Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

প্রবন্ধে ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

maro news
প্রবন্ধে ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

‘হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল বডি ডক্টর টেগোর হ্যাজ!’ - রবীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্য-শারীরশিক্ষা-যোগ- ধ্যান

২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস চলে গেল। রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্যের উপায় হিসেবে যোগ এখন প্রাধান্য পাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের শারীরশিক্ষা-যোগ-ধ্যান ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে যায় বুদ্ধদেব বসুর কথা। ১৯৪০ সালে বুদ্ধদেব বসু যখন শান্তিনিকেতনে আসেন সেই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স প্রায় আশি বছর। তিনি লিখছেন, “(রবীন্দ্রনাথের) আগুনের মত গায়ের রঙ ফিকে হয়েছে। কিন্তু হাতের মুঠি কি কব্জির দিকে তাকালে বিরাট আভাস এখনো পাওয়া যায়। এই অপরূপ রূপবান পুরুষের দিকে এখনও স্তব্ধভাবে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেমন করে আমরা শিল্পীর গড়া কোনো মূর্তি দেখি”। কিংবা সেই বছরেই (১৯৪০) সেপ্টেম্বর মাসে কালিম্পঙে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রায়-অজ্ঞান অবস্থায় কেটেছিল সম্পূর্ণ দুটো দিন। দার্জিলিং থেকে সাহেব সিভিল সার্জন এসেছিলেন তাঁকে দেখতে। তাঁর বলিষ্ঠ শরীরের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল - ‘হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল বডি ডক্টর টেগোর হ্যাজ!’ রবীন্দ্রনাথের জন্মের আগে থেকেই ঠাকুর বাড়িতে শারীরশিক্ষা ও শরীরচর্চা ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আত্মজীবনীর সংকলক লিখছেন, ‘দেবেন্দ্রনাথের বিদ্যাচর্চার জন্য এবং শরীরের স্বাস্থ্য ও আরামের জন্য দ্বারকানাথের ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল না। দেবেন্দ্রনাথের হাতে খড়ি হয় ছ-বছর বয়সে। বাড়ীর পাঠশালার গুরু মহাশয়ের থেকে তিনি শিক্ষা আরম্ভ করেন। আর রবীন্দ্রনাথের স্কুল শিক্ষা শুরু হয় তিন বছর দশ মাস বয়সে কলকাতার ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে। রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ছ-বছর তখন ঠাকুর বাড়ির প্রত্যক্ষ পৃষ্ট পোষকতায় ১৮৬৭ সালে হিন্দুমেলা বা জাতীয় মেলা স্থাপিত হয়। বিশ্বভারতীর জার্নাল অফ রিসার্চে সুবোধ চৌধুরী লিখছেন, “হিন্দুমেলাতে ব্যায়াম চর্চার অন্তর্ভূক্তির পিছনে পরিবারগত শরীর চর্চার প্রভাবও কাজ করেছিল। হিন্দুমেলার প্রধান পৃষ্টপোষক তো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির লোকজনই। যোগাযোগের দিকে লক্ষ্য রেখে বলা যায় এই পরিবারের শরীরচর্চার যে রেওয়াজ ছিল তার শেষ পরিণতি দেখা যায় হিন্দুমেলার আসরে। অক্ষয় কুমারের ঊৎসাহে প্রতিষ্টিত ঠাকুরবাড়ির ব্যায়ামের আখড়াকে মধ্যবর্তী একটা প্রচেষ্টা বলে গণ্য করা যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখছেন, “আমাদের বাড়ির