Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

লে ছক্কায় (নির্বাচিত কবিতা) অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
লে ছক্কায় (নির্বাচিত কবিতা) অঞ্জলি দে নন্দী, মম

১। কারণ

বিরাট আঁধার বড় তার অহংকার। তার বৃহত্ত্ব একাকার। অনন্ত তার বিরাটাকার... উচ্চ স্বরে দেয় সে হুঙ্কার। এমন সময় ছোট্ট দীপের আলোখানি নম্র হেসে ডেকে বলে ভালোবেসে, তোমার বৃহতের মাঝে আমার এই ক্ষুদ্র শিখাটিরে
একটু দাও গো ঠাঁই! আমি রশ্মি ছড়াতে চাই শুধুই সাঁঝে। হেসে বলে তখন আঁধার, তোর ওই কিরণ-আঁখিটিরে আমি আপন করে নিলাম রে! তোকে আমার মাঝে ঠাঁয় দিলাম রে! ওরা দুজনে মিলে মিশে আছে। কাছের চেয়েও আরও কাছে। কারণ, ওরা যে একে অপরের পরিপূরক, চিরতরের। ওরা যে উভয়েই উভয়ের অনন্ত বরের।

২। ঢোল গোবিন্দ

ঢোল গোবিন্দ নাম তার। কপালে তিলক আঁকা। বাড়ি দামোদর পাড়। বেচে সে শাঁখা। আবার বাজিয়ে ঢোল শ্রী রাধাগোবিন্দের নাম গানও গায়। বড় মধুর তার ঢোলের বোল। নামাবলি জড়ানো তার গায়। সারাটা দিন সারাটা সন্ধ্যা ধরে গাঁয়ের পথে পথে পথে ও ঘোরে। এসব করে রাতে সে ফেরে তার মাটির ছোট্ট ঘরে। ও চির অকৃতদার। ও বড় দরিদ্র - দীন। তবে শ্রী রাধাগোবিন্দের বরে ওর খাবার অভাব নাই। ওর খড়ের চালের ঘরে আছে বেশ সুখ! ওর যে সুখী, তা ওকে দেখলেই বোঝা যায়। ও সুখী, কারণ, তৃপ্ত ও অল্পেতে তো, তাই। ও সদাই মিষ্ট, হাস্যমুখ। খুব আনন্দেই ওর প্রতিটি দিন কেটে যায়।

৩। নন্দী বাড়ীর দরজা

নন্দী বাড়ীর ইয়া বড় দরজা। তাকে নিয়ে গাওয়া হয় তরজা। শুনে তা সবাই পায় বড় মজা। তার মাথার ওপরে ওড়ে ধ্বজা। দরজার আছে ইয়া বড় দুপাল্লা। ওদুটি বন্ধ আছে দিয়ে এক তালা। ওদের জন্য ঝড়ের বড় জ্বালা! বৃষ্টিরও খুবই অসহ্যের ওরা! ঝড় চায় ভেঙে দিতে তালা আর পাল্লা। বৃষ্টি চায় ভিজিয়ে ওদের শেষ করতে। কিছুতেও আর তা পারে না করতে। অতি মজবুত যে ওরা! ওদের ভেতরে থাকে বাদুড় নিযুৎ, অযুৎ। ওরা আঁধারের দূত। বাড়ীর ভেতরে ঢোকা মানা রোদের। তাই তো বহুৎ মজা ওদের। করি-বর্গাগুলি খুব মজবুত! দিনে ধরে ওগুলিই ঝোলে ওরা। আর কাজ ওদের সারা রাত ওড়া। বাড়ীতে থাকে ওদের সাথে বুড়ো খুড়োর ভূত। সন্ধ্যা হলেই সে, ঝনাক করে খোলে তালা আর দরজা। একসাথে বাদুড় আর সে, বাইরে যায় বেরিয়ে। সারা রাত ঘুরে বেড়িয়ে তারপর সকালে আবার আসে বাড়ি ফিরে। ফের বন্ধ করে খুড়ো ভূত তালা দিয়ে দরজা। সবার বড় কৌতূহল এই দরজাকে ঘিরে। ক্যানোই বা কোনদিনও যায় না ছিঁড়ে, নন্দী বাড়ির দরজার ওপরের ধ্বজা, চির উড়ন্ত? কেনোই বা অতি দুরন্ত ঝড়, বৃষ্টিতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ওই দরজা? রহস্য বড়ই অদ্ভুত! হয় তো বা কারণ ভূত।

