Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

|| খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে || গুচ্ছ কবিতায় কুণাল রায়

maro news
|| খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে || গুচ্ছ কবিতায় কুণাল রায়

১। প্রদীপ

শুনতে পাচ্ছি তার পদধ্বনি, অশ্রুসিক্ত শতাব্দীর পশ্চাতে, যেন সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠার এক তীব্র বাসনা, আবৃত করেছে এই পার্থিব অস্তিত্বকে। তবুও অনড় আমি, নেই নয়নে কোন সংশয়, নেই কোন অকুত ভয়, আছে শুধু আবাহন, আছে এক প্রার্থনা, আমায় যেন বিলীন করে নেয়, সেই মৃত্যুদূত চিরতরে, তারই অলৌকিক সাম্রাজ্যে।
যন্ত্রণা যেন তিলে তিলে গ্রাস করেছে আমায়, বঞ্চিত করেছে সকল সুখ সমৃদ্ধির থেকে, অপরাধ আজও অজানা আমার। একাকি নির্জনে বসে, প্রহরগোনা আজ। কবে মুক্ত হব আমি? কবে পিঞ্জর ভেঙে মেলব দু ডানা? কবে ঝরে যাওয়া ফুলের সম হবে আমার অস্তিত্ব? কবে মাটির বুকে মিশে যাব চিরতরে?
ঈশ্বরের পাদপদ্ম এ অর্পিত সকল প্রদীপ শিখা নিভে গেছে আজ। কেবল জ্বলছি আমি- সেই অতল আঁধারে মিশে যেতে এক অভিলাষ, তার সর্বশক্তি দিয়ে বেঁধেছে আজ। সুন্দর এই পৃথিবী যেন হলাহল আজ। হে শূলপানি এসও না আজ আমার দ্বারে। কণ্ঠে ধারণ করতে দাও সেই বিষ- দগ্ধ হতে দাও আমায়। মৃত্যুর আলিঙ্গনে যেন হয়ে উঠি এক ছন্নছাড়া মহাপ্রাণ, এই মোর প্রার্থনা তোমার নিকট আজ।।

২। সেলিব্রিটি

বাবা মায়ের একটি মাত্র সন্তান, নাম ঋজু, ঋজু চৌধুরী, ছাত্ৰ হিসাবে বেশ মেধাবী, খেলাধুলোয়ে বেশ পারদর্শী, তবুও যেন কাজ করে এক অতৃপ্তি, সবার সেরা, সবার উপরে থাকতেই হবে থাকে। প্রত্যাশার মূল বীজ বপন করা হয়, কারণ তার বাবা নয় মা- ঋজুকে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, হিমালয় সম পর্বতের চূড়ায়।
দিন অতিবাহিত হতে থাকে, প্রত্যাশার অনল একটু একটু করে গ্রাস করতে থাকে, বসার ঘরের রিক্ত ফ্রেম অপেক্ষায় ঋজুর ছবির, নিয়তি মৃদু হাস্যময় আজ। মেতেছে এক ভয়ঙ্কর খেলায়- দিবানিশি শুধু এক বক্তব্য, সেরার সেরা হতেই হবে তোমায়, "চয়ন তোমার নয়, চয়ন আমার"।
বিধস্ত ঋজু অবলম্বন করে অন্য পথ, এক অসৎ উপায় বেছে নেয় সে, কিন্তু বৃথা সেই প্রয়াস। সূর্য তখন তাঁর পাটে, শুনতে পায় তাঁর পদধ্বনি, মুক্তির পথ বেছে নেয় সে, চিরবিদায় জানায় এই পৃথিবীকে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় তার নাম আজ, রিক্তও নেই সেই বসার ঘরের ফ্রেম আজ। আজ ঋজু সেলিব্রিটি, জীবনের আলোতে নয়, ওপারের চিরনিদ্রার আবরণে।।

৩। সেই দিনগুলো

নীল আকাশের নীচে ছোট্ট এক গ্রাম, চারদিকে শুধু সবুজের সমারহ, দুই দিক দিয়ে একে বেঁকে গেছে, লাল মাটির রাস্তা। সে আমারই দেশ, ছিল এক সময়, বোধকরি আজও আছে, মনের এই মণিকোঠায়। সে যে মাটির টান, তাঁর সোঁদা গন্ধ আজও আসে আমার কাছে।
মনে পড়ে বৃষ্টি ভেজা সেই রাস্তা, এক সাথে স্কুলে যাওয়া, ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চে বসে তবলা বাজানো। শিক্ষক মহাশয়ের কাছে শাস্তি, ছিল বড়ই এক অস্বস্তি।
আজও সেই স্মৃতি বলে, বিকেলের রোদ মেখে, যেতাম যখন মাঠে, খেলতাম কোনও এক খেলা, অজান্তেই নেমে আসত গ্রামীন সন্ধ্যে, সাথে থাকত ঝিঝি পোকার ডাক, বাড়ি বাড়ি বেজে উঠত শাঁখ- আর উলুধ্বনির মাঝে, নেমে আসত এক নিবিড় আলো ছায়ার খেলা।
হারিকেনের আলোয় বুজে আসত চোখ দুটো, তবুও মায়ের বকুনির ভয়, মেনে নিতে হত সবই। ছিল না কোন অবকাশ, শুধু ছিল একরাশ অভিমান।
আজ আমি শহরে, বৃষ্টি আজ বহু দূরে। সভ্যতার বেড়াজাল ভেঙে, বারে বারে ছুটে যেতে চাই সেখানে। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তি বেঁধেছে আমাকে, নিরুপায় করেছে আমার অস্তিত্ব। এক সত্য- বেঁধেছে সে কায়াকে, মনকে তো নয়। তাই বুঝি আজও ফিরে যেতে চাই, সেই মাটির কাছে, সেই মাটির সন্ধানে, সেই মাটিতে নিজেকে মিশিয়ে দিতে।।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register