সাহায্যে হিন্দুমেলা বলিয়া একটি মেলা সৃষ্টি হইয়াছিল। নবগোপাল মিত্র মহাশয় এই মেলার কর্মকর্তারূপে নিয়োজিত ছিলেন। ভারতবর্ষকে স্বদেশ বলিয়া ভক্তির সহিত উপলব্ধির চেষ্টা সেই প্রথম হয়। মেজদাদা সেই সময়ে বিখ্যাত জাতীয় সংগীত ‘মিলে সবে ভারতসন্তান’ রচনা করিয়াছিলেন। এই মেলায় দেশের স্তবগান গীত, দেশানুরাগের কবিতা পঠিত, দেশী শিল্প ব্যায়াম প্রভৃতি প্রদর্শিত ও দেশী গুণীলোক পুরস্কৃত হইত”। রবীন্দ্রনাথের যখন ন-বছর বয়স তখন একটা নতুন বিদ্যার আয়োজন করা হয়েছিল সেটা হল জিমন্যাষ্টিক নামক শরীরচর্চার শিক্ষা। ওই হিন্দুমেলায় জিমন্যাষ্টিক চর্চার একটা বিশেষ স্থান ছিল। মনে হয় এই কারণে অথবা পারিবারিক প্রভাবে বালকদের উপযুক্ত শরীর গঠনের জন্য এই শিক্ষার সূচনা করা হয়। ৯ই আশ্বিন ১২৭৬ (১৮৬৯) তারিখে ঠাকুর বাড়ির হিসাবের খাতায় দেখা যায়, “ছেলেবাবুদিগের জিমন্যাষ্টিক শিক্ষার কাষ্ঠ তৈরির ব্যয় বাবদ তিন টাকা দু আনা পয়সা খরচ করা হয়েছে”। আবার ১২ই অগ্রহায়ণ তারিখ হিসাব লেখা হয়েছে, “বাবু নীলকমল মুখোপাধ্যায়কে বালকদিগের জিমন্যাষ্টিক শিক্ষার জন্য মাষ্টারদের বেতন দুমাসের শোধ দিবার জন্য দেওয়া হইল”। এই দুটি হিসাব থেকে বেশ বোঝা যায় ১৮৬৯ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যরা বাড়িতে জিমন্যাষ্টিক শেখা শুরু করেন। হিসাবের খাতা থেকে জানা যায় জিমন্যাষ্টিক শিক্ষাগুরুর নাম শ্যামাচরণ ঘোষ। শ্যামাচরণ সে সময়কার বিখ্যাত ব্যায়ামবীর ছিলেন। হিন্দুমেলার আরম্ভ অবধি শ্যামাচরণ পুরস্কার পান। ১৯শে ভাদ্র ১২৭৭ (১৮৭০) হিসাবের খাতায় আছে, “শ্যামাচরণ ঘোষ বালকদিগের জিমন্যাষ্টিক শিক্ষার জন্য উহার বেতন ১২৭৬ সালের অগ্রহায়ণ মাস থেকে ১২৭৭ সালের শ্রাবণ মোট নয় মাসের চুয়ান্ন টাকা শোধ”। এর থেকে বোঝা যায় ঐ সময়ে রবীন্দ্রনাথেরা জিমন্যাষ্টিকের চর্চা করতেন যা পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে উল্লেখ করেছেন। এই সময়ে ঠাকুরবাড়িতে কুস্তিরও বেশ চর্চা ছিল এবং নিয়ম করে ছোটোদেরও কুস্তির শিক্ষা দেওয়া হত। শিখ পালোয়ান সিং রবীন্দ্রনাথদের কুস্তি শেখাতেন। ঠাকুরবাড়ির উত্তর দিকে পাঁচিল ঘেঁষে একটা কুস্তির চালাঘর ছিল। রবীন্দ্রনাথের দাদারাও অনেকে ভালো কুস্তি করতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কুস্তি করার অভিজ্ঞতা ছেলেবেলা ও জীবন স্মৃতিতে উল্লেখ করেছেন। লাঠিখেলার চর্চাও রবীন্দ্রনাথ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের লাঠিগুরু জাতিতে নীচু ছিলেন। লাঠি খেলার নিয়ম গুরুকে প্রণাম করে খেলা শুরু করা। প্রথমে রবীন্দ্রনাথের সংশয় ছিল লাঠি গুরুকে প্রণাম করা নিয়ে। তাঁর বাবা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রবীন্দ্রনাথকে বলেন তিনি যে জাতেরই হন তিনি গুরু। দেবেন্দ্রনাথের এই বিশ্বাস ছেলে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সঞ্চারিত করেন। বিষয়টি বালক রবীন্দ্রনাথের মনে দাগ কেটেছিল। রবীন্দ্রনাথ সাঁতারকাটা শিখেছিলেন ন্যাশনাল সুইমিং ক্লাবের সভ্য হয়ে। পরে শিলাদহতে থাকার সময় সুবিশাল পদ্মায় এপার-ওপার সাঁতার কাটা তাঁর কাছে কোনও বাধাই ছিল না। