Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
গল্পে অঞ্জলি দে নন্দী, মম

গুপ্তধন

প্রবল বন্যা। সারা এলাকা ভাসছে। দিনে একবার করে একটি করে নৌক আসছে... যত জন তাতে ধরছে, তাদের নিয়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে আসছে। গাছের ডালে ডালে ডালে বসে বসে বসে দিনরাত কাটাচ্ছে। নৌক যে কখন আসবে? উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। কতজন অসহায় ভাবে প্রাণ হারালো! একে অপরের মৃত্যু শুধু চেয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে। কেউই কাউকে বাঁচাতে পারছে না, হায়! ...
নৌকোয় করে যাবার সময় একটি তরুণ ছেলে কখন যে নৌকোর কিনারা থেকে ঝপাত করে জলে পড়ে গ্যালো, কেউই টের পেলো না তা; ঝড় চলছে। উথাল পাথাল ঢেউ। নৌকোর গায়ে আছড়ে পড়ছে। ছেলেটি প্রচন্ড ঢেউয়ের টানে হাবুডুবু খাচ্ছে। কাউকে ডাকারও অবকাশ পাচ্ছে না সে। দু হাত তুলে শূণ্যকে ধরতে চাইছে। নৌকোর থেকে ওর গতি অধিক...
যুঝতে যুঝতে যুঝতে ও এসে ঠেকলো এক জঙ্গলের ধারের এক বৃক্ষে। নদীটি বনের গা ঘেঁষেই বয়ে যাচ্ছে। একটি গাছ হেলে পড়েছে। সেটি জলের মধ্যে, নদীর ভেতরে বেশ খানিকটা এসে পড়েছে। তাই ছেলেটি ওটিতে আটকে গ্যালো। ওটিকে ধরে সে এগিয়ে গ্যালো। অরণ্যের মাটিতে গিয়ে পা ফেললো। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঘন জঙ্গলে এক ও। ও এগোতে লাগলো...ঝিঁঝিঁ ডাকছে, ক্রমাগত, না থেমে...ওদের ডাকায় ফুলস্টপ নেই...জোনাকীগুলো যেন তাকে পেয়ে আলোর আড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। কয়েকটি নিশাচর বিহঙ্গ ডানার ঝটপট শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে। কেউ বা ওর গায়েই ঝাপটা মেরে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। পেঁচা ইঁ... হিঁ... হিঁ .... করে হঠাৎ হঠাৎ হঠাৎ করেই ডেকে উঠছে; ওরা যেন সবাইকে তার আগমনের জন্য বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে। যাক- এবার ও এসে পড়লো একটি ভাঙা, পোড়ো মন্দিরের কাছে। ও আসতেই এক গাদা বাদুড় ফটাফট করে মন্দির থেকে বেরিয়ে উড়ে পালালো। এরপর ও আন্দাজ করলো মন্দিরের পাশে একটি বুজে যাওয়া কুও রয়েছে। বিটপির ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু চাঁদের আলো আসছে, তাতেই আবছা দেখতে পাচ্ছে। ও কুওর কাছে গ্যালো। দেখলো এর গায়ে, দেওয়ালে, একটি ধধরা, উই পোকায় খাওয়া ছোট্ট দরজার মত কিছু একটা? ও সেটিকে পায়ে করে ধাক্কা দিল। ওটি ভেঙে পড়ে গ্যালো। ও দেখলো যে ভেতরে সুড়ঙ্গ...ভয়ে ভয়ে ভয়ে ঢুকলো! .....এগোচ্ছে... এবার দেখলো এটি মাটির গভীরে পৌঁছে গেছে। ও হরকিয়ে হরকিয়ে হরকিয়ে চলেছে... অবশেষে গিয়ে ঠেকলো একটি বিরাট রুপোর গেটে। ও পা দিয়ে ধাক্কা দিল। বন্ধ গেট খুলে গ্যালো। গেটের দু পাল্লার মাঝে আটকানো তালাটা ঝনঝন করে খসে পড়লো। সে ঢুকলো। এখানে একটি বিরাট পুরোনো রাজপ্রাসাদ। বোঝাই যাচ্ছে না যে এটি মাটির গভীরে, অনেক নীচে। ও এগিয়ে যাচ্ছে... এখানে ও দেখলো কয়েকটি সাপ একটি বিশাল রজত কুম্ভকে জড়িয়ে রয়েছে। ওদের মাথা থেকে সুন্দর আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। সে দেখলো যে সর্ব দিক আলোয় ঝলমল করছে। ও যেতেই সর্পের দল ওর পায়ে এসে মস্তক ঠেকলো। ও গিয়ে কলসের ভেতরে দেখলো প্রচুর মানিক্য। সে সম্রাটের সম্পদের অধিকারী হল।
পরে সে ওই ভূমি মধ্যস্থ অট্টালিকা থেকে বের হল। তখন সকাল হয়ে গেছে। ও গাছে উঠে ডাব পেড়ে তার জল পান করলো। এ গাছ ও গাছ থেকে ফল পেরে পেরে পেড়ে খেলো। কেউ কোথাও নেই। জনমানব শূণ্য অরণ্য। কয়েকটা বন্য প্রাণী ঘোরাঘুরি করছে। তবে এর কেউই হিংস্র নয়। তাই কেউই তার ক্ষতি করলো না। এখানে বহু ফনি আছে। এরাও কেউ ওকে দংশন করলো না।
পরে ও এই জঙ্গল থেকে বের হয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। নদীর জলে সাঁতার কাটতে লাগলো। অনেকদিন পর ও ওর নিজের জায়গায় এসে পৌঁছলো। তখন বন্যা আর নেই। যে যার বাড়ি মেরামত করছে। ও গিয়ে ওর বাবাকে বলল - ওই গুপ্ত ধনের কথা। সেও তখন বাড়ি মেরামত করছিল। বাবাতো গাছের ডালে কাটিয়েছে, বন্যার সময়। পরে অবশ্য নৌকো করে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খুব কেঁদেছিল। এসব কথা বাবাই বলল ওকে। মা তো ওর শিশুকালেই মারা গিয়েছিল। তাই এরা দুজনে দুজনের বাঁচার প্রেরণা।
তো বাবা ও ছেলে মিলে এবার একটি কলা গাছের ভ্যালা বানিয়ে, সেটিতে চড়ে, বেয়ে বেয়ে বেয়ে ওই অরণ্যে গ্যালো। পরে ওই ভূগর্ভস্থ প্রাসাদে।
এরপর ওরা এই জঙ্গলে একটি নতুন প্রাসাদ বানালো। অন্যদের নিয়ে এলো। বাড়ি বানিয়ে দিল। এখানে নদীর ধারে একটি নগর পত্তন করলো। বাজার, দোকান, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... যা কিছু বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয়, তা সবই হল, একে একে একে এখানে। সবাই মিলে মিশে সুখে বাস করতে লাগলো......এই নগরের নব নাম হল, " রজত নগর " .... কারণ, ছেলেটির নাম যে রজত...........
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register