Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

দেশের কথা অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
দেশের কথা অঞ্জলি দে নন্দী, মম

ভারত

ভারতের, বাংলার, হুগলী জেলার, একটি গ্রাম। নাম, চৈ ত ন্য বা টী। দামোদর নদের তীরে। তার পাশের গ্রামের নাম, নিশ্চিন্তপুর। নদের বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দু গ্রামের সংযোগস্থলে একটি মাটির বাঁধ। এটিকে আমরা বড় বাঁধ বলেই ডাকি। আমাদের গ্রামে আসার ঠিক একটু আগেই, নিশ্চিন্তপুরের ওপরে, একটি বিরাট মা শ্রী মনসা দেবীর গাছ। প্রতি আট - ই আশ্বিন, এখানে '' বাঁধের মনসার ঝাঁপানের '' মেলা হয়। খুব ধুমধাম করে, আমরা কয়েকটি গ্রামের মানুষজনমিলে, এখানে পূজো করি। অনেক পুরোনো আমলের এই পূজো। এই মনসা গাছটি বাঁধের এক ধারে। সবাইই পাশ কাটিয়ে, ওই পথটুকু পার হয়ে। অতি সম্ভ্রমের সঙ্গে, মাকে স্মরণ করেও সকলেই। মা খুব জাগ্রতা! আমার ঠাকুমা আমাকে একদিন গল্প বলেছিলেন, এই মা মনসার অস্তিত্ব কত সত্য, তা নিয়ে। তিনি বলেছিলেন , '' তখন এই জায়গাটায় কোনও বাঁধ ছিল না। একটু দূরে যে উঁচু পোড়ো, অব্যবহার্য রাস্তাটা এখন দেখতে পাস, ওখান দিয়ে মার্টিন ট্রেন চলত। এখন তো তা আর চলে না, তাই ওখানটা পড়ে আছে। এখনের বড় বাঁধের জায়গায়, ইংরেজ বাঁধ সাহেব, দেখতে এসেছেন। দেখেটেকে বলে জানিয়েছেন যে, ওই বিশাল মনসা গাছটা কেটে ফেলে, বাঁধ তৈরী করতে হবে। না হলে অসুবিধা হবে। সব ভারতীয়রা বারণ করেছিল। কিন্তু সাহেব কোনও কথায় কর্ণপাত না করে, ওই আদেশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। হল কী? একটু দূরে যেতেই অনেকগুলি সাপ ফণা তুলে সাহেবের পথ আটকালো। সাহেবের সঙ্গে যে সব ভারতীয়রা ছিল, তারা তখন সাহেবকে বলল যে, তিনি মা মনসার গাছটিকে কেটে ফেলে দিতে বলেছেন বলে, মা মনসা তাঁর রাস্তা ঘিরে রেখেছেন। আর যদি তিনি মত পরিবর্তন না করেন তবে দংশনও করতে পারে, ওই সর্পের দল। তখন, সেই সাহেব আবার ফিরে এসে, গাছটি না কাটার আদেশ দিয়ে গেলেন। বাঁধ হল, কিন্তু মা মনসা বাদ পড়লেন না। " আমার ভাই তখন বেঁচে, একদিন রাত্রে কোলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস করে ফিরছে। রাস্তায় গাড়ীর গোলযোগ থাকায় বেশ অনেকটাই রাত হয়ে গিয়েছিল, ওর বাড়ী, চৈ ত ন্য বা টী তে ফিরতে। ও এসে বলেছিল যে, সে মা মনসার দেখা পেয়েছে। লাল পাড়, সাদা, শাড়ী পড়ে, একগলা ঘোমটা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তখন সেই সময় আমার ভাইয়ের কথায় কিছু বলিনি। কিন্তু, আমি বহু পুরোনো মানুষদের মুখে শুনেছিলাম যে, অনেকেই, রাত্রে, যারা ওখান দিয়ে আসা-যাওয়া করত, তারা আমার ভাইয়ের মতো ই মা মনসার ওই রূপ দর্শন করেছে, কিন্তু তারা কেউই আর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি। আমি তখন মা মনসাকে মনে মনে স্মরণ করে বললাম যে, তিনি যেন আমার ভাইকে দীর্ঘ আয়ু দেন। কিন্তু মুখে কিছুই বললাম না। আমার ভাইও কিন্তু, ওই মায়ের দর্শন পাওয়ার পরে, আর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি। এখনোও প্রতি ৮ই আশ্বিন, ওখানে, মায়ের পূজো ও ঝাঁপান হয়.......
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register