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ তাঁর বাবার সাঁতার সম্বন্ধে লিখেছেন, “বাবা নিজে খুব ভাল সাঁতার কাটতে পারতেন। গোরই নদীর এপার ওপার করতে তাকে অনেকবার দেখেছি।… প্রথমে যেবার বাবার সঙ্গে ছিলুম দিনের শেষে সন্ধ্যার মুখে বাবা ও আমি বোটের ডেকে দুটি আরাম চেয়ারে বসে আছি। বাবার চেয়ার ডেকের ধার ঘেঁষে জলের খুব কাছাকাছি পাতা। উনি যেমন চুপ করে বসে থাকলে পা নাচান তেমনি ধীরে ধীরে পা দুলিয়ে চলেছেন পদ্মার জলে সোনা রাঙা রঙ ঢেলে সূর্য অস্ত গেছে। চারিদিক নিস্তব্ধ সুন্দর। জলে কিছু একটা ফেলে দিলে যেমন শব্দ হয়, হঠাৎ তেমনি একটা শব্দ শুনতে পেলুম। বাবার দিকে চেয়ে দেখি ওঁর পা থেকে বহু পুরাতন অতি প্রিয় কটকি চটির একটি পাটি জলে পড়ে গেছে। ঝপাৎ করে জলে আর একটা শব্দ হল, চেয়ে দেখি বাবা ডেকে নেই, জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন চটিটাকে তুলে আনতে। স্রোতের টানে চটি অনেক দূর ভেসে গেছে বাবা সাঁতার কেটে ধরতে চেষ্টা করছেন। অনেকক্ষণ বাদে জল থেকে উঠে এলেন মুখে তৃপ্তির হাসি। হাতে চটির সেই পাটিটি। ডেকের উপর চটিটি রেখে বোটের ভিতর কাপড় ছাড়তে চলে গেলেন”। এই ঘটনা থেকে অন্তত বুঝতে পারা যায় তাঁর অনেকদিন থেকেই জলের অন্তরঙ্গ পরিচয় ছিল। রবীন্দ্রনাথের ১৮৭৮ সালে প্রথম বিলেত যান। সেখানে শহরের নাচ সভায় তাঁর বিলাতী নাচের দীক্ষা হয় একথা তিনি ইউরোপ প্রবাসীর পত্রে লিখেছেন। ওই সময়ে তিনি সুবিখ্যাত ইংরেজ লেখক হার্বাট স্পেনসরের কিছু লেখা পাঠ করেন। সুবোধ চৌধুরি লিখছেন, “বিলাতে বাসকালে সে যুগের শ্রেষ্ট চিন্তাশীল ইংরেজ লেখকদের অন্যতম হার্বাট স্পেনসরের প্রবন্ধগুলির প্রতি রবীন্দ্রনাথ আকৃষ্ট হন। প্রথমদিকে সঙ্গীত নাটক সম্বন্ধে প্রবন্ধাদি তাঁর চিন্তার বিষয় হলেও স্পেনসরের শিক্ষা সম্বন্ধে লেখাগুলি তাঁর মনযোগ আকর্ষণ করে বেশি। বিশেষ করে স্পেনসরের “Essay on Education - Intellectual, Physical and Aesthetics” লেখাটি। রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলায় গৃহশিক্ষার সঙ্গে কুস্তি, জিমন্যাষ্টিক, সাঁতার, লাঠিখেলা এবং নরকঙ্কাল সামনে রেখে দেহতত্ত্বের শিক্ষা নিয়েছিলেন। তারপরই প্রথম বিলেত বাসকালে আঠারো উনিশ বছরের তরুণ রবীন্দ্রনাথ স্পেনসরের রচনা “Education-Physical” পাঠ করলেন এবং মুগ্ধ হলেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে শারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁর মনে রেখাপাত করল”। রবীন্দ্রনাথ তাঁর পুত্রকন্যাদের জন্যেও স্বাস্থ্যচর্চার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার অন্যান্য উপকরণ কেনা ছাড়াও পুত্র রথীন্দ্রনাথের জন্যেও মুগুর কেনার হিসাব পাওয়া যায়। রথীন্দ্রনাথ লিখছেন, “লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাক কান চোখ ও অবয়ব মাত্রেরই খুব চর্চার প্রয়োজন আছে, বাবা বিশ্বাস করতেন প্রকৃতির সহায়তায় তা যত সহজে হয় আর কিছুতেই হয় না। অল্প বয়স থেকেই আমার স্বাধীনতা ছিল যেখানে খুশি বেড়ানো, নৌকায় চড়া, মাছ ধরা, নৌকা বাওয়া, লাঠি, সড়কি খেলা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি সবরকম খেলাধুলা ও দৌড়ঝাঁপ করার। … বাবা নিজে