Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২১৪)

maro news
দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২১৪)

পর্ব - ২১৪

সবিতা পিসি বললেন, হ‍্যাঁ রে শ‍্যামলিমা, তুই নিজেও ঘুমোবি না, আর আমাকেও ঘুমোতে দিবি না?
শ‍্যামলী বলল, দেবো নাই তো! তুমি আগে সেই লোকটার গল্প বলো!
কি পাগল দ‍্যাখো! কি গল্প বলব?
উঁহুহু পিসি, আমি জানি, তুমি ভালবেসেছ। ভালবাসার মানুষের কথা বলো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবিতা বললেন, ভালবাসা টাসা অল্প বয়সের ব‍্যাপার। এই বয়সে এসে একটা বোঝাপড়া।
তা পিসি সে কি বোঝাল, আর কি পড়াল? শ‍্যামলীর চোখে দুষ্টু হাসি।
সবিতা বললেন,  শোন্ শ‍্যামলিমা, সে মাঝবয়সী একটা ব‍্যবসাদার লোক। এই কোর্ট চত্বরে কত লোক আসে। কেউ মামলা ঠুকতে আসে, কেউ মামলার নোটিশ পেয়ে তেতোমুখে আসে। কেউ দিনের পর দিন মামলার ফয়সালার জন‍্য উকিলের পিছুপিছু ঘুরে, হাক্লান্ত হয়ে আসে। কেউ ঘুষের টাকা যোগাড় করতে পারছে না বলে, হন‍্যে হয়ে ঘুরেও রায়ের নকল পাচ্ছে না বলে, আসে। এইসব কত রকম লোকে তামার আংটি সীসের আংটি শাঁখের আংটি শ্বেতবেড়েলা মূল, অশ্বগন্ধা মূল, ধনদা কবচ, সর্বসিদ্ধি কবচ, শ্রী যন্ত্রম্, কত কি খুঁজে বেড়াচ্ছে। এরাই এখানকার ভাতের হোটেলে খাচ্ছে। যে মামলা ঠুকছে, সে খাচ্ছে। যার বিরুদ্ধে মামলা সেও খাচ্ছে। সাক্ষী খাচ্ছে। ময়লা কোট পরা উকিলও খাচ্ছে।
শ‍্যামলী বলল, বাঃ পিসি, তুমি তো দারুণ কথকতা করতে পার!
সবিতা হাসেন। ওরে আমি সবে গতকাল এখেনে এসেছি। এইটুকু সময়েই কত যে জিনিস চোখে পড়ল! জানিস্, জমি বাড়ির মামলা হয় ভায়ে ভায়ে, আর খোরপোশের মামলা স্বামী স্ত্রীতে। এই নিয়ে কোর্ট চলছে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। এই করে পেশকার বাবুর বাড়িতে মোজাইক হচ্ছে, নতুন ফার্ণিচার আসছে। উকিলবাবু গাড়ি কিনছে, কেউ বাড়তি মেয়েমানুষ পুষছে।
কোর্টের পাশেই সিদ্ধেশ্বরী কালিমন্দির। যে মামলা করছে সে ঠাকুরের প্রণামীর থালায় ঠং করে পয়সা ছুঁড়ে বলছে, মা আমায় জিতিয়ে দাও মা। আর যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, সেও ঠাকুরের কাছে কাঁদছে, মা, মামলা থেকে নিষ্কৃতি দাও মা। উকিল ঠাকুরকে বলছে আজ আবার যেন তারিখ পাই মা। পুলিশ ঠাকুরকে বলছে আমার আজ মোটা অঙ্কের ঘুষ চাই মা। মা সিদ্ধেশ্বরী। তিনি সৎ এরও মা। অসৎ এরও মা।
এই কোর্টে ছোটভাই বড়ভাইয়ের বাপ মা তুলে গালাগালি দিচ্ছে। বড়ভাই ছোটভাইকে অভিশাপ দিচ্ছে, মুখে রক্ত উঠে মরে যা। অথচ দুজনে এক মায়ের মাই খেয়ে বড় হয়েছে, এক বাপের হাত দুজনে ধরে ঠাকুর দেখে হাওয়াই মিঠাই কিনেছে।
শ‍্যামলী অবাক হয়ে শুনছে। পিসি এত দেখেছে!
পিসি বললেন,  স্বামী বৌকে খোরপোষ দেবে না ফন্দি করে, উকিলকে যে টাকা গুঁজছে, তার অর্ধেক টাকা দিলে বৌটা আর ঝামেলা করে না। আবার, বৌটা উকিলের মুহুরীকে যতটা মধু ঢেলে দরদ দিয়ে কথা বলে, তার অর্ধেকটুকু সোহাগী গলায় কথা বললে স্বামীটা বৌয়ের ন‍্যাওটা হয়ে থাকত।
শ‍্যামলী বলল, এতো সব চারপাশের গল্প। লোকটার গল্প কই?
সবিতা বলল, গাঁ ঘরে যাত্রাপালা হত। ঝমর ঝমর বাজনা। এই কথা সেই কথা। আমরা তখন কুচো কুচো বাচ্চা। ড‍্যাবডেবিয়ে দেখতাম। সারা বিকেল হুটোপুটি করে চোখে ঘুম আসত জড়িয়ে। তারপর অসুর আর দেবী আসার আগেই ঘুমিয়ে কাদা!
শ‍্যামলী বলল, তোমার মনের মানুষের গল্প না শুনে আমি ছাড়ছি না।
পিসি বললেন, মনের মানুষ মনেই আছেন। তাঁকে সেখানেই পুজো করি। ঘরকন্নায় সব সময় টানাটানি করতে নেই। ঘরকন্নায় বোঝাপড়া, মিলমিশ, আপোষরফা। মনের মধ্যে নিত‍্যলীলা।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register