Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ১৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ১৬)

গোপনে গড়েছে কত স্বপ্নিল সাঁকো

উইলসন ইশকুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী। ছুটি ও পিয়া নাচে অংশ নিয়েছে। একেবারে সকালের দিকেই অনুষ্ঠান। এরপর সে দিদিদের সাথে ব্রজমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে যাবে। ওখানেও রবীন্দ্রজয়ন্তী দেখবে। ইশকুলে সে এখনও পড়তে যায় নি। পড়াশোনা চলছে বাড়িতেই। তবু বাড়ির সবার নির্দেশে সে বাড়িতেই রিহার্সাল দিয়েছে। "খরবায়ু বয় বেগে চারিদিক ছায় মেঘে ওগো নেয়ে নাওখানি বাইও।" পিয়া রোজ আসে, কী যে আনন্দে দিনগুলো কাটছে। ৷ কিন্তু রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন মঞ্চ দেখেই বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটছে। ওখানে উঠতে হবে, সবাই তাকিয়ে থাকবে তাদেরই দিকে। ওরে বাবা, এ যে কী সাংঘাতিক ব্যাপার, হাত পা কাঁপছে ছুটির। তারপর পাড়ার রাখিদি এসে ছুটিদের সাজিয়ে দিল। ছুটির ভয় যেন একটুখানি নিজের বশে এল। অনেকে একসাথে, যারা যারা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। একটা হৈ হৈ। ভয়টা কখন যেন চুপিসাড়ে চলে গেল। কিন্তু যখন তার ও পিয়ার নাম ঘোষণা করা হল আবার সেই হাতুড়ির ধম ধম। উফফ। হাত পা থরথর। রাখিদি কোলে তুলে মঞ্চে উঠিয়ে দিল। সাথে সাথে গান শুরু, পিয়ার সাথে সাথে সেও নাচছে, এর মধ্যে একটা বিচিত্র বিভ্রাট। পিয়ার শাড়ি খুলে যাচ্ছে...রাখিদি ভারি সপ্রতিভ। চট করে মঞ্চে উঠে পিয়ার শাড়ি ঠিক করে দিল, তখন "হেই মারো মারো টান" চলছে। সেই প্রথম ও শেষ ছুটির নাচের অভিজ্ঞতা। তবু সান্ত্বনা পুরস্কার পেল দুজনেই। ছুটি পেল "ডাকঘর" আর পিয়া পেল "হাস্যকৌতুক "। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে "। রবীন্দ্রনাথের ছবি ঘিরে অনেক ফুল। তাজা ফুলের গন্ধ, আবৃত্তি করছে একটি ছেলে "বীরপুরুষ "। ৷৷ ব্রজমোহন উচ্চ বিদ্যালয় রতনপুরে। সেই রতনপুর রূপমতী চা বাগান থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে। রতনপুর একটা মিশ্র সংস্কৃতির জায়গা। সেখানে জাতি ধর্ম ভাষার একেবারে বিচিত্র সমন্বয়। বাঙালি, বিহারি, মাঢ় উপজাতি, মণিপুরি, ডিমাছা, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সবাই আছে। রূপমতী এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি চাবাগানের জন্যে এই একটাই উচ্চ বিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রচুর। একেবারে সামনের সারিতে ছুটিকে বসিয়ে দিল দিদিরা। সেখানে একজন স্যার, বাংলার শিক্ষক অর্জুন স্যার, তিনি মঞ্চ এর একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন। চোখে প্রায় গোলাকৃতি চশমা, চশমার ভেতর চোখদুটি উজ্জ্বল। স্যারের হাতে সঞ্চয়িতা। ছুটির বড়দাদা সৃজন এই ইশকুলেরই বিজ্ঞান শিক্ষক। তার পাশে বসা মেয়েটি বলে - অর্জুন স্যার ও সৃজন স্যারই রবীন্দ্রজয়ন্তীর দায়িত্বে আছেন। ছুটি ফিসফিস করে বলে - অর্জুন স্যার এখানে বসেছেন কেন? মেয়েটি বলে - সে তো জানি না। অর্জুন স্যারের মুখের সামনেও মাইক্রোফোন। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের ছবি, ফুলে মালায় ধূপের গন্ধে একটা অপূর্ব আবেশ। অনুষ্ঠান শুরু হলো। ছুটি লক্ষ করছে বারবার অর্জুন স্যারকে। যতগুলো আবৃত্তি হচ্ছে স্যার সঞ্চয়িতার পৃষ্ঠা খুলে ধরছেন। মনে হল ভুলভাল হচ্ছে কিনা মিলিয়ে দেখছেন। এরইমধ্যে একটি মেয়ে উঠেছে "সামান্য ক্ষতি " নিয়ে। সেই যে নিষ্ঠুর রানী স্নান "সমাপন" করে 'করপদতল' তপ্ত করার জন্যে গরীবের কুটির জ্বালিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন সখীদের। এবং সেই সহচরীদের মধ্যে একটি মেয়ে ছিল মালতী সে -ই একমাত্র নিষেধ করেছিল রানীমাকে- "কহিল মালতী সকরুণ অতি একি পরিহাস রানীমা? আগুন জ্বালায়ে কেন দিবে নাশি? এ কুটির কোন সাধু সন্ন্যাসী কোন দীনজন কোন পরবাসী বাঁধিয়াছে নাহি জানি মা.... এইটুকু বলে মেয়েটা খেই হারিয়ে ফেলল। সে তার স্মৃতি হাতড়ে চলেছে। অর্জুন স্যার গর্জে উঠলেন প্রায় - রানী কহে রোষে... ছুটি আমূল কেঁপে উঠল। অইদিকে মেয়েটি খেই ধরে নিয়েছে - "রানী কহে রোষে দূর করি দাও এই দীন দয়াময়ীরে অতি দুর্দম কৌতুকরত যৌবনমদে নিষ্ঠুর যত যুবতীরা মিলি পাগলের মত আগুন লাগাল কুটিরে.... তারপর সেই লেলিহান আগুনের অপরূপ দৃশ্য যা রবীন্দ্রনাথ কাব্যমালিকায় শব্দ দিয়ে গেঁথেছিলেন। অর্জুন স্যার বারবার হাত দিয়ে কীসব ইঙ্গিত দিচ্ছেন। মনে হল লেলিহান আগুনের অপরূপ ছবি এবং যেভাবে একটি একটি করে দরিদ্রের কুটির তা গ্রাস করছে তাকে যেন মেয়েটি ভালো করে ফোটাতে পারে তারই ইঙ্গিত। এবার বোঝা গেল অর্জুন স্যার কেন মঞ্চের একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকেন। এরই মধ্যে দুটি ছেলে মেয়েকে নিয়ে এলেন আরেক স্যার। এরা দুজন ডুয়েট গাইবে। সম্ভবত নবম কিম্বা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছুটি জানত না এরপর কত বড় চমক অপেক্ষা করছে এরপর। (ক্রমশ)
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register