আমাকে সাঁতার শিখিয়েছিলেন, তাঁর শেখাবার প্রণালী খুবই সহজ বোটের উপর থেকে একদিন আমাকে নদীর জলে ফেলে দিলেন। খানিকটা হাবুডুবু খেয়ে আমার সাঁতার শেখা হয়ে গেল”। ১৮৯৩ সালে রবীন্দ্রনাথ কিছুদিন শিলাইদহে ছিলেন। এখানেই তিনি লিখলেন তার অমর কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’ – “অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু, চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহসবিস্তৃত বক্ষপট। এ দৈন্যমাঝারে, কবি, একবার নিয়ে এসো স্বর্গ হতে বিশ্বাসের ছবি”। ১৯০৫ সালে শান্তিনিকেতন আশ্রমে একজন জুজুৎসু (জুডো) শেখানোর শিক্ষক আসেন জাপান থেকে, তার নাম সানোসান। অবশ্য তার আগে ওই বছর গোড়ার দিকে কুসুমোতো সান নামে আর এক জাপানী ছুতোর মিস্ত্রি আশ্রমে যোগ দেন, তিনিও নাকি জুজুৎসু শেখাতেন। সুবোধ চৌধুরি লিখছেন, “রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্ররা দেহ ও মনে শক্তিশালী হয়ে উঠুক। তাই নিদারুণ অর্থ কষ্টের মধ্যেও অধিক বেতনে জুজুৎসু শিক্ষক নিয়োগকে তিনি বিলাসিতা মনে করেননি। রবীন্দ্রনাথ সমস্ত ব্যাপারেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন। জুজুৎসুর ব্যাপারে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও সন্তোষচন্দ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাদের মাধ্যমে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ল। তারা কলকাতায় অনুশীলন সমিতিতে এসে জুজুৎসু শেখাতেন”। রবীন্দ্রনাথ একজায়গায় লিখছেন, “শক্তির মধ্যেও দুরকমের ভাব আছে। একটি বাহুবলের শক্তি আর একটি জ্ঞানের শক্তি। শারীরিক শক্তি উপার্জন করার জন্য এক ধরণের জ্ঞানের দরকার। সেটাও আমি শক্তির মধ্যে ধরছি”। ১৯০৪ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথকে বেলুড় মঠের স্বামীজীদের সঙ্গে হিমালয় ভ্রমণে পাঠান। রবীন্দ্রনাথ একটি দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ শুনে লিখছেন, “যখন শুনতে পাই বারংবার পরাস্ত হয়েও মানুষ উত্তরমেরুর তুষার মেরুক্ষেত্রের কেন্দ্রস্থলে আপন জয় পতাকা পুঁতে এসেছে তখন ওই কার্যের লাভ সম্বন্ধে কোনও হিসাব না করে আমাদের ভিতরকার তপস্বী মনুষ্যত্ব পুলক অনুভব করে। মানুষের প্রায় প্রত্যেক খেলার মধ্যেই শরীর বা মনের একটা কিছু আছে, যা সহজ নয় বলেই মানুষের পক্ষে সুখকর”। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশী সমাজ ধারণায় ব্যায়ামশালা, ক্রীড়াস্থল ইত্যাদির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। খেলাধুলার আনন্দময় পরিবেশে যে দলগত নেতৃত্বের ও সামাজিক মনোবৃত্তির সৃষ্টি হয় রবীন্দ্রনাথ সেকথা জানতেন। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “সংসারের বৃহৎ কার্য যদি আমাদের মহৎ কর্তব্য হয়, তবে শরীরকে নিকৃষ্ট অবশিষ্ট বলে ঘৃণা করিলে চলিবে না। তবে শারীরিক বল ও শারীরিক উদ্যমকে আধ্যাত্নিকার অঙ্গ হিসাবে স্বীকার করিতে হইবে”। রবীন্দ্রনাথের মতে যোগ সাধনা ভারতের ন্যাশনাল সাধনা। তা কোন উৎকট শারীরিক, মানসিক ব্যায়াম চর্চা নয়। তার মানে সমস্ত জীবনকে এমনভাবে চালনা করা যাতে স্বাতন্দ্রের দ্বারা বিক্রমশীল হয়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য না হয়, মিলনের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠাকেই আমরা চরম পরিণাম বলে মানি। ঐশ্বর্যকে সঞ্চিত করে তোলা নয়, আত্মাকে সত্য উপলব্ধি করাই আমরা সফলতা বলে স্বীকার করি। