Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

নিবন্ধে সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

maro news
নিবন্ধে সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

মুক্তি

ভোরের আজানটি শুরু হলে সাধারণতঃ ছেনি হাতুড়ির বিশ্রাম। সারারাত কাজ করে ক্লান্ত বৃদ্ধ চোখ জলের ঝাপটা চায়।রাত জেগে কাজ করাটা তাঁর বহুদিনের অভ্যেস। চারিদিক শান্ত নিস্তব্ধ হলে তবেই তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গঠনে মনোযোগ দিতে পারেন,তাঁর ছেনি হাতুড়ির আঘাতে একে একে খসে পড়ে প্রস্তরখন্ডের অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অংশগুলি, মূর্ত হয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এমনই কোমল এমনই পেলব সেই ভঙ্গিমা যে অবাক লাগে এই কোমলতাও ছিলো ঐ পাথরের টুকরোতে। পাথর বাছাইয়ের কাজটিই আসল, চিনতে হয় জানতে হয় কোন পাথরে কমনীয়তা কতোখানি। হাতুড়ির ঘায়ে ফাটল না ধরে যেন তাঁর সৃষ্ট অর্ধসমাপ্ত অঙ্গটিতে, তাহলেই সব শেষ। এই কাজটি তাঁকে হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন স্বয়ং মণি আয়েঙ্গার। তিনিই জীবন্ত ঈশ্বর এখনও সমস্ত ভাস্করদের কাছে, দেশের বিভিন্ন মন্দিরে আয়েঙ্গারের হাতে সৃষ্ট মূর্তি আজও পূজিত হয়, এমন কী বিদেশের জাদুঘর গুলোর সংগ্রহেও অজস্র মূর্তি আয়েঙ্গারের স্বহস্তে বানানো। আয়েঙ্গারের প্রত্যক্ষ শিষ্যদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এখনও সৃজনে সক্ষম আছেন। অন্য সকলেই হয় অসুস্থ অথবা লোকান্তরিত। এই কলা ক্রমশই অবলুপ্ত হতে চলেছে। গুপ্তযুগের দেবমূর্তি আজকাল আর কেউ বানাতে চায় না।সমস্ত আধুনিক ভাস্কররা এখন আধুনিক বিমূর্ত শিল্পের দিকে ঝুঁকেছে। তবু তাঁর মতো কয়েকজন এখনও এমন মূর্তি তৈরি করেন, কঠোর সংযম আর নিষ্ঠার সঙ্গে। চোখে মুখে জল দিয়ে ওজু করে নেন সাবির আহমেদ। নামাজটি সেরে তিনি চারটি খেজুর খাবেন। রামাদান মাস শুরু হয়েছে, এখন সারাদিন তাঁর রোজা এবং বিশ্রাম। সন্ধ্যায় ইফতারের পর আবার হাতে তুলে নেবেন তাঁর ছেনি হাতুড়ি।আর অল্পই কাজ বাকি আছে এরপর পালিশ।যতক্ষণ না কর্কশ পাথরের গা থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে তাঁর তৃপ্তি নেই।বিরাশী বছরের স্রষ্টার দিকে তাকিয়ে মৃদু মৃদু হাসছেন ঐ খানে বসে স্বয়ং মহাকালেশ্বর, বাম জানুতে উপবিষ্টা অর্ধাঙ্গিণী অদ্রিজা। আজকালের মধ্যেই এইটুকু শেষ করতে হবে ,নইলে কে বলতে পারে কখন ডাক চলে আসে। বেহেস্ত নসিব হলেও তিনি অসমাপ্ত কাজ ফেলে রেখে গিয়ে শান্তি পাবেন না যে! গুরুর কাছেও ঋণ থেকে যাবে, অনাথ এক মৃত্যু পথযাত্রী মুসলিম বালককে পথ থেকে তুলে এনে আয়েঙ্গার পরিবারে আশ্রয় দিয়ে তাকে পারিবারিক ভাস্কর্য কলার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে যাওয়া, সাবিরের ওপর কম ঋণ নেই কিছু। এর শোধ করে তবেই তাঁর মুক্তি...তবেই!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register