Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (অন্তিম পর্ব )

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (অন্তিম পর্ব )

ইচ্ছামণি

পর্ব ৩৮

অতীন চমকে উঠল মেয়ের কথায়। “মায়ের গায়ে অনেক জ্বর সোনা। তাই ভুল বকছে।”
“ইচ্ছা, আমায় চা করে দাও। ওদের দুজনের টিফিন গুছিয়ে দাও। হয়ে গেছে? বাঃ! আমার মাথার চুলে চিরুনি দিয়ে একটু বিলি কেটে দেবে? আচ্ছা, এখন থাক। দাদা অফিসে বেরোলে তারপর দিও।”
“মাম্‌কে স্কুলে পাঠিয়ে আমি বসছি তোমার পাশে। মাথায় আরাম দিয়ে দেব।”
“তুমি অফিস যাবে না? তুমি না গেলে ইচ্ছামণি আসবে না। সে সব কাজ লুকিয়ে করতে পছন্দ করে। পাথরটা আমার হাতে দাও না। কোথায় সরিয়েছ?”
“ওটা যেখানে ছিল, সেখানেই আছে। প্লীজ় একটু শান্ত হয়ে শোও। গুবলু বাথরুমে। ওকে রেডি করে আগে বাসে তুলে দিয়ে আসি। আমি আজ অফিস যাচ্ছি না। রান্নার লোক দেখতে হবে। তোমায় ডাক্তার দেখাতে হবে। আচ্ছা, এত যখন কাজে অনীহা, সংসার করতে এসেছিলে কেন? চারটে লোক রাখার অবস্থা যে আমার নয়, তার ওপর ট্রাস্নফারেব্‌ল জব- এসব তো তোমরা জানতে।”
“একটা কর্মব্যস্ত জীবনই তো আমি চেয়েছিলাম। অফিস, ট্যুর, ক্লাব, বাড়ি..। পাইনি। যে কাজে হাত দিয়েছি তাতেই বাধা, ব্যর্থতা। ইনভেস্টমেন্ট জলাঞ্জলি, মেয়ের সূত্র ধরে অভিনয় করতে গেলাম। বার বার নিজেকে প্রুভ করেও দেখলে তো কীসব ছ্যাঁচড়ামি। তুমিও কোঅপারেট করো না। শেষ আশ্রয়-লেখা। এই একটা ব্যাপারে আমি বছরের বছর কনসিসটেন্ট ছিলাম। লেখাগুলো যখন আমার খাতাতেই কনফাইন্ড ছিল, তখন এক ধরণের অশান্তিতে ভুগেছি। আর পত্র-পত্রিকায় লিখতে গিয়েও দেখছি, সেখানেও দলাদলি নোংরামি। কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। একটার পর একটা – কোনওটা পড়াই হয় না, কোনওটা মনোনীত হয়েছে চিঠি দেওয়ার পরেও ছাপা হয় না। ছোট পত্রিকাগুলোয় আবার অন্যরকম পলিটিক্স।”
পুরোনো শখ সাম্প্রতিকতম নেশায় রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে রুমা লেখালিখি নিয়ে হাহুতাশ ছাড়া কোনও কথা শুরুও করে না, শেষও করতে পারে না। অতীন ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “চুপ চুপ। সব জানি। কথাগুলো অনেকবার শোনা। তুমি বিশ্রাম নাও।”
“আমি টায়ার্ড। তাই সম্পূর্ণ বিশ্রাম চাইছি। তুমি আমার ডামি ইচ্ছামণিকে নিয়ে সংসার করো, আর আমায় ইউথানাশিয়া...”
প্রলাপ শোনার সময় নেই। মেয়েকে স্নান করিয়ে খাইয়ে পোষাক জুতো পরিয়ে সাইকেলে করে বড় রাস্তায় নিয়ে গিয়ে বাসে তুলে দিয়ে আসতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অতীন ফেরার পথে গলদা চিংড়ি কিনল সাইকেল আরোহী এক মাছওয়ালার কাছে। রুমার দারুণ প্রিয়। জম্পেশ করে আজ নিজেই রাঁধবে। রুমা বড় চিংড়িকে ঠিকঠাক মর্যাদা দিতে মালাইকারি বানায়। কিন্তু নারকেল কিনতে গেলে বাজার যেতে হবে যা এখন সম্ভব নয়। এমনিই পেয়াজ রসুন দিনে কষে রান্না করবে। বাইরে থেকে গ্রীলের গেটে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে গিয়েছিল। গেট খুলে সোজা রান্না ঘরে ঢুকল অতীন। দেখে সেখানে রুমা!
এই প্রলাপ বকা জ্বর নিয়ে অ্যাকোয়াগার্ড থেকে জল ভরছে বোতলে। মুখ চোখ শান্ত। শ্রান্তও।
“তুমি উঠে এলে কেন? বললাম না, আজ আমি অফিস যাব না। ফোন করে দিচ্ছি। চিংড়ি এনেছি। আজ হাম রাঁধেঙ্গে। তোমায় কিচ্ছু করতে হবে না আজ”।
“আজ নয় তুমি মাছ রাঁধলে, কিন্তু অন্যান্য দিন আমি না করলে কে করবে? মরে মরেও করতে হবে। ইচ্ছাকে তো তুমি তাড়িয়ে দিয়েছ। দু চারদিন নিজের জগতে নিজের আনন্দে ছিলাম। তোমাদের কোনও অসুবিধা ঘটাইনি। আমি তো ইচ্ছা করেই নিজেকে ভুলিয়ে রেখেছিলাম। কী লাভ হল বল তো আমার ভুল ভেঙে?”

সমাপ্ত

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register