- 40
- 0
মকবুল হুসেনের মা জুনৈব মারা যান অতি শৈশবে। পিতা ফিদা হুসেন আবার বিয়ে করেন। এবং ইন্দোর চলে আসেন। মকবুল সেখানে স্কুলে পড়াশুনা করেন। ২০ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে তিনি মুম্বাই(বোম্বে) আসেন। বোম্বেতে জে জে স্কুল অব আর্ট এ ভর্তি হন। ২৫ বছর বয়সে, ১৯৪১ সালে বিয়ে করেন। প্রথম দিকে সিনেমার হোর্ডিং বানিয়ে জীবিকা শুরু করেন, পরে একটা খেলনা বানানোর কোম্পানীতে চাকরি করেন। সেখানেই নকশা বা ডিজাইন বানানো তার অভ্যেস হয়। তার রোজগার ছিল খুব কম। সেখানে তিনি বিজ্ঞাপন জাতীয় বলিউডের সিনেমা পোস্টারের কাজে যোগ দেন। তিনি বলেছেন, প্রতি স্কোয়ার ফুট চার থেকে ছয় আনা পেতেন। একটা বিলবোর্ড বা ব্যানার সাধারণতঃ ৬ বাই ১০ ফুটের মাপে হত। অনেকে কখনো পয়সাই দিতনা। সময় পেলে তিনি তখন সুরাট, বরোদা, ও আহমেদাবাদ যেতেন দৃশ্যচিত্র আঁকার জন্য। কম পয়সা পেতেন বলে কখনো খেলনা কোম্পানীতে ডিজাইন বা নকশা এঁকে উপায় করতেন। ১৯৪৫ সালে বোম্বে আর্ট সোসাইটি তার ছবি মুম্বাইতে প্রদর্শন করায়।
এই সময়টা এমন একটা সময় যখন বেঙ্গল স্কুল অব আর্ট জাতীয়তাবাদী ধারায় এক নতুন ভারতীয় শিল্প আন্দোলন করছিল, সেই সময় মকবুল ও তার তরুণ বন্ধুরা ভারতীয় শিল্পকে আন্তঃর্জাতিক আঙ্গিনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্থানের সৃষ্টি তখন ধর্মীয় দাঙ্গায় প্রচুর মানুষের বলিদান চলে, সম্পত্তির প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন প্রোগ্রেসিভ আর্টিষ্ট গ্রুপ ১৯৪৭ এর ডিসেম্বরে গড়ে উঠে। এই জোটবদ্ধ শিল্পীরা দেখলেন ভারতের নতুন শিল্প তৈরি করার পক্ষে এক শুভলগ্ন। ১৯৫২ সালে মকবুলের প্রথম একক প্রদর্শনী জুরিখে, ১৯৬৪ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কের ইন্ডিয়া হাউসে হয়। ধরা হয় ৬০ ০০০ ষাট হাজার ছবি এঁকেছিলেন আর অনেকগুলি সিনেমা বানিয়েছিলেন। তাকে ভারতীয় অনেক পুরষ্কার - পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষন সম্মান ও পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৬ তে পদ্মশ্রী,১৯৭৩ এ পদ্মভূষণ ১৯৯১ এ পদ্মবিভূষণ সম্মান পান ভারতসরকারের তরফ থেকে।
পঞ্চাশ দশক থেকে সত্তর দশকের শেষ অব্দি তার জীবনের যে কৃষ্টিময় কাজ রেখে গেছেন তাতে ছিল এক মহান শিল্পীর অনবদ্য অধ্যায়। আগামীতে সুযোগ পেলে উদ্যোক্তারা যদি সেগুলির কিছু প্রিন্ট আমাদের দেখান এই প্রজন্ম ও অনেক সমৃদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস। তার বিখ্যাত ছবির মধ্যে দ্য সিক্সথ সিল ও রাগামালা সিরিজগুলি উল্লেখযোগ্য।
ফোর্বস্ ম্যাগাজিন শিল্পী মকবুল
হোসেনকে ভারতের পিকাশো বলে চিহ্নিত করেছিল। আমরা প্রতিবেশী দেশের শিল্পীদের খুব চিনিনা।পাকিস্তানেও একজন পাকিস্তানের পিকাশো আছেন। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমার, চীন, ভূটান ও পাকিস্তান। এশিয়া মহাদেশের সব কটি দেশের সাংস্কৃতিক দেওয়া নেওয়ার মধ্যে আমাদের অনেক বদ্ধ ধারণা ভেঙ্গে যেতে পারে ও আমরা সমৃদ্ধ হতে পারি। আমি ভাবছি, নির্বাচিত কিছু বিশিষ্ট শিল্পীদের আমার পোস্টে কিছুদিন দিতে থাকব। এটা করা দরকার। কারণ শিল্প নির্মান ও তার মোহন প্রভাব জেনে শুনেই আমরা শিল্পীদের সম্মান জানাব ও আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ ভাবনার মঞ্চে স্বাগত জানাব। পাকিস্থানেওনে ও একজন পিকাশো আছে। তার নাম সৈয়দ সাদেকোয়ান আহমেদ নকভি। মুসলিম দেশ গুলি - যেমন পাকিস্তানে, তাদের ধর্মীয় কারণে মানুষের অবয়বের চেয়ে বিমূর্ত বা কোন নকশা/ আলিপনা জাতীয় শিল্প অধিক চর্চা হয়। তাদের মধ্যে নকশা করে লিখন পদ্ধতি যাকে আমরা বলি ক্যালিগ্রাফি- এই চর্চা অধিকাংশ মুসলিম শিল্পীরা করেন। ও ক্যালিগ্রাফিতে মুসলিম দের গুরুত্ব বেশি দেন। সাদেকোয়ান ও তেমন ক্যালিগ্রাফি ও পেইন্টার হিসাবে পাকিস্তানে সম্মানিত তারকা।

0 Comments.