Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নীলম সামন্ত (পর্ব - ১৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নীলম সামন্ত (পর্ব - ১৪)

মহাভারতের মহা-নির্মাণ দুর্যোধন ভার্যা ভানুমতী

ঐতিহ্যমন্ডিত অসাধারণ বুনটে সেজে ওঠা মহাভারতের ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে আছে নানান ঘটনা। শুধু ঘটনা বললে ভুল বলা হয়, রয়েছে সমাজের কথা, জীবনের কথা, মানুষ মনুষ্যত্ব সহ আমাদের ষড়রিপু, তৎকালীন জীবনযাত্রার খুটিনাটি৷ এই দীর্ঘ রচনাটিকে সুন্দর করে উপস্থাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার কোনটিতেই কবি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন কার্পণ্য করেননি৷ তবে মহাকাব্য হেতু মহাভারতে জটিলতার অভাব নেই৷ হস্তিনাপুর রাজসিংহাসনের বংশবৃক্ষ দেখলে খানিকটা মাথা ঘোরার উপক্রম হলেও প্রতিটি চরিত্রের যথা সময়ে যথাযথ ব্যবহার দেখা যায়৷ আমি বলব না প্রত্যেকেই মুখ্য বা গৌন। যার যেখানে যেভাবে আসার প্রয়োজন সেই স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়েই প্রতিটি চরিত্র নিজ নিজ সাজে সেজে উঠেছিল। মহাভারতের চরিত্রের কথা বললে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে পিতামহ ভীষ্ণ, ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু, পঞ্চপাণ্ডব, দুর্যোধন, দুঃশাসন, কৃষ্ণ, কর্ণ ইত্যাদির কথা; যারা প্রত্যেকেই পুরুষ চরিত্র। কিন্তু নারী চরিত্রের কথা এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে গান্ধারী, কুন্তি, দ্রৌপদী। এছাড়াও স্বল্পবিস্তর আলোচনায় কখনো কখনো উঠে আসে সুভদ্রা, দুঃশলা কিংবা হিড়িম্বার নাম। ভানুমতী? আসে কি? এলেও ক'জনেই বা জানেন তার কথা? কুরু রাজবংশের রাজা ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে গান্ধারী গর্ভধারণ করেন, ঘটনাচক্রে তিনি তাঁর গর্ভপাত করান এবং জন্ম দেন একটি মাংসপিণ্ড। যা ব্যাসদেবের নির্দেশে একশটি খন্ড করে একশ'টি ঘৃত কলসে রাখা হয় এবং জন্ম নেয় একশত পুত্র। এই একশত পুত্র-সন্তানদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন দুর্যোধন। মহাভারতের যুদ্ধ অর্থাৎ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দুর্যোধনই ছিল কৌরবদের নেতা। বাল্যকাল থেকেই দুর্যোধন নিয়ামক, প্রভুত্বশালী, আদেশদাতা হিসেবে প্রসিদ্ধ। তার আত্মম্ভরিতার ফলস্বরূপ কোথাও হেরে যাওয়াকে মেনে নিতে পারতো না। ভানুমতী আর কেউ না এই কৌরব শ্রেষ্ঠ দুর্যোধনের একমাত্র স্ত্রী। যিনি ময়ূরী নামেও পরিচিত। তবে কৃষ্ণদ্বৈপায়নের মহাভারতে দুর্যোধনের স্ত্রীয়ের নাম উল্লেখ ছিল না। পরবর্তী সংস্করনে ভানুমতী হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে৷ চরিত্রটির খুব বেশি স্থানও দেখতে পাওয়া যায় না। মাত্র তিনটি পর্ব ছাড়া। তাও খুবই সামান্য- শল্য পর্বে , দুর্যোধন তার পুত্র লক্ষ্মণ কুমারের মায়ের ভাগ্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন । স্ত্রী পর্বে গান্ধারী তার পুত্রবধূর কথা উল্লেখ করেছেন। শান্তি পর্বে , ঋষি নারদ দুর্যোধন এবং কর্ণের বন্ধুত্ব সম্পর্কে একটি গল্প বর্ণনা করেছেন । কালি(দৈত্য)-এর একজন অবতার ভানুমতী মহাভারতে তার জীবন শুরু করেছিলেন কামরূপরাজা ভাগদত্ত কন্যা হিসেবে৷ বর্ণনায় পাওয়া যায় তৎকালীন ভারতবর্ষে দ্রৌপদীর পর সব থেকে বেশি রূপসী এবং গুণী নারী ছিল ভানুমতী। রাজকুমারী বিবাহযোগ্যা হলে রাজা ভাগদত্ত আয়োজন করেন বিশাল স্বয়ংবর সভার৷ সমস্ত বীর ক্ষত্রিয় রাজারা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন৷ গল্পটি মহাভারতের শান্তি পর্বে দুর্যোধনের বিয়ের বর্ণনায় পাওয়া যায়। নারদ, দেবতা ঋষি দ্বারা বর্ণিত। প্রাগজ্যোতিষপুর নগরে সেদিন শিশুপাল , জরাসন্ধ , ভীষ্মক, বক্র, কপোতরোমন, নীলা, রুক্মীর মতো অনেক কিংবদন্তি শাসক, শ্রিংগা, অশোক, সাতধনওয়ান প্রভৃতি আমন্ত্রিত ও উপস্থিত ছিলেন৷ দুর্যোধন ছিলেন তাঁর বন্ধু কর্ণের সাথে৷ অস্ত্র সমেত নানান বিদ্যায় এইসব রাজনরা পারদর্শী। সুসজ্জিত সভা আলো করে তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন । কখন সেই ভুবনমোহিনী রাজকন্যার দেখা পাওয়া যাবে। শুধু দেখা পাওয়া গেলেই তো হবে না, কার গলায় মানে কোন ভাগ্যবান রাজপুরুষের গলায় শোভা বর্ধন করবে সেই রত্নহার অর্থাৎ বরমালা। কেননা, স্বয়ম্বরের নিয়মই হল রাজকন্যা নিজের ইচ্ছায় যাকে খুশি নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করবেন। . . চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register