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, “ভারতবর্ষের সত্য হচ্ছে জ্ঞানে অদ্বৈততত্ত্ব, ভাবে বিশ্বমৈত্রী এবং কর্মে যোগ সাধনা”। “অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মামৃতং গময়। আবিরাবীর্ম এধি। রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্”। আত্মমগ্নতা বা ধ্যানের মধ্যে দিয়ে মানুষ আত্মোপলব্ধি করে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে আত্মোপলব্ধির অবকাশ থাকা উচিত। ভারতবর্ষ প্রবলতা চায়নি সে পরিপূর্ণতা চেয়েছিল এই পরিপূর্ণতা নিখিলের সঙ্গে যোগ, এই যোগ অহংকারকে দূর করে, বিনম্র হয়ে। এই বিনম্রতা একটি আধ্যাত্মিক শক্তি, এ দুর্বল স্বভাবের অধিগম্য নয়। যথার্থ নম্রতা ও সাত্বিকতার তেজে উজ্জ্বল, যা ত্যাগে ও সংযমের কঠোর শক্তিতে দৃঢ় প্রতিষ্টিত সেই নম্রতাই সমস্তের সঙ্গে অবাধে যুক্ত হয়ে সত্যভাবে নিত্যভাবে সমস্তকে লাভ করে। সে কাউকে দূর করে না, বিচ্ছিন্ন করে না, আপনাকে ত্যাগ করে এবং সকলকেই আপন করে। রবীন্দ্রনাথ দৈনিক উপাসনা করতেন এবং বিশেষ মন্ত্রকে মনন ও ধ্যান করতেন, এ অভ্যাস তাঁর গড়ে উঠেছিল উপনয়নের পর থেকে পিতার উপদেশে। ভোরবেলায় ব্রাহ্ম মুহুর্তে এবং সন্ধ্যাবেলা তাঁর ধ্যানের সময় ছিল। রবীন্দ্রনাথ নিজে ‘যোগ’ সম্বন্ধেও গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করেছেন। ‘সামঞ্জস্য এবং কর্মযোগ’ নামে ভারতী পত্রিকাতে প্রবন্ধ লেখেন। পরে ‘শান্তিনিকেতন’ পত্রিকায় ‘যোগ’ নামে একটি প্রবন্ধ বার হয়।
১৯১০ সালে শান্তিনিকেতনে ছাত্রদের মধ্যে ড্রীল প্রবর্তিত হয়। সেই সময় mass drill একটা দেখবার বিষয় ছিল। মাঝে মাঝে ছাত্ররা fire drill করত। রবীন্দ্রনাথের এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ ছিল। দেহের নিপুণ চালনায় দেহধারীর প্রাণের বেগ ও উদ্যমকে রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পারতেন ও তাতে সুখী হতেন। খেলাধুলার আনন্দময় পরিবেশে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের ফলে নিপুণতা আসে, বল সঞ্চার হয় এবং খেলোয়াড় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। রবীন্দ্রনাথ খেলার ও ব্যায়ামের এই উদ্দেশ্যকে সদার্থক বলেছেন। আবার নঞর্থক দিক সম্বন্ধে ও তাঁর মত রেকর্ড-ব্রেক করা আর পালোয়ানি করার অর্থ একই। তিনি লিখছেন, “তিনি লিখছেন, “এমনতর আত্মপ্রকাশের চেষ্টা নঞর্থক এ সদার্থক নয়, প্রকৃতির. বিরুদ্ধে স্পর্ধা মাত্র, যা সহজ তার প্রতিবাদ মাত্র, তার বেশী আর কিছু অর্থ এতে নেই,. আমার মনে হয় পালােয়ান হওয়া আইডিয়াল নয়, সুস্থ হওয়ায় আইডিয়াল”।
রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন স্বাস্থ্যতত্ত্ববিদদের এনে আশ্রমে স্বাস্থ্য ও খাদ্যতত্ত্ব বিষয় বক্তৃতা করাতেন। এর পিছনে ছিল তাঁর স্বাস্থ্য ভাবনা সেটা সহজেই বুঝতে পারা যায়। ১৯১৯ সালের দিকে আশ্রমে একজন মনিপুরী নৃত্যশিল্পীকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আসেন। আশ্রমে বালকেরা তাঁর কাছ থেকে মৃদঙ্গ সহযোগে সাঙ্গীতীক ব্যায়াম শিখত। প্রভাত মুখোপাধ্যায় লিখছেন, “বালকেরা বুদ্ধিমন্ত্রের খোলের বোলের সঙ্গে নৃত্য শিক্ষা শুরু করে। এই নৃত্য ব্যায়াম আর নৃত্যের সমবায়, বলা যেতে পারে ‘Rhythmic Dance’। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা ছিল বাঙালি ছেলের আড়ষ্ট দেহ নৃত্য ও ব্যায়ামের যুগ্ম সাধনায় সুন্দর, সুদৃঢ় ও সাবলীল হইয়া ওঠে। মনিপুরী বা ঐ শ্রেণীর কোনও তালবদ্ধ সঙ্ঘনৃত্য ছাত্রদের মধ্যে প্রবর্তন করার ইচ্ছা সেই জন্যই”। ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ‘গার্ল গাইড’ এর মত একটি সংগঠন তৈরি করেন মেয়েদের জন্য। তিনি এর নামকরণ করলেন ‘গৃহদীপ’ পরে এর নাম বদলিয়ে করেন ‘সহায়িকা’। মেয়েরা যাতে স্বাস্থ্যবতী হয় এবং সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজের সেবায় প্রবৃত্ত হয় এটাই তাঁর মনের ইচ্ছা। কানাডা থেকে ফিরবার পথে রবীন্দ্রনাথ জাপানে থাকবার সময় সেখানকার জুজুৎসু কসরৎ (জুডো) ও কুচকাওয়াজ বিশেষভাবে দেখবার সুযোগ পান। ১৯২৯ সালে জাপান থেকে নেকুজো তাকাগাকি নামে একজন জুজুৎসু শিক্ষক শান্তিনিকেতনে যোগ দেন। এর আগেও দুজনার কথা উল্লেখ করেছি। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা ছিল বাংলার ছেলেমেয়েরা যেন এই আত্মরক্ষা বিশেষ করে আয়ত্ব করতে পারে। শান্তিনিকেতনে ১৯৩১-এর দোল পূর্ণিমার দিন ‘নবীন’ উৎসব হল। পরে ঠিক হয় কলকাতাতেও এই ‘নবীন’ অভিনয় করা হবে এবং তার আগে ওই মঞ্চে জুজুৎসু ক্রীড়া প্রদর্শনী হবে। ১৬ই মার্চ ১৯৩১ শান্তিনিকেতনে ছাত্রছাত্রীরা কলকাতার নিউ-এম্পায়ার রঙ্গমঞ্চে জুজুৎসু ক্রীড়া ও কসরতের প্রদর্শনী দেখায়। এই অনুষ্টানটি শুরু হয় ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা’ গানটি দিয়ে। অনেকের মতে গানটি রবীন্দ্রনাথ এই উপলক্ষ্যেই রচনা করেছিলেন। অনুষ্টানটিতে রবীন্দ্রনাথ নিজে উপস্থিত থেকে অনুষ্টানের তাৎপর্য ও গানের ভাষা নিজেই ব্যাখ্যা করেন। গানটি হল, - “সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান। সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ। মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়। দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো, নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো। মুক্ত করো ভয়, নিজের 'পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়। ধর্ম যবে শঙ্খরবে করিবে আহ্বান নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ। মুক্ত করো ভয়, দুরূহ কাজে নিজেরি দিয়ো কঠিন পরিচয়”॥ এই গানটির গুরুত্ব অপরিসীম। এতে আধুনিক ভারতের শক্তি ও সাধনার দর্শনবাদ মূর্ত হয়ে উঠেছে। জুজুৎসু প্রদর্শনী একটা উপলক্ষ্য মাত্র। কিন্তু এই উপলক্ষটুকুকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় শক্তি সাধনার রূপটি ধরা দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার সঙ্গে নৃত্য ও গানকে সংযুক্ত করেন। তিনি মনে করতেন যারা বীর জাতি তারা যে কেবল লড়াই করেছে তা নয় সৌন্দর্য রস সম্ভোগ করেছে, নিজেকে শুকিয়ে মারার অহংকার তাদের নয়, তাদের আছে সৃষ্টিকর্তার আনন্দরূপ সৃষ্টির সহযোগীতা করবার শক্তি। আর একটা জায়গায় বলেছেন, “মানব সমাজে নৃত্য সেইখানে বেগবান, গতিশীল, সেখানে বিশুদ্ধ যেখানে মানুষের বীর্য আছে। যে দেশে প্রাণের ঐশ্বর্য অপর্যাপ্ত নৃত্যে সেখানে শৌর্যের বাণী পাওয়া যায়। শ্রাবণ মেঘে নৃত্যের রূপ তড়িৎ লতায়, তার নৃত্য সহচর বজ্রাগ্নি। পৌরুষের দুর্গতি যেখানে ঘটে সেখানে নৃত্য অন্তর্ধান করে”। তিনি চাইতেন তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্যচর্চার এই সুকুমার দিকটি রপ্ত করুক এবং সমাজের কাছে পৌঁছে দিক।
শরীরচর্চা, শারীরশিক্ষাকে রবীন্দ্রনাথ কি চোখে দেখতেন, কতটা ভালবাসতেন এবং গুরুত্ব দিতেন সে সম্পর্কে জানতে গেলে ১৯৩৮ সালের কংগ্রেস অধিবেশনের কথা বলতেই হয়। ১৯৩৮ সালের অধিবেশনের আগে Basic National Education এর সিলেবাস প্রকাশ করার জন্য কবির মতামত চাওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে, “শিক্ষার মধ্যে ক্রীড়ার স্থান বড়ো”। কিন্তু তা এই শিক্ষা পরিকল্পনায় বাদ পড়ল। বরং Basic Education সম্বন্ধে যা প্রকাশিত হল তা রবীন্দ্রনাথের এ সম্পর্কে মতামতের পরোক্ষ সমালোচনা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে সারা ভারতবর্ষের কল্যাণে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু গ্রাহ্যতা পায় নি। তবে তাঁর নিজের প্রতিষ্টান শান্তিনিকেতনে তিনি এর প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। শান্তিনিকেতনে শরীরচর্চা করানোর জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষকদের দায়ীত্ব দেওয়া থাকত শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় প্রতিষ্টার প্রথম দিন থেকেই। এমনকি Director of Sports নামে একটি পদেরও উল্লেখও আমরা ১৯৩০-৩১ সাল থেকে পাচ্ছি। প্রতিযোগীতামূলক সভ্যতায় খেলার প্রবৃত্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য ও উপায়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে না। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “জীবনের সার্থকতার চেয়ে বস্তুর প্রয়োজন অত্যন্ত বেড়ে উঠেছে। তারই জন্যে প্রতিযোগীতা দ্রুত লয়ে চলেছে জলে, স্থলে, আকাশে, কে কতটুকু এগিয়ে যাবে। কতটুকু বেশি অধিকার করবে তারই চলছে প্রাণান্তকর চেষ্টা। যে সমাজ মানুষের জীবন এমন তীব্রভাবে জীব প্রবৃত্তকে নির্ভর করে আছে সে সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থায় খেলার প্রতিযোগীতার বাস্তবঅ উদ্দেশ্য সঙ্গতভাবেই নির্দিষ্ট হয়েছে। সেই সমাজে কর্মের লক্ষ্য ও খেলার লক্ষ্য অভিন্ন”। ১৯৩৯ সালে মহাজাতি সদনের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে জওহরলাল নেহরু কলকাতায় আসেন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। নেহরু এর পরেই চীনে যাচ্ছেন কবি তাঁর কাছ থেকে শুনলেন। তখন তিনি নেহরুকে এশিয়ার সমস্ত দেশগুলিকে নিয়ে “Asiatic Unity” গড়ে তোলার কথা বিস্তারিত ভাবে বললেন এবং এর প্রয়োজনীয়তার কথাও বোঝালেন। রবীন্দ্রনাথের এই স্বপ্ন নেহরুর মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে নেহরু এশিয়াটিক কনফারেন্স করেন। ওই কনফারেন্সেই প্রস্তাব আসে “এশিয়াটিক গেমস” করার যাতে এশিয়ার সমস্ত দেশ একজায়গায় এসে মিলিত হতে পারবে, খেলাধুলা করতে পারবে, নিজেদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান করতে পারবে, নিজেদের ঐতিহ্য পরম্পরাকে তুলে ধরতে পারবে, সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করতে পারবে। অধিবেশনেই ঠিক হয় গেমসটির নাম হবে “এশিয়ান গেমস্” এবং দিল্লীতেই ১৯৫১ সালে এর আয়োজন হবে। রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলা ছোটবেলা থেকেই শুরু করেন। পরে যৌবনে ও পরবর্তী বয়সেও এগুলির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধ ‘বাবাকে যেমন দেখেছি’-তে লিখছেন, “বাবার কর্মশক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে জন্মেছিলেন। ছেলেবেলায় আমার সেজো জ্যাঠামশাইয়ের তত্ত্বাবধানে যে শরীরচর্চার ব্যবস্থা ছিল তাতে বাবার বিধিদত্ত স্বাস্থ্য ও শক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। অন্যান্য ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পেশাদার পালোয়ানের কাছে কুস্তিও শিখতেন। এইসব কারণে যুবা বয়সে বাবার স্বাস্থ্য ছিল দেখবার মত। যেখানেই যেতেন তাঁর দেহের শ্রী ও মুখের লাবণ্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত”। বিশ্বভারতীর ভূতপূর্ব শারীরশিক্ষা অধিকর্তা সুবোধ নারায়ণ চৌধুরি লিখছেন, “নানাবিধ খেলাধুলা, ব্যায়াম, কুস্তি, সাঁতার, ঘোড়ায় চড়া, জিমন্যাষ্টিক, শরীরতত্ত্ব, ভোরে স্নান, সপ্তাহে একদিন মালিশ সহ স্নান, এগুলি ছিল তাঁর শারীরশিক্ষারঅঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘজীবনের কৃতিত্ত্বের পিছনে ছিল কঠোর নিয়মনিষ্টা এবং পরিশ্রম। যে সুগঠিত দেহ ও সুস্বাস্থ্যের বলে তিনি জীবন ভোর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পেরেছিলেন, পৃথিবীব্যাপী খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন, সে সকল দেহ ও স্বাস্থ্যের ভিত পাকা হয়েছিল তার বাল্যকালে নানারকম ব্যায়াম চর্চার ফলে”। যৌবনোত্তরকালে নিয়মিত যোগ অভ্যাস ও ধ্যান তাঁর জীবনকে একটা নির্দিষ্টতা দান করেছিল। এই শারীরশিক্ষাকে তিনি তাঁর দেশবাসীর কাছে ছড়িয়ে দেবার জন্য ব্যাপকভাবে চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর বিভিন্ন লেখা কবিতা-প্রবন্ধ-গান প্রভৃতির মধ্যে আমরা শরীরচর্চার উল্লেখ পেয়েছি। তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য এবং চিঠি-পত্রের মধ্যেও এই বিষয়ের কথা বিস্তারিত ভাবে বলা আছে। রবীন্দ্রনাথের মত মানুষও যে এই বিষয়টাকে নিয়ে এত ভাবনাচিন্তা ও কাজ করেছেন তা সকলের দৃষ্টিগোচর হবে এবং তা দিয়ে যদি সমাজের এতটুকু উপকার হয় তাহলে আমার এই প্রবন্ধ লেখা সার্থক হবে। ঋণ: রবীজীবনী – প্রশান্ত কুমার পাল। রবীন্দ্রজীবনকথা – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। সুবোধনারায়ণ চৌধুরি – রবীন্দ্রনাথ ও শারীরশিক্ষা। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর – পিতৃস্মৃতি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register