Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

বইমাত্রিক রাহুল গাঙ্গুলি

maro news
বইমাত্রিক রাহুল গাঙ্গুলি

হারানো বেহালার নাবিক : বৃত্ত-সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণ

বই : হারানো বেহালার নাবিক কবি : সজল দাস প্রকাশনা : আকাশ, ২০১৭ প্রচ্ছদ : চারু পিন্টু
সাধারনতঃ আমরা অনেকেই যেকোনো বইয়ের প্রচ্ছদ ও দু-চার পাতা উল্টে, একটি বইয়ের প্রাথমিক বিবেচনা করি।কিন্তু, এই বইটি নিয়ে আলোচনা'য় সর্বপ্রথম ফ্যাক্টরটি হলো : দু-চার পাতা উল্টে বইটিকে রিজেক্ট করা যায় না; আর দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি হলো : পুরো বইটি পাঠের পর প্রচ্ছদটি দেখলে, তবেই তার প্রকৃত রূপটি অনুভব করা সম্ভব।অতএব, আমরাও এক্ষেত্রে প্রচ্ছদটি সবার শেষেই দ্যাখা ও বোঝার চেষ্টা করবো।বইটি সর্বসাকুল্যে মোট দু ফর্মা'র; অর্থাৎ ৩২ পাতা'য় গোটা বইটির মোট যাত্রাপথ।
বইটির প্রতিটা স্তরেই বলতে গেলে : নানান্ মাত্রা ও নানান্ দ্শ্য ~ নানান্ আঙ্গিকে ছড়িয়ে আছে।কিছু পাঠকের কাছে এ য্যামোন আবিষ্কার; তেমনি কিছু পাঠকের কাছে সীমাবদ্ধতা।বইটির শুরুতেই; যেখানে উৎস্বর্গলেখাটি থাকে, কবির অমোঘ উক্তি : "তোমার প্রথম চিঠি / ও / আমার প্রথম ভুলকে"।বরং বইটির ঋণস্বীকার করা হয়েছে ~ সমিধ ও আচার্য।শুরুতেই মূল কবিতা'র পরিবর্তে রয়েছে একটি উপকবিতা; "ছড় টানতে টানতে / বেহালা হয়ে উঠলো যে বাদক // কোনো এক পাখিজন্মে / এই গাছেই শিস দিয়েছিল সে // আর এ জন্মে, কাঠ / তার প্রতিশোধ নিচ্ছে"। মোট চোদ্দটি ঝুরো কবিতা, চারটে সিরিজ কবিতা এবং তিনটি টেক্সট মিলিয়ে এই বইটি এবং বেশিরভাগ কবিতাই শিরোনামবিহীন।ঝুরোকবিতাগুলি ~ প্রতিটি ভিন্ন শৈলী ও স্বতন্ত্র, য্যানো একটি কেন্দ্র থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষণের নানান্ প্রস্তুতি ও মাত্রা শেষে পূর্বোক্ত অবস্থানে ফিরে আসা এবং সেই দ্যাখাটির প্রতিমুহূর্তের ডকুমেন্টেশন। "নৌকা টলে যাবার সময় / দাঁড় ছাড়া আর কেউ পাশে থাকবে না তোমার / হয়তো দাঁড়ও না।স্রোত থেকে / তুমি মাছ তুলে নিতে চাইবে।স্রোত থেকে / হয়তো জলকেই আলাদা করতে চাইবে / কিন্তু পারবে না // শুধু একটা বন্য জীব / নৌকোয় উঠতে পারছে না দেখে / মনখারাপ হয়ে যাবে তোমার" ~ এটি এ-বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা; নৌকা একটি কেন্দ্রবিন্দু অবস্থান থেকে কীভাবে বিভাজিত হতেহতে ভিন্ন আরেকটি কেন্দ্রীয় অবস্থানে পর্যবেক্ষণ, তৃতীয় সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।