Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গ এ গদ্যে মৌমিতা ঘোষ

maro news
গ এ গদ্যে মৌমিতা ঘোষ

স্থানু

এখানে ফেলে রাখা আছে এক ছড়ানো উঠোন।‌ভাঙা তুলসী মঞ্চের গায়ে জংলা গাছ।এই উঠোনটা থেকে একটুখানি যে আকাশ দেখা যেতো, তা ছিল এ বাড়ির বড় বৌয়ের সুখের বাড়াবাড়ি। কাটা ঘুড়ি দেখলে সে ছাতে গিয়ে লগা দিয়ে ডাল ঠেলে পাড়তে চেষ্টা করতো। আর ছাতে যাওয়ার প্রসাদী কালশিটেগুলোয় বোরোলীন লাগাতে লাগাতে সে ভাবতো জীবনের নানা ওঠাপড়া কীভাবে গায়ে না লাগে। গায়ে না লাগালেও, পিঠে তো বেশ লাগে। সে রঙচটা পুরোনো বাড়িটার আয়নায় মুখ দেখতো না কখনো। শুধু কাকভোর পেরিয়ে যখন আকাশ ফর্সা হয়েছে খানিক, সে উঠোনে গামলায় জল ভরে নিজের মুখ দেখতো নেমে আসা আকাশের মাঝখানে। তার কুচি কুচি অবাধ্য চুল শিরশিরে হাওয়ায় নাচতো আর জলে ঢেউ খেলে যেতো। তরঙ্গ তো সবখানেই ওঠে , গামলার জলেও লাগে হাওয়ার আল্পনা। বড় বৌ গুনগুন গাইতে গাইতে জামাকাপড় ভিজিয়ে দিতো গামলায়। রান্নাঘর মুছে নিতো, বাসি রান্নাঘর রাখা যায়না। জামাকাপড় ছেড়ে শুদ্ধ হয়ে সে চাল ধুতো,আর দেখতে পেতো সাদা জলের সাথে ধুয়ে যাচ্ছে তার রক্ত। আলো বাতাসহীন একটা বাড়িতে থাকতে থাকতে তার রক্ত সাদা হয়ে গিয়েছিল, সে স্পষ্ট দেখতে পেতো। বর তার ছিল ভারী রাগি। কোনদিন মানুষটাকে যত্নে দুহাতের তালুতে ধরে দেখেনি সে মুখ।আলো আর অন্ধকারের মধ্যের ফারাকেই তাদের ওঠাবসা, খাওয়া। একটা পুকুরের জলের মধ্যেই দিব্যি চলে যাচ্ছিল, হাঁসেদের যেমন সমুদ্র দেখার বাসনা থাকেনা, তেমনই।
শুধু ওইটুকু উঠোনে একবার পায়ের ছাপ এঁকে গেল কোন রাখালিয়া বাঁশি, ওইটুকু আকাশ আর ধরে রাখতে পারলো না বড় বৌকে। সে বাঁচার নামে নিখলো নিরুদ্দিষ্ট খবর। ভেসে গেল কাগজের নৌকা হয়ে। এ বাড়িতে তার নাম কেউ নেয়না। তুলসি মঞ্চের রঙচটা গোড়াটায় এখনো ঝাপসা রঙের একটু আলপনা দেখা যায়, মেয়েমানুষের স্বপ্ন-বিলাস, ছোট ছোট সুখে স্থিতি রাখার সাক্ষী...
একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে এ বাড়ির বড় বৌ একদিন তারায় আঁচল পেতেছিল... কেউ খোঁজ রাখেনি তার।খসে পড়া তারার কোন গল্প হয়না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register