Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

রম্য রচনায় বিশাখা বসু রায়

maro news
রম্য রচনায় বিশাখা বসু রায়

নষ্টালজিয়া : লোয়ার সারকুলার রোড

আমাদের আদি বাড়ী ছিল রাজশাহী জেলার মালঞ্চী গ্রামে। আমার ঠাকুরদা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী । উনি রাজশাহী থেকেই অবিভক্ত বাংলা, বিহার, ওড়িশা 'র Matriculation পরীক্ষা তে প্রথম স্থান অধিকার করেন , তার পর Presidency College থেকে BSc. Mathematics এ First Class First আর MSc. Mathematics এ Calcutta University তেও First Class First হলেন । তার পর উনি বিলেত যাবার প্রস্তাব উপেক্ষা করে সরকারি চাকরি তে ঢুকলেন , আর Undivided Bengal er District Magistrate হয়ে retire করলেন । এর পর ই এলো partition ! দেশ ভাগের সময় উনি কলকাতায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন । শুনেছি এই সময় অনেকে property exchange করে এ দেশের লোক ও দেশে চলে গেছেন , আবার ও দেশের লোক এ দেশে চলে এসেছেন । আমার ঠাকুরদা যেহেতু কারোর সঙ্গে property exchange করেন নি , তাই সেই সম্পত্তির কাগজ পত্র সব ওখানেই রেখে এসেছিলেন ! এও শুনেছি , আমাদের সম্পত্তির দেখা শোনা যে নায়েব মশাই করতেন , হাফিজ চাচা , উনি নাকি পরবর্তী কালে আমাদের সম্পত্তি সব হাপিজ করে দিয়েছিলেন ! যাই হোক , আমার আজকের গল্প সে বিষয়ে নয় ! আমার ঠাকুরদা ছিলেন বংশের একমাত্র ছেলে । ওনার দুই বিবাহিত বোন ছিল যারা বাংলাদেশে থাকতেন ! দেশ ভাগ হবে জেনে আমার ঠাকুরদা Lower Circular Road এ একটা বিরাট বাড়ী ভাড়া নেন । সে বাড়ীতে সতেরো (17) খানা বিরাট বিরাট ঘর ছিলো । বাড়ীওয়ালা ছিলেন অবাঙালী , দেশে থাকতেন । কলকাতায় খুব কমই আসতেন ! উনি নিজেদের থাকার জন্য কয়েকটা ঘর বন্ধ রেখে বাকিটা আমার ঠাকুরদাকে ভাড়া দিলেন । মৌলালি থেকে মল্লিক বাজার যেতে গেলে বাঁ দিকে Sur Industries এর বিরাট factory ছিলো , আর তার ঠিক উল্টো দিকে , ডান হাতের রাস্তাতে ছিলো এই বাড়ী , যার ঠিকানা ছিলো Lower Circular Road , লোকে বলে তালতলা । রাস্তার মাথায় ছিলো বসন্ত কেবিন , যেখানে অত্যন্ত সুস্বাদু Fowl Cutlet পাওয়া যেতো ! দোতলা বাড়ী , দুদিকে দুটো টানা বারান্দা ...উত্তরের বারান্দায় দাঁড়ালে পুরো রাস্তা টা দেখা যেতো , আর দক্ষিণের বারান্দার পেছনে ছিলো মস্ত বড় খোলা মাঠ ! আর ছিলো বিরাট খোলা ছাত ! এই বাড়ীতে প্রথমে এসে উঠলেন আমার ঠাকুরদা ওনার মা , স্ত্রী , আর সাত সন্তান নিয়ে । বড় মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এর পর এলেন ওনার বড় বোন, তাঁর স্বামী ,আর আট সন্তান নিয়ে , তারপর ছোট বোন , তাঁর স্বামী, আর চার সন্তান নিয়ে । আর এলেন দূর সম্পর্কের এক ভাগ্নে ! এর পর আমার ঠাকুরদার বড় জামাই (আমার বড় পিশেমশাই ) বিলেত গেলেন পড়াশোনা করতে ...এ বাড়ীতে রেখে গেলেন্ আমার পিশিমাকে , তার চার সন্তান , আর নিজের ভাই বোনদের ! একটা সময় এ বাড়ীতে 35/36 জনের পাত পড়তো ! বাড়ী পুরো জমজমাট ! সব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে ....প্রত্যেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার লড়াই লড়ছে ! উত্তর কলকাতার পুরোনো বাড়ী , হাত বাড়ালেই পাশের বাড়ীর জানালা ছোঁয়া যায় ! বাঁ দিকে চ্যাটার্জি বাড়ী , যে বাড়ীতে থাকতেন চ্যাটার্জি দম্পতি , ও ওঁদের তিন সন্তান । বড় মেয়ে পূরবী , রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখতেন । শুনেছি , ওঁকে গান শেখাতে আসতেন শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মহাশয় , ...5 নম্বর, Galiff Street এর tram এ করে । নামতেন রাস্তার মোড়ে , আর হাঁটতে হাঁটতে আসতেন , সেই হাতা গোটানো বাংলা shirt আর ধুতি পরে ! লম্বা সৌম্য দর্শন ভদ্রলোক ! উনি Bombay চলে যাবার পর শুনেছি , আসতেন শ্রদ্ধেয় দেবব্রত বিশ্বাস মহাশয় ! পরবর্তী কালে পূরবী চট্টোপাধ্যায় বিবাহ সূত্রে হন পূরবী মুখোপাধ্যায় , নামকরা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ! উল্টো দিকের কোন একটা বাড়ীতে নাকি ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব আসতেন। এর পর এক এক করে ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হলো , আর যে যার সংসারে চলে গেলো , তাদের বাবা মা কে নিয়ে , আর মেয়েদের সব বিয়ে হয়ে গেলো ! আমার যখন জ্ঞান হয় , তখন ওই বাড়ীতে থাকতেন আমার ঠাকুরমা , ঠাকুরদা , আমার বড় জ্যেঠামশাই ,যিনি High pressure এ ভুগতেন , আর ঠাকুরদার সেই দূর সম্পর্কের ভাগ্না । তবে পূজো পার্বণে সব ছেলে মেয়েরা আসতেন তাদের বউ বাচ্চা দের নিয়ে । তখন বড় হল ঘরে আসন পেতে সবাই মাটিতে খেতে বসতো....বড় বড় কাঁসার থালায় , মোটা ভারী কাঁসার গেলাস , ভারী ভারী কাঁসার বাটিতে খাওয়া হতো । এঁটো কাঁটার বালাই ছিলো খুব ! তাই বামুন ঠাকুর খাবার পরিবেশন করবার সময় খুব সাবধানে থাকতে হতো ..ছোঁয়াছুঁয়ী না হয়ে যায় ! ছোট ছোট হাতে (শুধু ডান হাত ব্যবহার করা যাবে )ভারী গেলাস তোলা , সে এক বিরাট পরীক্ষা ! তবে এতজন মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়া ...মজাই ছিলো আলাদা ! ! ! বড় জ্যাঠামশাই অকালে মারা যাবার পর ঠাকুরদা , ঠাকুরমা ও তাদের ভাগ্নে চলে গেলেন শান্তিপুরে ...যেখানে ওদের একটা বাড়ী ছিলো ! ওই তালতলার বাড়ীর কি পরিণতি হলো আর খোঁজ পাওয়া গেলনা ! এত বড় বাড়ী ...হয়তো কোন promoter এর হাতে পড়ে এখন Multistoried building এ পরিণত হয়েছে ! জানিনা ! ! !
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register