বইটির পাঁচ নং কবিতাটিও যদি দেখি ~ "তোমার আঙুলে তার নড়ে উঠল / যেন সেলাই ফুটে উঠছে / সুতো ভেদ করে // প্রিয় সুচ, এভাবে বোতাম কোরো না" চারটি সিরিজ কবিতার দুটি কবিতা শিরানামবিহীন এবং দুটি শিরোনামযুক্ত।সেখানেও রয়েছে, এক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন বোধের ডকুমেন্টেশন; যা নিশ্চিতভাবে পাঠককে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক চেতনাপারের সময়-অভিমুখে।একটি শিরোনামবিহীন সিরিজ থেকে (ক্রমিক পর্যায়ে বইটিতে গ্রন্থিত দ্বিতীয়) এরকমই আংশিক পাঠপর্ব এখানে রাখলাম ~ "আয়না পেরিয়ে যেখানে চিরুনির দাগ // সিঁথির মতো রাস্তা হচ্ছে কোথাও // অ্যাম্বুলেন্স যতোটা সাদা / এ সিঁদুর ততোটা পারেনি"।আমরা অনুভব করতেই পারি, চেতনার বিকেন্দ্রীকরণ পরবর্তী এই দ্যোতনা কিভাবে পাঠক্রমকে নাড়া দিচ্ছে; পাঠচেতনাকে প্রভাবিত করে ভাবতে বাধ্য করছে ~ যা এপারে দেখা যায়, সমান্তরালভাবে তার প্রতিফলিত-ওপার। গ্রন্থিত তিনটি টেক্সট'ও বইটির অবশ্যপাঠ্য।কারণ, প্রকাশ করার গণিতবিন্যাসটি আলাদা হলেও, ভিতটি কিন্তু সেই কবিতাভাষার ফর্মটির অনুসারী; যেখানে কান্ডটির কাঠামোকে আবর্তিত করে রাখা কেন্দ্রবিন্দুর স্ব-ঘূর্ণীয়মান প্রকাশ এবং তার আপেক্ষিকতা পরিবর্তনে নতুন প্রকাশ।এখানে, গ্রন্থিত শেষ টেক্সটি থেকে কিছুটা ~ "চুপ করে বসে থাকার ভিতর একটা জানলা আছে।দৃষ্টি পিছলে পড়ে থাকে কোনও হাত।এখান থেকেই আমাদের বর্ষাকাল শুরু।পাল তুলে ছাতা ভেসে যায় একে একে।হয়তো, স্কুল-ফেরতা মেয়েটির মতো, নৌকাটি শুধু জলকেই ভালোবাসবে এরপর।হাওয়া দিলে দিক ফেটে পড়বে চুলের শব্দে।আর তুলো থেকে বালিশের পথ তুমি কাউকে বোলোনা।বোলো না বালিশ ভিজলে তুমি কী করো।বরং সাঁতার ভেবে শাওয়ারের নীচে দাঁড়াও।ঘুড়ির নীচে দাঁড়াও। // দেখ, রোদ্দুরে কেমন ভিজে যাচ্ছে তার ডালপালা... "
পরিশেষে যেটুকু বলার; তা হলো এই কেন্দ্র থেকে বিকেন্দ্রীকরণ মাধ্যমে যেরকম তৃতীয় সত্ত্বার প্রয়োজনীয়তা ~ আমাদের সকলের চেতনায় গুরুত্বপূর্ণ।হয়তো এইসকল কবিতায়, সরাসরি নিরীক্ষাধর্মী নতুন ধারার অনভ্যস্ত প্রয়োগ কম।হয়তো ভাবানুবেগ্ পরবর্তী অন্যসকল গতিশক্তি'র ব্যবহারিক প্রয়োগ কম; তবুও যাঁরা ভিন্ন ও স্বতন্ত্রস্বর খু্ঁজে চলছেন : তাঁদের অনভ্যস্ত ধারার সমান্তরাল কিছু অনুসন্ধানে, বর্তমান কবিতা'র বইটি কয়েককদম এগিয়ে যেতে অবশ্যই সহায়তা করবে।ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাই কবি সজল দাস'এর প্রতি, সাথে আপনাদেরও।
আলোচনা : রাহুল গাঙ্গুলী
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register