[আজ ওর মেসেজগুলোয় ব্লু টিক দেখে খনিকটা আশ্বস্ত হল মোহনা। যাক, শেষপর্যন্ত ওনার কাছে আমার বার্তা পৌঁছেছে অন্ততঃ ! আমার যে খারাপ লাগছে, কষ্ট হচ্ছে, আমি ঠিক এমন যে বলতে চাইনি, সেটা ওনার বিশ্বাসযোগ্য মনেহোক। আর হয়তো যোগাযোগ হবে না!... শুধু অন্তরের কথাগুলি দিয়ে ভুল বোঝার বোঝাটুকু নামিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কীই বা করার আছে!
বুকচাপা একটা বেদনা অনুভব হচ্ছে মোহনার।… যাকে মন দিতে ইচ্ছে করে তাকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো থাকেই, কিন্তু, তাকে দুঃখ দিয়ে ফেলায় তার সংগে আবার অনুতাপ যুক্ত হয়ে যায়। মোহনা সেই অনুতাপটুকু অন্ততঃ পৌঁছে দিতে চায়।.... কষ্টটুকু তার নিজেরই থাক।
অর্কপ্রভ দুদিন পরে আজ whatsapp খুলেছিল। মোহনার মেসেজগুলি পড়ল। নির্লিপ্তভাবেই। দুদিন ধরে মনটা খিঁচড়ে গেছিল। সেই মন নিয়ে কাজকর্ম করাতে বেশ অসুবিধেই হচ্ছিল! কোন উত্তর দেবার তাগিদ অনুভব হয়নি, যদিও কিছু বলার প্রয়োজন মনেহয়েছে।
ওর মনেহল, এই ভেসে ভেসে থাকা সম্পর্কগুলির কি কোন স্থায়িত্ব থাকে!? ওর কোন অভিজ্ঞতা নেই এ বিষয়ে। ওর যা কিছু অভিজ্ঞতা তাতে বাস্তব ভিত্তি আছে… চারদেওয়ালের ঘেরাটোপ আছে, তাতে জানলা দরজা বারান্দা সব আছে।
অনেকে বলে,পরকীয়া নাকি দক্ষিণের বারান্দা!... ঘরের গুমোট, সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে বারান্দায় বসে খানিকক্ষণ মুক্ত হাওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া… তারপরে আবার ঘরে ঢুকে যাওয়া!! না, না… অর্কপ্রভর তা মনেহয় না।… বারান্দার সে বড় অপব্যবহার… অবহেলাও!... বারান্দা তো সবারই থাকতে পারে!... ক’জন সেখানে বসে আলো নিভিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারে!... ক’জনের মনেহতে পারে, ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না!... হাওয়া যে আসবেই, জ্যোৎস্না যে থাকবেই এমন তো নয়!! অন্ধকার ছাড়া আকাশ দেখার আনন্দ আছে! ওই যে, মোহনা বলেছিল, ‘তুমি আমার চোখ-সওয়া-অন্ধকার, ডাক্তারবাবু’! ঠিক আমার কথাটাই যেন ও বলতে পারে! সে জন্যেই একটা টান এসেছিল। অন্যদের মত ফেরাতে পারেনি। মোহনার কথা মনে পড়তেই মেসেজগুলি আবার পড়ল। কী যে চায় মেয়েটা !!
পড়তে পড়তে মনেহল, এই সব সম্পর্কগুলি যেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সে গানটির মত… “এমনি এসে ভেসে যায়, আলোর মতন, হাসির মতন, কুসুমগন্ধরাশির মতন, হাওয়ার মতন, নেশার মতন, ঢেউএর মতন এসে যায় “ (‘যাই’ কে ‘যায়’ করতে হল) !... যেখানে, দেওয়াল থাকে না, জানলা-দরজা থাকে না, সেখানে অর্গলহীন আঙিনায় এরা আবদ্ধও থাকে না, বোধহয়!... ভেসে চলে যায়। বন্ধন ছাড়া কি কোন সম্পর্ক স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে!?... সংস্কার দিয়ে তো সেই বন্ধনই রচনা করা! ভালবাসাকে যান্ত্রিকতার হাত থেকে মুক্ত করতে পারে শুধু সংস্কারই।
অর্কপ্রভ ঠিক করল, কিছু উত্তর দেবে।… বয়সের এই এক ধর্ম !... ২২ / ৪২ / ৬২ যতই সংখ্যামাত্র হোক, তারতম্যটি নামমাত্র নয়। ৬২ সহ্য করার শক্তি পায়,.. যতটা সামলাতে পারে, ২২ পারে না… ৪২ এর মধ্যে ২২ থেকে ৬২ তে যাবার প্রবণতা আসতে থাকে। ]
( অর্কপ্রভ লিখল )ঃ-
উত্তর দেবো না-ই ভেবেছিলাম। তবু কিছু বলার প্রয়োজন বোধ হল।…
আত্মার অসম্মান যেখানে হয়, সেখানে ফিরে যেতে নেই। ভালবাসা আর সব পারে কিন্তু, অন্যকে অসম্মান করার স্পর্ধা সে করে না,... সে বিকার তার থাকে না।… সেটা হলে বুঝতে হবে, সেখানে ভালবাসা নেই।
ছলনার কাছে বার বার ফিরে যাওয়া আরও বড় বেদনাদায়ক হতে পারে।
(এক মুহূর্ত দেরী না করে মোহনা লিখতে থাকল :)
-- ছলনা তো আমি করছি না!!.... তবে হ্যাঁ,
অসম্মান অবশ্যই করে ফেলেছি... তবে সে বোঝার ভুলে... স্বীকার করছি বার বার...
যেমন আপনিও আমায় বোঝেননি পুরোপুরি... ছলনাময়ী মনে করছেন তাই... 🙂
জানেন... একবার এক খুনের আসামী ফাঁসির হুকুম দেওয়া হলো...
তাতে সে বলেছিলো... " যে ‘আমি'টা খুন করেছিলো তাকে তো সাজা দিলে... আর যে ‘আমি'টা ছবি আঁকে... সমুদ্রের ভাষা বোঝে... ফুল, শিশু ভালোবাসে... মগ্ন হয়ে ভায়োলিন বাজায়.... তাদের কি হবে....!!?? তাদের তো সাজা পাওয়ার কথা ছিলো না.... " 🙂
আরো একটি কথা... এই "যাচ্ছি" (আগে বলা) মানে তখনকার মতো... ছেড়ে নয়... সেটা বোধহয় আপনি বোঝেননি... খুব রাত অবধি থাকার পারমিশন আমার সাধারণত নেই... তাই বলেছিলাম...
( বেশ খানিকক্ষণ পর, অর্কর তরফে কোন মেসেজ না পেয়ে মোহনা মাঝে মাঝে লিখে চলল ) ঃ--
কোন কিছুই আসলে পারফেক্ট নয়... আমরা কেউ পারফেক্ট নই... 🙂
হয়তো আপনার ভালো লাগছে না শুনতে..
কিন্তু আমি যে এখান থেকে বেরোতেই পারছি না... তবে আমি কি করবো...!?
আমিতো চট করে প্রভাবিত হই না... উঁহু... মোটেই না... কত লোকে কত রকম কথা বলে... আমার নখটুকুও স্পর্শ করতে পারে না... উত্তরই দিইনা...
কিন্তু মুশকিল হলো যখন প্রভাবিত হই... তখন এমন হারিয়ে যাই যে ফিরে আসার পথটা আর কিছুতেই নজরে আসে না....
জানি আপনার অনেকে আছে... রাধারানী আছেন... কিন্তু আমার যে এমন সম্মানীয় ভালোবাসার আকাশ আর নেই...
