- 3
- 0
1) VALIE EXPORT | Still from Touch Cinema (1968) 2) Swiss artist Milo Moiré (2016)
পলা মডারসন বেকার। ওর নাম পলা। মরার আগে স্থির করলেন তার কোন নাম নেই, তিনি মহিলা। মহিলাদের উপাধি থাকেনা। লোকে তাকে জানত, পলা মডারসন বেকার। মডারসন এসেছে তার স্বামীর নাম ওটো মডারসন থেকে, আর বেকার এসেছে পলার বাবার নাম থেকে। পলার বাবার নাম কার্ল ওল্ডারমার বেকার। মেয়েদের এই অভিমান সঠিক নয়। কারণ বংশ পরিচিতি ঘটে সন্তানকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে। সাধারনতঃ আগেকার দিনে মেয়েরা সংসার নির্বাহের অর্থ উপার্জন করতনা। সংসার ও স্বজনের জন্য মারামারি কাটাকাটি মহিলারা কোনদিন করতে যায়নি। মহিলারা পুরুষকে সুরক্ষা কোনদিন দেয়নি, সুরক্ষা পুরুষেরা মহিলাদের দিয়েছে। যে কর্তা ব্যক্তি , নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা রাখেন, আছে, সুরক্ষা দিতে জানেন, সন্তান তার নামই বহন করবে। সে মহিলা হোন আর পুরুষ হোন। পুরুষের বাহুতে শক্তি আছে, আগেকার দিনগুলিতে তাই পুরুষই বংশ নাম দিয়ে গেছে। নারীর অভিমান নারীর নাম নেই এটা ঊনিশ শতের গোড়ার দিক থেকেই বয়ে আসছে। একশ বছর হয়ে গেল নারী তার নিজের বংশ সৃষ্টি করতে যদি চাইত হয়ত পারত। সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় হলেন পলা। ১৮৭৬ সালে জার্মানীর ড্রেসডেনে তার জন্ম হয়। মা বাবা দুজনেই বুর্জোয়া পরিবারের, শিক্ষিত ও বনেদী পরিবারের। এবং পলার বাবা মা তাদের সকল সন্তানদের যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে বড় করে তুলেছেন। ১২ বছর বয়স থেকে পলার ড্রয়িংয়ের প্রতি ঝোঁক আসে। ১৮৯৩ সালে, ১৭ বছর নাগাদ তিনি স্থানীয় একটি শিল্পী চক্রের সাথে পরিচিত হন, সেখানে সেইসব শিল্পীরা খুবই উজ্জ্বল প্রতিভা ধারী ছিলেন। সেখানেই অনেকের মধ্যে ওটো মডারসন ছিলেন যার সাথে পলার পরে প্রেম ও বিয়ে হয়। ১৯৯৬ সালে, ২০ বছর বয়সে তিনি বার্লিনের একটি মেয়েদের আঁকা শেখার প্রতিষ্ঠানে পেইন্টিং শেখার জন্য ভর্তি হন। পলার বন্ধু ক্লারা ওয়েস্টহপের সাথে সেইখানেই পরিচয় ও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। ক্লারা ছিলেন একজন ভাস্কর। ওটো মডারসন বিবাহিত ছিলেন ১৯০০ সালে তার স্ত্রী হেলেন মারা যায় তার দু বছরের সন্তান এলিজাবেথকে রেখে, পলা তার পরের বছর ১৯০১ সালে ওটোকে বিয়ে করে এলিজাবেথের সৎমা হন। বিয়ের দুবছর পলা ওটোর সাথে কোন যৌন সংস্রবে যাননি। তার কাছে শিল্পী হয়ে উঠা বড় বিষয় ছিল। সন্তান পেটে এলে তিনি ছবি আঁকতে পারবেননা, এই ভয় ছিল। ১৯০৩ সালে তিনি প্যারিসে চলে যান, তার শিল্পজীবনের প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি কোন বাচ্চা পেটে নিতে চাননি। তার কাছে নিজের প্রতিষ্ঠা বড় হয়ে উঠেছিল। পলা আর উপন্যাসিক, কবি রাইনার মারিয়া রিলকে , দুজনের বয়সই তখন ২৪, ১৯০০ সালে জার্মানের একটি গ্রাম্য শিল্প কলোনীতে পরিচয় হয়েছিল। পলা রিলকের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু তার আগে ওটোর সাথে বিয়ের কথা হয়ে গেছে। তাই প্রেমে হাবুডুবু খেলেও প্রেমকে পরিণতি দেননি। তারা ও ক্লারা ওয়েস্টহপ একসাথে একটা শিল্পীর বন্ধনে বন্ধুত্ব অনেকদিন টিকিয়ে রেখেছিলেন। তারা বলতেন এটা তাদের পরিবার। ১৯০৬ সাল নাগাদ, যখন পলা প্যারিসে থাকতেন তখন রিলকের সাথে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুজনকে একসাথে দেখা যেত। এবং দুজনের মধ্যে চিঠির যোগাযোগ ছিল। গভীর প্রেমও ছিল। প্যারিসে ৩ বছর থাকাকালীন তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছেন এবং ১৯০৬ সাল নাগাদ, ওটো প্যারিসে যান পলাকে ফিরিয়ে আনতে, তখন রিলকে কে পলা কাছে পাননি, রিলকের প্রতি পলার বিশ্বাস ছিল অনেক, যদিও রিলকের সাথে পলার মতামত এক থাকতনা। রিলকে পলাকে বলতেন, মেয়েরা তার সন্তান হিসাবে আর্টকেই বাছবে।য়ার্ট নিয়েই তাদের জীবন হবে। কিন্তু পলার কাছে সন্তান কামনা স্বাভাবিক ছিল। যাইহোক, ওটোর সাথে তিনি জার্মানে ফিরে আসেন। তার বাসনা হল একটি সন্তান পেটে ধরবেন। ১৯০৭ সালে তিনি গর্ভবতী হন, নভেম্বরে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই সন্তানের জন্য খুশী। কিন্তু সন্তান জন্মাবার পর তিনি পায়ে যন্ত্রণায় অনেক কষ্ট পান। ডাক্তার তাকে বিশ্রাম নিতে বলেন। ১৯ দিনের মাথায় ডাক্তার তাকে দাঁড়িয়ে হাঁটতে বলেন। পলা দু’পা হেটেই বসে পড়েন। তিনি তার বাচ্চাকে কোলে নেন যন্ত্রণার মধ্যেই, মুখ থেকে বেরিয়ে আসে বাচ্চার প্রতি একটি শব্দ, " (তোর) কপাল মন্দ", জার্মানী শব্দ 'Schade'। এইভাবে ৩১ বছরে একটি সৃষ্টিশীল বিখ্যাত রমণীর মর্মান্তিক জীবনাবসান হল। রিলকের জীবনটা প্রেমের ব্যাপারে ঠিক ছিলনা। Lou Andreas-Salomé এর সাথে রিলকের বয়সের ফারাক ছিল। সালোমির বয়স রিলকের চেয়ে অনেক বড় ছিল। রিলকেকে অনেক জ্ঞান দিত কথায় কথায়, তারপর একদিন রিলকেকে ল্যাং মেরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সালোমি চলে যায়। রিলকে এরপর পলা আর ক্লারার সাথে অল্পবয়েসী তরুণী হিসাবে প্রেম করে মজা পান। পলার যেহেতু বিয়ের কথা হয়ে গেছিল তাই তার সাথে রিলকের বিছানায় রোমাঞ্চ হয়নি। হয়েছে ক্লারার সাথে। কিন্তু তাদের এই বিয়েটা টিঁকেনি। তাদের বিয়ের পর বাচ্চার কান্না রিলকের পছন্দ হতনা। রাইনার মারিয়া রিলকে বাচ্চার কান্নাতে লিখতে পারতেননা। তিনি ক্লারাকে ছেড়ে লুকিয়ে থাকতেন। ফলে পলার সাথে দেহ সম্পর্ক না হলেও প্রেম গভীর ছিল। যখন পলা মারা যান রিলকের বুক ভেঙ্গে গেছিল। রিলকে পলার বন্ধুত্বতাকে সম্মান জানিয়ে লিখলেন একটি লম্বা কবিতা। "Requiem for a Friend" পলাও জীবিত থাকা কালীন বন্ধু রিলকের একটি প্রতিকৃতি এঁকে যান।তার মৃত্যুর পর জার্মান পোশটাফিস পলার উপর একটি স্ট্যাম্প প্রচলন করে। তার সমাধি কে সুরক্ষা দেওয়া আছে। সমাধি স্থলটিতে একজন ভাস্কর Bernhard Hoetger তার একটি প্রতিমূর্তী বানিয়েছেন। পলার শিল্পী জীবনে পল সেজান ও গঁগ্যার ছবি অনুপ্রেরণা তাকে কিছুটা বাস্তব রীতির ঢংয়ে ছবি আঁকতে উদবুদ্ধ করে । তিনিই ইতিহাসে প্রথম পূর্ণ দিগম্বরীর ছবি আঁকেন। অধিকাংশ ছবিই তার জীবনের প্রতিফলনের। এবং নগ্ন ছবি আঁকেন।ঊনিশ শতকের গোড়ায় কোন মহিলা নিজের ছবি নগ্ন করে আঁকা যথেষ্ট সাহসের। তার ছবিতে একটা বিশেষ আঙ্গিক আছে। মাতৃত্বতা নিয়ে তার অনেক
0 Comments.