৪। মেঘলা

মেঘলা আমেজে আমি ঘুরি ছাদে। সিক্ত পবন বয়। ও তো গা শিরশিরানি। আমার নগর রয়েছে সেজে বহুচ্চ অট্টালিকায়। আধুনিকতার আশীর্বাদে ও কর্মরত রয়। কার্নিশে হেঁটে চলা কবুতরদের বিড়বিড়ানি। ক্রমাগত, বক বুকম কুম... পাশের মন্দিরে ঘন্টা উঠল বেজে। সামনের ছাদে মা আদর করে কোলে থাকা বালিকায়। ওদের কতও মধুর কথা বলা! কতই না ঘনিষ্ঠ চুম! আমি একা দেখি দেখি আর দেখি... দু আঁখি মেলে। মেঘেদের আনাগোনা গগনে। তারই মাঝে আমার দৃষ্টি সুখি। প্রকৃতি দিয়েছে প্রেম ঢেলে। এর সমর্পণ নয় মেকি। আমার মন উর্ধমুখী। এই অপূর্ব স্নিগ্ধ লগনে।

 ৫। বৃষ্টি শেষে দিল্লীতে

বৃষ্টি শেষে, বিকালে। দিল্লীতে আমি এখন, অঞ্জলি, চপ্পল পায়ে চলি মোড়ের সিঙ্গাড়ার শপে। রাস্তায় জল, ছপছপে। আমার হাত পকেট থেকে নিকালে গোটা কতক কয়েন। দোকানিকে দিয়ে বলি, গোটা ছয়েক সিঙ্গাড়া প্যাক করে দিন! এই যে কয়েন, ঠিক করে গুনে নিন! গরম গরম গরম সামশার মোড়া কাগজের ঠোঙা। মেঘের জন্য জলদি আগমন হচ্ছে তামশার। ঘরে ঢুকে খুলে ঠোঙা খেলুম আমেজ করে বেশ। আহা, সিঙ্গাড়া! তুম জিও! নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রিয় তুমি। ওহে দেশী সিঙ্গাড়া! ধন্য হয়েছ তুমি তাঁর প্রিয় হয়ে। আর তাঁর জন্য চির ধন্য এ ভারত দেশ। তাঁর জন্মভূমি। অনুরোধ তোমায়, অতীত, বর্তমানের মতই, ভবিষ্যতেও তুমি সকলের দিল জিতে নিও! রাজধানী, দিল্লিতে আজও তুমি সত্যই অনন্য। দুর্দিন আসুক যতই, তবুও তুমি তোমার সুস্বাদটুকু দিও!

৬। জলফড়িং

ইরিং বিড়িং তিড়িং নাচে জলফড়িং জলে ভাসা গাছে। কত মাছও লাফায় তার কাছে কাছে। এক বোয়াল মাছে হ্যাঁচ্ছ! করে যেই না হাঁছে, ওমনি তার মুখে ঢুকে যায় জলফড়িং বাবু। বোয়াল মশাই ওকে গিলে খায়। ও বেচারা পেটে ঢুকে যায়। বোয়াল তো আছে বহুৎ সুখে। তা বলে কী জলফড়িং বাবু হল আদৌ কাবু? সেও বোয়ালের পেটে গিয়ে দিল বেদম সুড়সুড়ি। আবার তখন বোয়াল ফেলল, আরেক ইয়া বড় হ্যাঁচ্ছ। ওমনি জলফড়িং বেরিয়ে পড়ল, তার আস্ত, জীবন্ত দেহটি নিয়ে। আবার করল সে জলের কাছে দামাল খেয়ালে হুড়োহুড়ি। ওর মন খুশিতে ভরল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register