Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

রম্য রচনায় অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়

maro news
রম্য রচনায় অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়

ফিরে দেখা

আজও বেশ মনে পড়ে ঘোর গরমের দুপুর। ঘুঘুডাকা দুপুর। ভরদুপুর। কোন জনপ্রাণী কোথাও নেই। অদ্ভুত চুপচাপ চারপাশ। সেই একটানা চুপের আলাপে শিরীষ ফলের ঝুনঝুন ঝুনঝুন শব্দের বিস্তার। আর লুয়ের এলোমেলো হাওয়া। সেই এলোমেলো লুয়ের হাওয়ায় খুশি হয়ে ঘুরে ঘুরে ফোয়ারার মত উপরে উঠছে খেলার মাঠের ধুলো। আগের রাতে অপেক্ষার অস্থিরতায় মনখারাপ করে ছিঁড়ে ফেলা প্রেমের কবিতারাও ঘুরে ঘুরে উড়ছে ধুলোর সঙ্গে । আমরা শ্রীসদনের ক্লাস সেভেনের সাতাশ মেয়ে দুপুরে কিচেনে খেয়ে আর হস্টেলে ফিরিনি। ঘুরে বেড়াচ্ছি পথে-বিপথে। সবাই কি আর পথে চলে। বিপথেও যে চলতে হয়। নইলে পথের সোমে ফেরা যায়না যে সঠিক সময়। সেই এলোমেলো লুয়ের হাওয়া গায়ে মেখে শ্রীসদনের বেলে পাকা তেঁতুল খেতে খেতে পথে-বিপথে খালি পায়ে চলেছি আমরা ফুল তুলতে। সেসময়ে শান্তিনিকেতনের অর্থনীতি ও অর্থনীতি বিভাগ যোজনগন্ধারসৌরভে ঋদ্ধ। সিংহসদনের ঘন্টার স্নিগ্ধতার সান্নিধ‍্যে সমৃদ্ধ। সেসব লু বওয়া দুপুর দিনে যোজনগন্ধার সৌরভের আশেপাশে বাগানবিলাসে ব‍্যাপ্ত থাকত আমাদের মন। সন্ধ‍্যের সাহিত‍্যসভার সভাপতির গলায় মালা গাঁথার ভার ছিল যে আমাদের ওপর। দুপুরের গরম হাওয়ায় হঠাৎ শীতল হাওয়ার ঢেউ। ঈষানকোণ থেকে কালো মেঘ ছুটে আসছে চীনাভবন পেরিয়ে আমাদের ভিজিয়ে দিতে। আমরা অর্থনীতি বিভাগের কার্নিশ থেকে কার্নিশে ছাদ থেকে ছাদে দৌড়ে বেড়াচ্ছি। এদিক সেদিক ছড়িয়ে থাকা বাগানবিলাস ফুল কুড়োচ্ছি। তাড়াতাড়ি। ঝড় আসছে। কালবোশেখি । বড় ভালবাসার ঝড় আমাদের। সব আলো যাবে নিভে মাথায় উঠবে লেখাপড়া এক ছুটে অন্ধকারে র আলোয় বেরিয়ে পড়া। ঝরঝর করে তেঁতুল ঝরবে, ঝুপ ঝুপ করে পড়বে কাঁচা আম। তবু, তবু তাড়াতাড়ি। কাজটা সেরে ফেলতে হবে। যেকটা ফুল এই দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসার আগেই কুড়িয়ে নেওয়া যায় সেকটা কুড়িয়ে ফেলা। আমাদের শুকতারার নীল বড় বালতিটা তখন ভরে উঠছে রাণী রঙের বাগানবিলাসে । খুব ব‍্যস্ত আমরা সাহিত‍্যসভার কাজে। কিন্তু তবু শুধু তো কাজ না আমরা যারা পাঠভবন, আমরা যারা পাঠভবনের হস্টেল তারা জানি কাজকে কিকরে অকাজের সুখে ভরিয়ে তুলতে হয়। আমাদের মধ‍্যে থাকা কেজো মানুষটার মনটা তখন সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে বাগান বিলাস পেরিয়ে বয়রায় মন দিয়েছে। কখন যে ঠিক কোনটানে অর্থনীতি বিভাগ থেকে সন্তোশালয়ের দিকে চলে এসেছি শুক্নো পাতায় ভরা লাল কাঁকড়ের নদী পেরিয়ে সবাই বুঝেই উঠতে পারিনি। কেউ কেউ বয়রা কুড়োচ্ছে জামার কোঁচড় ভরে। আর কেউ কেউ কালো মেঘের ভ্রুকুট্টিকে বেপাত্তা করে তার ভেতরে থাকা বিচিটা বের করে ইঁট দিয়ে মেরে ভাঙছে। আর তারপর ঐ বিচির মধ‍্যে থাকা বাদামটা মুখে টপ করে ফেলে চোখবুজে কান ইঁটো করা অমলিন হাসিতে দুলছে। ঠিক এইরকম শক্ত কিছুর উপর ইঁট ঠুকে ভাঙতে গিয়েই আমরা আবিস্কার করেছিলাম ভারতবর্ষকে। নদীমাতৃক ভারতবর্ষ। আসমুদ্রহিমাচল ঘুরে বেড়িয়েছিলাম আমরা শুক্নো পাতার স্তুপ সরিয়ে টিপটিপ বৃষ্টিতে। তাই এই ফলের কাছে আছে আমাদের অনেক অনেক ঋণ। আজকের দিনে বসে সেসব কালবোশেখির বিকেল গুলো রূপকথা মনে হয়। আচ্ছা তোমাদেরও কি এ ফল দেখে কিছু মনে পড়ে? শিলনোড়ায় বয়রা ভাঙা আসলে হাস‍্যকর রাজকীয়তা জানি কি আর করা সময় যে সে সব আলু থালু আটপৌরে বয়রা দিন হারিয়ে দিল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register