Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ১১)

রেকারিং ডেসিমাল

১১ টেকো নিটোল গোল মাথা। গোল ফ্রেমের চশমা। এবং কোঁচকানো ভুরু। রমেশদা বললেই এ গলির সবার মনের ভেতর এই ছবিটা নিঁখুত ভাবে ফুটে ওঠে । সারা বছর সাদা পাঞ্জাবী আর ধুতি থাকে পরনে। শীতের শুরুতে হাতকাটা সোয়েটার । বেশি শীতে ওই পাঞ্জাবীর ওপরেই পুলোভার চড়ে। আরো বেশি ঠাণ্ডায় কানে মাফলারের ফেট্টি। কিন্তু ভ্রুকুটির কোন হেরফের নেই।
বিয়ের পরেই এহেন রমেশদার মহিমা টের পেয়েছিলেন নতুন বউ। বিয়ের সব নতুন শাড়ির ব্লাউজ রমেশদাই বানিয়েছিলেন কি না। বাড়ির সামনের মুখোমুখি কোনার একতলাতেই রমেশদার দোকান। একেবারে দুলনের ইস্তিরি ঠেলার এক হাতের মধ্যে। সেখানেই প্রথম শাশুড়িমা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন চিনিয়ে দিতে।
-রমেশদা, এই যে, আমার বউমা। ওর ব্লাউজগুলো, আপনার কাছে স্যাম্পল দিয়ে পাঠিয়েছি। -অ। এই বুঝি নতুন বউ।
হাতের কাজ থেকে চোখ তোলেন মসৃণ মাথাওয়ালা ছোটখাটো লোকটি। কিন্তু ভুরু কুঁচকেই থাকে ।
ব্লাউজ দু দিন দেরি হবে। বিয়ের তারিখ চলছে। আমি ত একটাই মানুষ। নতুন বউ ভয়ে ভয়ে ঢোক গেলে।
বাবা। কি কড়া মেজাজ। ছোট্ট নাকখানা উপরে ওঠে চশমা শুদ্ধু।
চিন্তা নেই। দু দিন পরে এস। পেয়ে যাবে।
আচ্ছা বলে ঘাড় কাত করে, বাড়ি ফিরে আসে নতুন বউমা। দু জনে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই ছোট ননদের প্রশ্ন, কোথায় গেছিলে জেঠির সঙ্গে ? শাশুড়ি, রমেশদা, বলতেই বাকিদের বারান্দায় উঁকি আর খ্যাকখ্যাক হাসি। হে হে, দেখলে বউমণি ? ওরে বাবা। হল আলাপ? হে হে। দি গ্রেট রমেশদা হুঁ হুঁ বাবা। যে সে লোক না। কোন দিন কেউ হাসতে দেখেনি। এই দেখেছে কেউ? মাআ আ.. তুমি কোন দিন দেখেছো?
রান্নাঘর থেকে কাকির গলা পাওয়া যায়।
কি বলছিস? কি দেখব? আরে, হাসতে । দেখেছ কখনো? রমেশদাকে হাসতে ? হে হে হে… এদিকে ওদিকে হেসে গড়িয়ে যায় ছোটরা।
জানো বউমণি, দাদারা বলে রমেশদা কোন দিন হেসে ফেললে নাকি পৃথিবীতে অঘটন ঘটে যাবে। ভুমিকম্প টম্প কিছু। নির্ঘাৎ।
এবার ছোকরারা ফিল্ডে নামেন।
অথচ কি কপাল লোকটার রে। ছেলেরা সবাই হিংসে করে টেকো বুড়োকে। উফ। কি কপাল। পাশাপাশি তিন গলির যত মহিলার হৃদয়ের মাপ ওই লোকটার হাতে!! ভাবা যায় ?
সেই থেকে মায়ের নতুন শ্বশুর স্থানীয়দের লিস্টে রমেশদাও যোগ হলেন। আর তারপর থেকে জামা আর কেউ বানাতেই পারে না। মা অবশ্য মাপ দিতে নারাজ। বিয়ের সময় মায়ের বানানো জামা একখানা নিয়ে হত্যা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন কাউন্টার ধরে। লাইন থাকত দোকানে বেশির ভাগ সময়ই। ওর মধ্যেই সময় আসলে, মা বুঝিয়ে বলে আসতেন। রমেশদা, লম্বা হাতা কিন্তু। লিখে রাখুন, ভুলে যাবেন না। আর একটু তাড়াতাড়ি প্লিজ।
হ্যাঁ হ্যাঁ, লিখেছি। সবাই ত তাড়াতাড়ি। কেউ কি বল, আচ্ছা আমারটা দেরিতে? যাও যাও। দেব খন।
তারপর মেয়ের ফ্রকের ও অর্ডার নিয়েছেন রমেশদা। ছেলের ছোট্ট শার্ট ও। মা এদের নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে এলেও জামার কাপড় ঠিক পৌঁছে গেছে রমেশদার কাছে। মেয়েও গিয়ে আধো গলায় কাঁচের কাউন্টারে চড়ে বসে ডাক দিতো, রমেশদা।
খুব দূরের মানুষ বলে ধরা যায়নি এদের কখনোই।

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register