Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি -তে পারমিতা চ্যাটার্জী

maro news
গল্পেরা জোনাকি -তে পারমিতা চ্যাটার্জী

ধর্ষিতার বাবা মা

অনুপম বাবু তার দক্ষিণের বারান্দায় বসে আছেন আনমনে -- সামনে খোলা কাগজ-- দৃষ্টি যেন অনেকদূরে প্রসারিত -- গভীর ভাবনায় মগ্ন--। বারান্দায় গ্রিল বেয়ে উঠে গেছে পাতাবাহার -- এটা কোয়েল লাগিয়েছিল-- বড় গাছ ভালোবাসত মেয়েটা -- কতরকম যে ফুলগাছ এনে লাগাত তার ঠিক নেই -- একদিন ওর মা বলেছিল যে মেয়ে তো লাগিয়ে খালাস -- যত্নের বেলায় মা করবে--। আদর্শবাদী প্রফেসর ছিলেন তিনি-- এখন অবসর গ্রহণ করেছেন--। জীবনের চরম পরিস্থিতিতেও সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা রেখে চলেছেন -- কখনও কোন অবস্থাতেই সত্যের পথ থেকে সরে আসেন নি -- মেয়েকে ও সেই আদর্শে বড়ো করে তুলেছিলেন -- এখন মনে হয় ভুল করেছিলেন -- যেখানে সর্বত্র মিথ্যা আর স্বার্থের হানাহানি -- সেখানে একা একজন সত্যকে আঁকড়ে থেকে কতটুকু প্রতিকার করতে পারবে--? হয়তো তাঁর শেখানো এই আদর্শের পথে চলতে গিয়ে মেয়েটা অসময়ে নারীত্বের লজ্জা সম্মান হারিয়ে প্রাণ দিল---। কি করতে পেরেছিলেন তিনি? কয়েকদিন কাগজে খুব লেখালেখি হল--" বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামে এক যুবতী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে -- পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পাশের ডোবা থেকে--। তিনি তো এর বিচার চেয়েছিলেন? পেয়েছেন কি? তার কোয়েল তো চলেই গেল-- কিন্তু আরও অনেক কোয়েল তো আছে -- তাদের তো রক্ষা করতে হবে--। কেউ কেউ মন্তব্য করেছিল -- মেয়ে হয়ে কি দরকার ছিল সাংবাদিকতা করার --? অসময়ে প্রাণটা তো গেল -- সেই সাথে সম্মানটাও গেল-- বাবা মায়ের মুখে চুনকালি পড়লো -- এ কথা বলেছিলেন তাঁরই নিজের বড়ো দিদি--। তিনি প্রতিবাদ করে বলেছিলেন চুনকালি? কিসের চুনকালি? যে সমাজ এখনও মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারেনা সেই সমাজের মুখে চুনকালি -- আমার নয়-- আমি নিজেকে এক গর্বিত পিতা বলে অহংকার করি -- আমার মেয়ে সত্যকে উদঘাটন করতে গিয়ে কিছু নর পিশাচের হাতে বলি হয়েছে --। স্ত্রী জয়া এলো চায়ের কাপ নিয়ে -- -- কি কি ভাবছ কাগজ খুলে-- অনুপম বাবু হতাশ চোখে চেয়ে বললেন -- আজ আবার একটি ধর্ষণ -- একটি নার্স ফিরছিল সারাদিনের ডিউটি সেরে বাড়িতে -- বাইপাস ছাড়িয়ে একটু নির্জন জায়গায় তার বাড়ি-- একটু রাত হয়ে গিয়েছিল - নার্সের ডিউটি তো ইমার্জেন্সি থাকলে অনেকসময় রাত হয়ে যায়-- অটো পায়নি বেচারা মেয়েটা- ব্যাস কয়েকজন হিংস্র পশু একটি অসহায় মেয়ের প্রতি তাদের পৌরুষ দেখালো -- আর একটি কোয়েল চলে গেল সেই একই নির্মমতায়-- আরও কত কোয়েল এভাবে চলে যাবে বলতে পারো? ওদের সংসার চলত মেয়েটির রোজগারে--? কে লড়বে ওদের হয়ে? আমি তবু নিজের যতটুকু ছিল তাই দিয়ে চেষ্টা করে গেছি-- হুমকিও কম আসেনি তারজন্য -- তবু লড়েছিলাম যাতে আমার কোয়েল মায়ের মতো যেন আর কোন বাবা মায়ের কোল খালি হয়ে যায়। যেন একটা সঠিক বিচার হয়-- শেষ পর্যন্ত পেয়েও ছিলাম -- ওদের চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল -- কিন্তু কি হল? সেই তো একই অবস্থা চলছে-- -- পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে -- কয়েকদিন বাদে হয়তো টাকার জোরে বাবা কাকারা ছাড়িয়ে আনবে-- আর কোর্ট বলবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হল--। এরাই সমাজের বুকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর এক একটি মেয়ের সর্বনাশ করে যাবে-- আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই আঙুল দেখিয়ে বলবে এর মেয়েটা ধর্ষিত হয়েছিল-- আমাদের পরিচয় কি? না ধর্ষিতার পিতা মাতা--।।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register