Mon 17 November 2025
Cluster Coding Blog

রম্যরচনায় অঞ্জলি দে নন্দী

maro news
রম্যরচনায় অঞ্জলি দে নন্দী

মনুষ্যত্ব ও ভারতবর্ষ

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর দিন। রাত্রে নিজের বাড়িতে এই পূর্ণিমায় বহু বছর ধরেই আমি আমার বিরাট মাটির প্রতিমার পূজো করে আসছি.। ১৩/১০/২০১৯, রবিবার। আমরা জিম করবেট থেকে নতুন দিল্লীতে ফিরছি। চারদিন আগে গিয়েছিলাম। আমি আমার পতিদেবের পাশে বসে যাওয়ার সময় বলেছিলাম,"আসার পথে এই জমি থেকে টাকা দিয়ে কয়েকটি ধানের শীষ নিয়ে যাবো। ও নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল। আর আমি জানলা দিয়ে দেখছিলাম, রাস্তার পাশে পাকা ধান গাছ ভরা জমি। ঠিক তাই করলুম! আমার কর্তাকে সুবিধামত একটি জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড় করাতে বললাম। আমি কার থেকে নেমে একটি জমির ধারে পৌঁছলুম। সেখানে তিনজন ছিলেন। দুজন ধানগাছ কাটছিলেন আর একজন আঁটি বাঁধছিলেন। আমি তাদেরকে হাত নেড়ে ডাকলুম। একজন বৃদ্ধ ভদ্র মানুষ আমার কাছে জমির ওপাশ থেকে হেঁটে হেঁটে এলেন। মাথায় সাদা টুপি, নিম্নাঙ্গে চেক লুঙ্গী, উর্ধাঙ্গে সাদা ফতুয়া, কাঁধে সাদা-কালো গামছা। সবই মলিন ও নোংরা। আমি বললাম,"বাবা! আমাকে কয়েকটা ধানের শীষ দেবেন? আজ আমাদের মা শ্রী লক্ষ্মী দেবীর পূজো। ওনাকে দেব।'' শান্ত মানুষটি তখন জমিতে হেঁটে হেঁটে হেঁটে ওপাশে গেলেন। সেখান থেকে একটি আঁটি হাতে করে আমার কাছে আনলেন। সামনেরগুলি তখনও আঁটি বাঁধা হয় নি। কেটে জমিতে শুইয়ে রাখা আছে। আমি বললাম, "ডিকিতে নিয়ে আসুন!" উনি তা-ই করলেন। আঁটিটি লম্বায় পাঁচ ফুট পাঁচ বা ছয় ইঞ্চি লম্বা হবে। কারণ, আমি পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা। আর এটি আমার থেকেও বড়। আর বেশ মোটাও। আমার কর্তা ডিকির কাছে এসে আমার হাতে ত্রিশ টাকা দিয়ে বলল,"ওনাকে দিয়ে দাও!" আমি দিতে গেলুম। উনি না বলে পিছন ফিরে সোজা রাস্তা ধরে হেঁটে চলে গেলেন। আর ফিরেও তাকালেন না। আমি অনেকবার জোরে জোরে জোরে তাঁকে ডেকে ডেকে ডেকে টাকাটা নিতে অনুরোধ করলাম। তিনি পিছন ঘুরে আমার দিকে না তাকিয়ে, উত্তর না দিয়ে, কেবল আমার বিপরীত দিকে এগিয়ে চলে গেলেন। আমি তাঁর গতি পথের দিকে তাকিয়েই রইলুম....... আমার স্বামী আমাকে সাথে নিয়ে কারে এসে বোসলো। গাড়ী চালিয়ে দিল। আমরা এগিয়ে চললাম। ..... কিছুক্ষণ আমি একদম স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। চোখদুটি ঝাপসা হয়ে গেল। একটুপর ধাতস্থ হয়ে বললাম,"মা শ্রী লক্ষ্মী দেবী! তুমি ওনাকে ভরে দাও গো মা! আজ তোমার কাছে এ-ই শুধু প্রার্থনা।" 😊 আমার কর্তাকে বললাম,"হিন্দুর শহুরে মহিলার শ্রী লক্ষ্মী পূজোর জন্য গ্রামের মুসলমান পুরুষ কৃষক বিনামূল্যে ধানের আঁটি দান করলেন। এ এক অমূল্য উপহার। আমি উপহৃত হয়ে (উপহার পেয়ে -নতূন শব্দ) এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্ত্রীকে মনে মনে নমস্কার জানালাম খাঁটি মনুষ্যত্ব আজও তরতাজা আছে।... সেখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। শুধু শুদ্ধ ভক্তি আছে। আর আছে নির্লোভী পবিত্রতা। এরপর আমরা বাড়ী এসে সেই আঁটিটি দিয়ে পূজো করলাম। পরে ওটি দেওয়ালে মা শ্রী লক্ষ্মী দেবীর ঘরে টাঙিয়ে রেখে দিলুম। ওটি থেকে এক সুন্দর সুবাস সারা ঘরটিকে ভোরে রেখেছে, সদা সর্বদাই... জয় মনুষ্যত্বের জয়!জয় নির্লোভ শুদ্ধ ভক্তির জয়!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register