Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি -তে অর্পিতা ঘোষ

maro news
গল্পেরা জোনাকি -তে অর্পিতা ঘোষ

নতুনের টানে

মিনিরা দুই ভাইবোন, মিনি বড়,ভাই তোতোন ছোট, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ও। মিনির বাবা একটা কারখানায় কাজ করে, কোনোরকমে চলে সংসার, সখ-আল্লাদ মেটেনা সেরকম।
মিনি ক্লাস সেভেনে পড়ে, আর ওর ভাই পড়ে ক্লাস ফোর,মফস্বল শহরের বাংলা মিডিয়াম স্কুলেই পড়াশোনা করে ওরা। ওদের সংসারে পাঁচজন মানুষ, মা বাবা ওরা দু ভাইবোন আর ঠাকুমা।
মিনি ছোট থেকেই দেখে আসছে ওর থেকে ওর ভাইকে বাড়ির বড়রা বেশি ভালোবাসে। বাড়ির সেরা খাবারটা ভাইকে দেয়। ঠাকমা বলে ভাই নাকি বংশধর, মিনি তো যাবে পরের বাড়ির বংশ উজ্জ্বল করতে। বাবা হয়তো চারটে আম এনেছে, মা আম কেটে ওদের খেতে দিল, ওর ভাগে আঁটি। আমের পাশের টুকরোটা কোনো দিন চেয়ে ও পাইনি।
ওর মা বলে– ভাই ছোট তাই আঁটি খেতে পারেনা তুই বড় তাই তোকেই আঁটি খেতে হবে। ভাইয়ের জন্য প্রাইভেট টিউটর কিন্তু মিনির নেই, ওর জন্য টিউটরের পেছনে পয়সা খরচ মানে পয়সা নষ্ট করা,মিনি নিজেই পড়াশোনা করে।
মিনির বাবা সেই সকালে কারখানায় কাজে যায় আর রাতে বাড়ি ফেরে,বাড়িতে এসেই ওদের সাদাকালো টিভি দেখতে বসে, তারপর খেয়ে শুয়ে পরে। ওর লেখাপড়ার ব্যাপারে কেউ খোঁজ নেয়না। স্কুলের দিদিমণিদের সাহায্যে ও নিজের চেষ্টায় মিনি পড়াশোনা করে। প্রত‍্যেক বছর প্রথম দিকেই রেজাল্টে নাম থাকে ওর।
মিনি প্রাইভেট টিউটর ছাড়াই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ভাবে পাশ করলো। বাড়ি থেকে কিছুতেই কলেজে ভর্তি হতে দেবেনা, ও কান্নাকাটি করে কলেজে ভর্তি হলো নিজের টিউশনির পয়সায়। বাড়িতে বললো ওর নিজের পড়ার খরচ টিউশনি করে জোগাড় করবে। এমনিতেই ও মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকেই টিউশনি করে। সেই পয়সা দিয়ে নিজের বইখাতা ও অন্যান্য টুকিটাকি খরচ করে, ওর ভাই তোতনকেও মাঝে সাঝে এটা সেটা কিনে দিতো।
পড়তে পড়তেই মিনি চাকরির জন্য নানা কোম্পানিতে এ্যাপ্লাই করছিল, একদিন একটা মাঝারি কোম্পানি থেকে চাকরির ওফার পেলো। মিনি হাতে আকাশের চাঁদ পেলো,ওর স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূর্ণ হলো।
এদিকে মিনির ভাই তোতন দিন দিন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। মা বাবার প্রশ্রয়ে আরও কাউকে মানেনা,এতো প্রাইভেট টিউটর দিয়েও পড়াশোনাতে মোটামুটি।
এখন মিনির মা বাবা মিনির বিয়ের কথা একদম বলেনা,মিনি মাইনের টাকাটা কিছু হাতে রেখে পুরোটাই মায়ের হাতে তুলে দেয়। মিনির মা এখন খুব খুশি, হাতে টাকা পেয়ে কিছুটা সখ সৌখিনতা মেটাতে পারছে। এতোদিন তো অভাবের সংসারে কিছুই মেটেনি।
তোতন ওর বন্ধুর সাহায্যে দুবাইয়ে কাজে গেল, বাড়ির কারোর বারণ শুনলো না।
কোম্পানিতে মিনির একবছর হয়ে গেছে। ওখানেই নিলয়ের সাথে আলাপ, অন্য সেকশনে কাজ করে, মিনির থেকে উঁচু পোস্টে। প্রথম দিন মিনিকে দেখেই মিনির প্রেমে পরে গেল নিলয়, নম্র সভ‍্য মেয়ে মিনি,দেখতেও মোটামুটি সুন্দর,সব কাজ নিষ্ঠার সাথে করে। এসব দেখে আরও ওকে ভালোবেসে ফেললো নিলয়।
নিলয়ের পরোপকারী মনোভাব ,কথা বলার ধরন,মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে উপকার করা,এসব দেখে মিনিও নিলয়ের প্রেমে পড়ে গেল। কিছুদিন টুকটাক কথা, তারপর পার্কে বসে গল্প। এভাবে কিছুদিন যাবার পরে নিলয়,মিনি দুজনেই ভাবলো এবার নিজেরা সংসার পাতবে।
সেদিন বাড়ি ফিরে রাতে খেতে বসে মিনি মাকে নিলয়ের কথা বললো, বাবার আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, শুয়ে পরেছে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিনি বুঝলো মা খুশি হয়নি।
মা বললো–আমাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে, ঘরে দুজন বয়স্ক মানুষ থাকি,তোতন থাকেনা। তোতন একবছর হয়ে গেল বাইরে কাজে গেছে, প্রথম দিকে ফোন করতো এখন তো আর ফোনও করেনা, আমরা ফোন করলে দু একটা কথা বলে রেখে দেয়, আবার তুইও বিয়ে করে চলে যাবি, আমরা তাহলে কি করে থাকবো? তোর বাবাও আগের মতো কাজ করতে পারে না, শরীরটা দুর্বল। তাই বলছি বিয়ের কথা এখন নাই বা ভাবলি।
মিনি ভাবলো ওর মা বাবা ওর কথা কোনো দিন ভাবেনি, ছোট থেকে এতো বড় পর্যন্ত কোনো রকম সাহায্য করেনি,আগে তো নিজেরাই বিয়ের কথা বলতো ,আর এখন চাকরি পাওয়ার পর পয়সা হাতে পেয়ে আর বিয়েও দিতে চাইছে না।
রাতে শুয়ে মিনি কেঁদে বালিশ ভেজালো,তারপর কখন ঘুমিয়ে গেলো।
পরদিন সকালে স্বাভাবিক ভাবে বাড়ির কাজ সেরে অফিস যাবার সময় মাকে মিনি বললো–তোমাদের কোনও চিন্তা নেই মা,আমি তোমাদের সাথে কখনো ভাইয়ের মতো ব্যবহার করবো না। কিন্তু আমি নিলয়কে বিয়ে করবো। বিয়ের পরেও তো তোমাদের দেখাশোনা করতে পারবো, এখন যেরকম করছি তখনও এরকমই করবো। এতোবছর পরে আমি একটু ভালোবাসা পেয়েছি,তা আমি কোনো মতে হারাতে পারবো না।
মিনির মা তার শান্ত মেয়েটার জেদ দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register