৃষ্ণনগর লোকাল চেপে সে আসতো রমানাথ মুখার্জির গলিতে।বয়স কতো হবে?পঞ্চাশ পঞ্চান্ন মেরেকেটে।ছোট তক্তপোশের উপরে নীল পলিথিনের ছাদ।তারই নীচে যত্ন করে সাজানো ঢোঁরাইচরিতমানস থেকে ফেনেগান্স ওয়েক।একপাশে যত্ন করে রাখা হলুদ হয়ে আসা অলিন্দ।দুপুরের দিকে নিজের পত্রিকার প্রুফ দেখবার ফাঁকে একদিন তার সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছিল শুভব্রত।সেদিন সে জানতে পারলো পারিজাতদা আর তার একই রোগ।স্বপ্ন দেখার রোগ।পারিজাতদা বিজ্ঞানে স্নাতকতা শেষ করে আর তাই চাকরিই করলো না।কবিতা লিখতো জাপানী হাইকুর ধাঁচে।বিভাব কবিতা।বেশ সমাদর পেত কফিহাউজের টেবিলে।তারপর একদিন জমানো সামান্য টাকা জোগাড় করে পারিজাতদা বের করলো 'অশ্রু' পত্রিকার প্রথম সংখ্যা।'এমন নাম কেন দিলে পারিজাতদা?'শুভব্রত প্রশ্ন করেছিল।উত্তরে পারিজাতদা খানিকটা নিশ্চুপে বিড়ি টেনে চলে।তখন অশ্রু বন্ধ হয়ে গেছে বছর পনেরো।দাদা অর্থ সংস্থান করতে পারেনি ঠিক সময়ে।তাছাড়া বুকে যক্ষ্মা ধরে গেছে ততোদিনে।রোজ সন্ধ্যায় দলাদলা রক্ত ওঠে।পাশেই মেডিকেল কলেজে সরকারি উদ্যোগে নিঃখরচায় চিকিৎসা চলছে।পারিজাতদা তক্তপোষে পুরনো বই সাজিয়ে বসে পড়লো।এইসব বই তার বাবার সংগ্রহ।তিনিও কি তার মতোই পাগল ছিলেন?হয়তো বা।শুভব্রতর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তার দুই চোখে তার পত্রিকার নবতম সংখ্যার জন্ম হচ্ছিল চোখের কোলে।তার দু এক ফর্মা গড়িয়ে গেল তার গাল বেয়ে।দাদা বলল,"শুভ।সত্যি করে বল তো?তুইও তো লিটল ম্যাগাজিন করিস।আমাদের দেশে একটা লিটলম্যাগাজিনের এর চেয়ে ভালো নাম আর কিছু হতে পারে?"শুভব্রত সেদিনও পারিজাতদার চোখে আজকের মতোই একটি লালতিখড়া প্রজাপতির শব শুয়ে থাকতে দেখেছিল। পারিজাতদার দোকান চাদরমুড়ি দেওয়া।ট্রেন বন্ধ।বাস বন্ধ।কীভাবে আসবে লোকটা?কিন্তু তাহলে ওষুধ পাচ্ছে কীভাবে?আদৌ পাচ্ছে তো?চাদরের আড়ালে শুভব্রত দেখতে পেল বরেন গঙ্গোপাধ্যায় উঁকি দিচ্ছেন।গেল দুদিনের ঝড়জলে সবকটা পাতা ভিজে জাব হয়ে গেছে।শুভব্রত এক দমবন্ধ কান্না চেপে নিয়ে সোজা এগোতে থাকে।এইবার সে বাঁদিকে বেঁকে যাবে।সেখানে রাস্তার পাশে একটা ছোট টুল রাখা।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register