Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৩

maro news
ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন - ৩

দুই পা ফেলিয়া

বদ্রীনাথে ব্রহ্ম কপোল

আজ একটি ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। কিছু কিছু ঘটনা যা জীবনে ঘটে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, এটি সেরকমই একটি ঘটনা। অনেকদিন ধরেই লিখবো ভাবছিলাম, আজ হঠাৎই ইচ্ছা হলো, তাই লিখছি। যারা পড়বেন, যদি কমেন্ট করেন, বা ব্যাখ্যা দেন, আনন্দিত হবো। এটি ভ্রমণের অংশ, তাই এই সিরিজের মধ্যেই দিলাম।
২০০৩ সালে, আমি আমার বাবা, জেঠু , পিসি, পিসেমশাই ও পিসতুতো বোনের সাথে উত্তরখণ্ড বেড়াতে যাই। হরিদ্বার, গঙ্গোত্রী, গোমুখ দেখে, কেদারনাথজীর দর্শন সেরে এসে পৌছোই বদ্রীনাথে। পূজা দেওয়ার পাশাপাশি আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো, বদ্রীনাথ মন্দিরের পাশেই, অলকানন্দার ধারে, একটি জায়গা রয়েছে ব্রহ্মকপোল বলে, ওখানে নাকি আত্মাদের নামে পিণ্ডদান করলে আত্মারা চিরতরে মুক্তি পেয়ে যান। আমার বাবা সেখানে আমার দাদু, ঠাকুমা আর আমার মায়ের পিণ্ডদান করেন। কাজ শেষ করে ভারত সেবাশ্রমের অতিথি শালায় ফিরে বাবা আমাকে একটি অদ্ভুত কথা বলেন.. বাবান, আজ খুব শান্তি লাগছে। তোর কাছে একটাই আবদার করবো, বাবা হিসেবে আর কিছু আমার লাগবে না, আমাকে তুই বুড়ো বয়সে দেখবি, কি খেতে দিবি আমার সেই নিয়ে কোনো প্রত্যাশা ও নেই, খালি আমি চলে গেলে একবার এসে ব্রহ্মকপোলে আমার নামে পিন্ড দিয়ে যাস। আমি মনে করবো, ছেলে হিসেবে তুই তোর কর্তব্য পালন করেছিস। আমি হেসে বলেছিলাম, ভুলভাল কথা বাদ দাও, আবার কবে এখানে আসবে বলো.. একবারে মন ভরেনি, আবার আসবো। বাবা কি ভেবে বলেছিল... আমার হয়তো আর আসা হবে না।
সত্যিই তাই হয়েছিল। ২০০৬ সালে, ম্যাসিভ স্ট্রোকে বাবা চলে যান। রোজগার করে যে বাবা মাকে কিছু দেবো, তাদেরকে কিছু খাওয়াবো, এই সুযোগ একমাত্র ছেলে হিসেবে এই জীবনে আমি পাইনি। তবে ঠিক করেছিলাম, বাবা যা চেয়েছিল আমার কাছে, সেটি আমি করবো...
২০১০ সালে ঐ ইচ্ছাপূরণের জন্য আমি আবার বদ্রীনাথ যাই। বাবা যে পাঞ্জাবি পরে আগেরবার কাজ করেছিলেন, সেটি পরেই ব্রহ্মকপোলে বাবার কাজ সারি, ভেতর ভেতর কষ্ট পেলেও মনে একরাশ আনন্দ নিয়ে ভারত সেবাশ্রমের ঘরে ফিরি.. যাক বাবার কথা তো রাখতে পেরেছি।
ঘটনাটি হয় ঠিক এর পরেই।
কাজ শেষ, বাড়িতে জানানোও হয়ে গেছে, খাবার খেতে যেতেও প্রায় দু ঘন্টা মতো দেরী তখন। যে জামাকাপড় পরা ছিলো, তা থেকে খালি বড়ো জ্যাকেট টি ছেড়ে লেপের তলায় ঢুকেছি, মনে হলো আমি আর নিজের মধ্যে নেই। চোখের সামনে পরিস্কার সব কিছু, কিন্তু হাত পা নাড়ানোর ক্ষমতা নেই। শরীরটাই যেন নিজের নয়। ঘরের দরজা খোলা হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন ঢুকলো, আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিন্তু সেটা কে, কেন এসেছে, বুঝতে পারলাম না। তার মুখটা কেমন ঝাপসা হয়ে গেল। কি করছি, কেন করছি, তাও আমার বোঝার বাইরে। এরকম বেশ খানিকক্ষণ হলো। ঘুমিয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখিনি, এটা স্পষ্ট মনে আছে, আর আধ ঘন্টা পরে আমার যে রূমমেট ছিলো, সে ঘরে ঢুকে দেখেছিল যে আমি চোখ খোলা, হাঁ করে বসে আমি। তার ধাক্কা খেয়েই আমি সম্বিত ফিরে পাই, কিন্তু কি যে হয়েছিল তা আজও আমার বোধগম্য হয় নি।
ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দশ বছর কেটে গেছে। ঐরকম অনুভূতি আর কোনোদিন ও হয়নি আজ অবধি। কয়েকজনকে বলেছিলাম, আজ সবার সাথে শেয়ার করলাম। আমার নিজের বদ্ধমূল ধারনা, মুক্তি পাওয়ার আগে, বাবা হয়তো ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে এসেছিলেন। আপনাদের কি মনে হয়?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register