Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গ এ গদ্যে আকাশ কর্মকার

maro news
গ এ গদ্যে আকাশ কর্মকার

সিঁদুরখেলা

পাড়ার মন্ডপে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, একটু পরেই আমাদের সিঁদুর খেলা শুরু হবে, আপনারা যারা যারা অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সত্বর মন্ডপে চলে আসুন। কথাটা শোনা মাত্রই মনটা নাড়া দিয়ে উঠল, চোখ গেল দেওয়ালে, ছবিটাতে যদি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা যেত!
গতবছর দশমীর সকালে পাড়ার সব বৌদি-কাকীমা-জেঠিমাদের সাথেই একসাথে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন তানিষ্কা সালভে। অবাঙালী হলেও কলকাতায় থাকতে থাকতে বাঙালীদের কালচারে যেনো একেবারে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন, সে দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে দোল-পয়লা বৈশাখ সবেতেই নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পেতেন বারেবারে। গতবছরও তার ব্যতিক্রম হয় নি একবিন্দু। যখন সমগ্র পাড়া ভেঙে পড়েছে মন্ডপে, সবাই যখন বরণ করে নিচ্ছেন তাদের প্রিয় দুর্গা মাকে ঠিক তখনই টেলিফোনটা বেজে উঠল। তানিষ্কার শ্বশুরমশাই ফোনটা ধরতেই ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো বিসর্জনের খবর, এ এমন এক বিসর্জন যার আগামী বছর আর বোধন লেখা ছিল না। পলকের মধ্যেই সমস্ত পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ল খবরটা, নিস্তব্ধতা গ্রাস করল বয়ে চলা আনন্দধারাকে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামল, নিম্নচাপের অঝোর বর্ষণে ধুয়ে যেতে লাগল লাল–সিঁদুরের লাল। সিঁদুরের লাল রঙকে মুছে দিতে যথেষ্ট ছিল একটা কালো বুলেট, শরীর থেকে ঝরে পড়া লাল রক্ত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৭৬ আর্মড রেজিমেন্টের ল্যান্সনাইক অভিজিৎ সালভের দেহ এসে পৌঁছালো বাড়িতে দ্বাদশীর সন্ধ্যায়, কথামতো সে বাড়ি ফিরেছে দীপাবলির আগেই, হ্যাঁ অনেকটা আগেই। তানিষ্কার বিগত দুদিন ধরেই সংজ্ঞাহীন অবস্থা, একবার জ্ঞান ফিরছে আবার হারাচ্ছে। ধীরেধীরে যখন তাকে আনা হল কফিনের কাছে তার চোখে আর একটুও জল নেই, শুকিয়ে যাওয়া রক্তের সাথেই শুকিয়ে গেছে অশ্রুও। রাত গভীর হল, গান স্যালুটে শেষ বিদায়। যে যার বাড়ি ফিরে গেল, যে যার কাজে যোগদান করল, স্বাভাবিক নিয়মেই সন্ধ্যা ঘনাল, নতুন ভোর হল, একটা মানুষ সব সম্পর্কের তার ছিন্ন করে যাত্রা করেছে বৈকুন্ঠের পথে...রেখে গেছে ডালিভর্তি স্মৃতি।
আজ আরেকটা দশমী, আজ আবার মন্ডপে সিঁদুরখেলার ডাক, আজ আবার আকাশ লাল হবে সিঁদুরের আভায়; তানিষ্কা ছবিটার সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই যখন আবার মেতে উঠেছে বিদায়বেলায়, সিঁদুরখেলায়; তানিষ্কা তখন তার ফিক্সড ডিপোজিটে জমানো স্মৃতিদের ভেলায় ভেসে চলেছে। গোলাপ-সিঁদুর-রক্ত সবই লাল, সবই ভালোবাসার প্রতীক, কখন কিভাবে কোথায় কোন প্রতীকে ভালোবাসা ধরা দেবে আমরা তো জানি না। চাইলেও আমাদের আগলে রাখার কোনো অলৌকিক ক্ষমতা কই? মায়ের বিসর্জনের পরে সবাই কত তারস্বরে বলে, আসছে বছর আবার হবে। তাতে একটা বিশ্বাস থাকে, ভরসা থাকে। অভিজিৎও তো বলেছিল, সে আবার আসবে। কথা তো রেখেছে, ভালোবাসলে কথা রাখতে হয়। সিঁদুরটা আজ আর সিঁথিতে নেই ঠিকই, কিন্তু অভিজিৎ–বুকের ভেতর, মনের ভেতর চিরস্থায়ী...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register