Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৪

maro news
ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৪

দুই পা ফেলিয়া

কেদারনাথের পথে

২০০৩ এ কেদারনাথ ভারত সেবাশ্রম সংঘে রাত কাটানোর সময় বেশ মজার কিছু ঘটনা ঘটেছিল, আজ সেই প্রসঙ্গেই এখনকার পোস্ট। এটি উল্লেখ্য যে গোমুখ থেকে নেমে ক্লান্ত থাকায়, আমি একাই ঘোড়ার পিঠে গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথ যাত্রা করি। দলের বাকিরা, আমার বাবা, জেঠু, পিসি ও পিসেমশাই হাঁটতে শুরু করে, আমার পিসতুতো ছোটো বোন, মৌলী,তার বয়স তখন আট বছর, পিঠ্ঠুর পিঠে চড়ে বসে। বলাবাহুল্য এদের সবার আগে আমি পৌঁছে যাবো বলে, আমাকে ভারত সেবাশ্রম সংঘের বুকিং স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়, বলা হয় ঘর নিয়ে, আমি যেন পূজা সেরে রাখি, বাকিরা এসে দর্শন সেরে নেবে। কোলকাতা থেকে আমাদের পারিবারিক পূজা পান্ডা বিজয় ভট্ট মহাশয়ের নামে একটি চিঠি ও নিয়ে গিয়েছিলাম, যাতে উনি আমাকে পূজা দিতে সহায়তা করেন।

সব হলো। ঠিকমতো পৌঁছে গেলাম, খুব ভালো করে পূজা দিলাম, মন ভরে বাবাকে দর্শন করলাম, কিন্তু একা একটা কম বয়সী ছেলেকে পেয়ে, ভারত সেবাশ্রম তৎকালীন অধ্যক্ষ আমাদের দল কে একটি ডর্মিটরিতে ঠেলে দিলেন। পরে বাবারা এসে একটু রাগারাগি করলেও, এক রাতের ব্যাপার, পরের দিন সকালেই আবার নেমে আসবো, তাই আমরা রাতটা ওখানেই থেকে যাবো ঠিক করলাম। মজার ঘটনা ঘটেছিল ওখানেই।

ডর্মিটরিতে আমরা ছাড়াও আরো জনা বিশেক লোক ছিলেন। তারাঁ সবাই রেল কর্মচারী, বিকেলে পৌঁছে, পরেরদিন ভোরবেলা পূজা দিয়ে নেমে যাবেন। এদের যে দলপতি গোছের যিনি ছিলেন, তিনি বেলেঘাটার বাসিন্দা, নাম বললেন তারক। মোটাসোটা ভালো মানুষের মতো চেহারা, কিন্তু গলা? পুরো নবদ্বীপ হালদারের জেরক্স কপি। তায় আবার একটু চন্দ্রবিন্দু র দোষ। আমাদের বললেন, যে এর পর তাঁরা বদ্দিনাথ (বদ্রীনাথ) যাবেন, তারপর বাড়ি। কাল ভোর চাট্টে(চারটে) সময় উঠে, চান করে পূজা দেবেন।

সেদিন বেশ ঠান্ডা ছিলো। টিপটিপ বৃষ্টি, আর হিমেল হাওয়া। সংঘের ক্যান্টিনে গরম গরম খিচুড়ি, আলু ভাজা, বেগুনি ও চাটনি সহযোগে পরম উপাদেয় ডিনার খেয়ে লেপের তলায় ঢুকলাম। পরদিন বিশেষ কাজ নেই, খালি গৌরীকুন্ড নেমে, উষ্ণ প্রস্রবনে স্নান করে, গাড়ি রেডি থাকবে, ত্রিযুগীনারায়ন দর্শন করে উখিমঠে গিয়ে রাত্রি বাস। পূজা দেওয়া হয়ে যাওয়ায়, পরেরদিন আটটা নাগাদ উঠলেও চলবে। গরম লেপের তলায়, একটা লম্বা ঘুম দেবো বলে শুলাম।ক্লান্ত শরীর, ঘুম আসতে দেরী হয়নি।

খানিকটা ঘুমিয়েছি,হঠাৎ করেই একটি চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো। তারক বাবুর গলা- আ্যঁই আ্যঁই, তাঁড়াতাঁড়ি ওঁঠ,চাঁন করঁ,পূজাঁ দিঁতে যাবিনাঁ? চাঁট্টে বাঁজে। চারটে? এতো তাড়াতাড়ি? এতো গভীর ঘুমালাম? কেমন একটা সন্দেহ হলো। আমার ঘড়িতে ইন্ডিগ্লো ছিল, আমি হাতঘড়ি পরেই শুয়ে ছিলাম। বাটন প্রেস করে দেখলাম ১১.৪০ সবে। কেলেঙ্কারি। নিশ্চয়ই উনি কিছু ভুল করেছেন। লেপ থেকে গলা বের করে চ্যাঁচালাম... ও কাকু ঠিক করে ঘড়ি দেখো। সবে ১১.৪০।

অ্যাঁ, কিঁ বলছঁ,হতেঁই পারেঁ নাঁ, বলতে বলতে তারকবাবু ঘড়ির দিকে তাকান, তারপর তার চিৎকার... একিঁইইইইই, আমারঁ ঘড়ি যেঁ বন্ধঁ.. বুঝলেন ব্যাপারটা? ওনার ঘড়ি বিকেল চারটা নাগাদ বন্ধ হয়ে গেছে কোনো কারণে, উনি খেয়াল করেননি। এবার রাতে ঘুম ভাঙা মাত্র উনি ঘড়ি দেখেছেন, আর চারটে দেখে চীৎকার জুড়েছেন।

এদিকে ওনার চীৎকার শুনে, কয়েকজন অলরেডি কলঘরের দিকে পা বাড়িয়ে ছিলেন, তারা তো এসে ওকে এই মারে কি সেই মারে অবস্হা। যাইহোক ওনার কাঁচুমাচু মুখ দেখে সবাই রণে ভঙ্গ দিয়ে লেপের ভিতর ঢোকেন, আমরাও যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ি।

পরেরদিন ওরা ভোরে উঠে পূজা দিয়ে ফেরত আসেন, আমরাও বেলা করে পা বাড়াই গৌরীকুন্ডের উদ্দেশ্যে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register