তাই কিচ্ছু চাই না আমার আর.... শুধু আপনার সঙ্গটুকু ছাড়া... যেখানে আমি নির্দ্বিধায় নিজেকে ব্যক্ত করতে পারবো.... আশকারা যে আপনিই দেখিয়েছেন... 🙂
আপনি বলবেন... "সম্মানীয় যখন তবে অসম্মান করলে কেনো...!? "...
সেই মুহূর্তের ভাবটি আমার কেমন যেন হয়ে গেলো...
আপনি বললেন... " বেরোতে পারবে...!? "
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম... " কোথা থেকে বেরোবো.. সংসার থেকে...!? "... একটি কথাও বানিয়ে বলছি না... সেই মুহূর্তের ভাবটি ব্যক্ত করছি শুধু... বিশ্বাস করলে ধন্য হবো...
আচ্ছা..
তো তারপর... আপনি বললেন... " কবে, কোথায় দেখা করতে পারবে বলো...!?"
আমার মাথায় পোকা নড়তে শুরু করলো... আমার আগে বলা ( নেহাৎই মনে আসা এবং বলে ফেলা.. কারণ যেখানে এমন আশকারা, স্নেহ থাকে সেখানে আমায় কিচ্ছু ভেবে বলতে হয়না...) শব্দগুলো যে আপনার কাছে কি অর্থ নিয়ে উপস্থিত হতে পারে... আমি চিন্তাই করলাম না...
চারপাশের শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষিদের পৃথিবী... যার কাছে আমার ব্যক্তিসত্তা মূল্যহীন তার সাথে গুলিয়ে ফেললাম...
ভুলে গেলাম... তার আগের দিনই এই মানুষটার এক আকাশ ভালোবাসার পরিচয় পেয়ে সারা দুপুর আমার বালিশ ভিজেছে চোখের জলে....
ভুলে গেলাম... বয়েস, যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব সর্বদিকেই অসামঞ্জস্য সত্বেও অদ্ভুত ভাবে ভালোবেসে ফেলার তাড়নায় আমি পাগলের মতো তাকে চেয়েছি সারারাত... আদর করেছি অনেক মনে মনে... সব কেমন ভুলে গেলাম...
আর তাতে তাকে যেগুলো বলে ফেললাম তা ভাবার অতীত ... ওই যে ভেবে বলিনা... সারারাত আমার নিজেকে ভারি খেলো মনে হলো... মনে হলো শুধু আমার শরীরটার মূল্য আছে!!... আর কিচ্ছুর নেই!!... কষ্ট মেশানো ব্যথা হতে থাকলো... তারই ফলশ্রুতি আমার সকালের বক্তব্য ....মানছি অন্যায়... অমার্জনীয় অন্যায়... কিন্তু বলে ফেলা কথা যে ফেরৎ হয় না... তাই তার পিছনের বাতাবরণ ব্যক্ত করা... কারণ... I love u... সত্যি স্বীকারে কোন বাধা নেই....
তারপর... যেই বেলা বাড়লো... আপনাকে চুপ দেখে প্রাণ হাঁফিয়ে উঠতে থাকলো... মনে হলো আমার কেউ নেই... সব হারিয়ে গেলো... শেষপর্যন্ত যে আসলে ‘ভালোবাসা’টিই সত্যি, যখন অনুধাবন হতে শুরু করলো.. বার বার আপনাকে মেসেজ করলাম...
কিন্তু সে যে মানুষ... ভগবান নয়.. ভুলে গেলাম...
তাকে ভগবানের মতো যা খুশিতাই বলে হেনস্থা করে ফের নিষ্কলুষ হৃদয়ে জোর খাটিয়ে বুকে টেনে নেওয়া যায় না... তাই না...!?
আর আমায় আপনি জানেনই বা কতটুকু যে আমি জোর খাটালেই বুকে পাবো... তাই না...!?
আমি তো ছলনাময়ী... বেদনাদায়ী শুধুই... তাই না...!? 🙂
0 Comments.