Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

রম্যরচনায় অঞ্জলি দে নন্দী

maro news
রম্যরচনায় অঞ্জলি দে নন্দী

অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে পারলুম নি

আমি তখন কুমারী অঞ্জলি নন্দী। থাকি, গ্রাম, চৈতন্য বাটী, হুগলী, এখনের পশ্চিমবঙ্গে। আমার বাবা শ্রী দেবী প্রসাদ নন্দীর বাড়ীতে। আমাদের রঘুনাথের দুতলার ঘরে, প্রতি বছর, জন্মাষ্টমীর রাতে, আট কলাই ভাজা দিয়ে, কাঁসার, ঘন্টা, শাঁখ বাজিয়ে, পূজো হয়। ওখানে সিংহাসনে, আজ থেকে তিনশত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত, শালগ্রাম শীলা, পুরোহিত দ্বারা, নিত্য পূজিত হন, আমাদের, নন্দীদের পুজোতে। রঘুনাথের ঘরে, আট কলাই ভাজা পূজো দেওয়ার জন্য সকলেই নতূন মাটির খোলায়, নতূন নারকোল কাঠির গোছা দিয়ে গরম বালির ওপরে ভাজে, পাট কাঠির আগুনের জ্বালে, মাটির উনুনে। ওরা সবাইই গ্রামের, তাই একাজেতে এক্সপার্ট। কিন্তু আমার মা শ্রীমতী সবিতা নন্দী, কোলকাতার, বিরাট ধনী বাবার মেয়ে। আর এখনও ধনী স্বামীর স্ত্রী। কখনোই তাই এ কাজ তাকে করতে হয় নি। এই পূজোর আট কলাই নিজে হাতে ভেজেই পূজো দিতে হয়। এই এতো শত বছর ধরে চলে আসছে......। আমার মা যে কি করবেন? ! ....বাবা তো কোলকাতার বড় বাজার থেকে কাঁচা আট কলাই কিনে এনে মায়ের হাতে দেন, প্রতি বছরই। ........ হ্যাঁ, ......মা......তাঁর স্বামীর বংশের সনাতনী নিয়ম ঠিকই মেনে চলবেন........বনেদী বাড়ীর বধূ যে তিনি! ....... হ্যাঁ, তিনি একটি পিতলের কড়ায় বালি দিয়ে, স্টোভের তাপে, ছান্তা দিয়ে নেড়ে, নেড়ে, কাঁচা আট কলাই ভাজলেন। এরপর চালনা দিয়ে, বালি ছেঁকে নিলেন। সেই আট কলাই ভাজা, উনি তামার থালায় করে, পূজো দিলেন। ....... হল কি? ! .....সব জ্ঞাতিরা মিলে আনসাপ্টে, আমার মাকে অনেক কথা শোনাতে লাগলো। সরাসরি কেউই কিছুই বলছে না। আমার মা নাকি পূর্বপুরুষগনের নিয়ম ভঙ্গ করেছে! ওরা বলছে.....বলছে.....আমার মা কোনোই প্রতিবাদ করছেন না। .....এদিকে পুরোহিত উচ্চৈঃস্বরে মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন। ...... কারোরই সেদিকে মন নেই। সবাই তখন আমার মায়ের নিন্দায় অষ্টমুখ। আমি তখন খুব জোরে জোরে, বলতে লাগলুম, ...... ওঁ নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রাহ্মণ হিতায় চ জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ পাপোহং পাপো কর্মাহং পাপাত্মা পাপো সম্ভবঃ ত্রাহি মাং পুন্ডরীকাক্ষ সর্বপাপ হরো হরি..........
পুরোহিত মশাই তখন মন্ত্র পড়তে পড়তে মৃদু হাসি হেসে আমার দিকে তাকালেন। আর নিন্দুকেরা সবাই একদম চুপ হয়ে গেল। সবাই তখন পুরোহিতের মন্ত্র শুনতে লাগলো। আর আমি তখন চুপ করলুম। আমার মা আমার দিকে চেয়ে রইলেন। আর খুব জোরে জোরে শাঁখ বাজাতে লাগলেন। .......... এবার পূজো সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, পুরোহিত আমার মায়ের পূজো সবার আগে নিজের গামছায় বাঁধলেন। পরে অন্যদের। এবার শ্রী কৃষ্ণের লীলা হল! ...... এক সাধু এসে আমাকে বললেন, " প্রসাদ দিবি মা? ! ......." আমি বললুম, " আমার মাকে বলুন, উনিই দেবেন! " ....... মা আমার কথা শুনে, ওই সাধুকে তাঁর ভাজা আট কলাই প্রসাদ দিলেন। সাধু বললেন, " তুমি তো শ্রী কৃষ্ণ জননী গো মাতা! " ....... আমাকেও মা প্রসাদ দিলেন। আমি এ খুব ভালোবাসি! ..... এরপর আমার বিয়ে হয়ে গেছে, আমি নতূন দিল্লীতে আছি। মা কি করতেন! ? ...... প্রতি বছর এই প্রসাদ খুব যত্ন করে তুলে রেখে দিতেন। আর সময়, সুযোগ মত, আমাকে ওই আট কলাই ভাজা প্রসাদ পাঠিয়ে দিতেন। ......... এখন আমার মা, বাবা আর এজগতে নেই। অথচ সেই সে পূজো আজও চলছে, ঠিক আগের মতোই........আমি কিন্তু আর সেই প্রসাদ পাই না। এখনও জন্মাষ্টমীর রাতে আমি সেই নন্দীদের ভিটেতে মনে মনে পৌঁছে যাই…. হয়তো এই জন্মাষ্টমীর কোনোরাতেই, আমি আর তা ভুলতে, পারবো না….জানিনা…
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register