Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি -তে শ্রাবনী

maro news
গল্পেরা জোনাকি -তে শ্রাবনী

রামধনু

ছাদের বারান্দায় ক্রিকেট বলটা নিয়ে খেলতে খেলতেই ঋজুর চোখ পড়ল জানালার সানসেটে,,, দরজা সামান্য ফাঁক করে দেখে নিল ঘরের ভেতর। নাহ সকলেই ঘুমোচ্ছে-- সবে লম্বা হতে শুরু করেছে ও নীচু ছাদের ছোট্ট সরকারি আবাসন। সামান্য রিস্ক নিয়ে কষ্ট করতেই আহত পাখিটাকে উদ্ধার করে আনতে পারল সে। তারপর জল, রান্নাঘর থেকে ঝুরিভাজা, ডানায় চুন হলুদ-- ঠাকুমা খুব সাহায্য করেছিল পাখিটাকে সুস্থ্য করে তুলতে, ,, বিকেলে একখানা খাঁচাও ঠাকুমার জেদে বাবা এনে দিয়েছিল । যদিও রাগ দেখিয়েছিল খানিক -তুমি যে কি কর না মা। ঘর দোর নোংরা করবে- ঋজুর দিকে তেড়ে মারতে আসতে আসতে বলেছিল - --যেখান থেকে এনেছ সেখানে ফেলে এসোগে যাও,,
ঠাকুমাই আড়াল করে দাঁড়িয়েছিল, ---ওমন বলিস না দ্বিজু, আঘাত পেয়েছে,, কাকপক্ষীতে ছিঁড়ে খাবে যে,, হাজারহোক প্রান তো-তুই না আমার ছেলে,, এত নিষ্ঠুর হবি?
ব্যাস চুপ করে গেছিল বাবা,, রামধনু থেকে গেল। হ্যাঁ,কেউ চিনতে পারেনি পাখিটিকে। তাই নাম না জানা পাখির ডানায় সাতরঙের ঝিলিক দেখে ঠাকুমাই নাম দিয়েছিল রামধনু। খাঁচায় দুটো বাটি,, সেখানে রোজ জল আর ছোলা দেয় ঠাকুমা,, পাখিটা খাওয়ার চেয়ে বেশি ডানা ঝাপ্টায়,,খাঁচার দরজা, দেওয়াল ভেঙে দিতে চায়,,খুব রাগ হয়ে যায় ঋজুর, -এত্ত ভালবাসে সে পাখিটাকে। ঠাকুমা বোঝায়, --বাসবে বাসবে তোকেও একদিন খুব ভাল বাসবে,,,
সপ্তাহ ঘুরতেই এল মহামারি।এক এক করে বন্ধ হয়ে গেল স্কুল, খেলার মাঠ, বাজার, ঘরের দরজাও। সারা পাড়ায় অচেনা ভয় আর নিস্তবতা নিবিড় হয়ে আছে। কেউ কোথাও বেরোচ্ছেনা। সাস্পেক্টেড ঠাকুমা আর কখনো ফিরবে না আইসোলেশন থেকে। পুলিশের জিপ এসেছে। মা বাবা গাড়িতে গিয়ে বসতেই ঘরের চাবি টা নিয়ে এক্ষুনি আসছি বলে আবার ঘরে ঢুকল ঋজু, এক দৌড়ে সোজা বারান্দায়,, খাঁচার দরজা খুলে ডানায় হাত বুলিয়ে বার করে আনল রামধনু কে, তারপর হাতের চেটোয় বসিয়ে বলল --যা-
এইটুকু শব্দ করেই চোখ ঝেঁপে জল এল তার,, রামধনু কি বুঝল কে জানে, এক পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে ঘাড় উঁচু করে তাকিয়ে রইল,, ঋজু হাত নামিয়ে রেলিং এ বসাল রামধনু কে,,,, এবার রামধনু যেন কিছু বুঝল, রেলিং থেকে সিলিং তারপর কার্নিশ বেয়ে ডানা মেলে দিল---
খাঁচা থেকে অচিন পাখি উড়িয়ে পুলিশের জিপে উঠে বসার আগে কিসের শব্দ পেয়ে চোখ তুলতেই দেখতে পেল রামধনু আবার ফিরে এসে ঋজুর মাথার ওপর দিয়ে সামনের পাঁচিলে বসেছে ,,আর অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে ঋজুর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি রামধনু ঋজুর সাথে শেষ দেখা করতে এসেছে? রামধনুর চোখে কিছু ছিল - হঠাত কেউ ঋজুর ভেতর থেকে বলে উঠল ----বাসবে, বাসবে তোকেও একদিন খুউউব ভাল বাসবে,,, ঠাকুমার কথা মনে পড়তেই ঋজুর চোখ আবার ঝাপসা হয়ে গেল,, নিজের অজান্তেই হাত তুলল ঋজু-- টা,, টা ----
খোলা আকাশের বুকে রামধনু কি সুন্দর,,কি মায়াময়, সেই দৃশ্য বুকে নিয়ে জিপ তখন ছুটে চলেছে কোয়ারেন্টাইনের পথে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register