Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নীলম সামন্ত (পর্ব - ৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নীলম সামন্ত (পর্ব - ৯)

মহাভারতের মহা-নির্মাণ (দুঃশাসন)

নীরেন ভাদুড়ি সমগ্রের 'নিকষছায়া'-তে দেখেছি গল্পের ভিলেন লোকনাথ একজন তন্ত্র সাধক যিনি বিদেশি তন্ত্র বিদ্যায় সাধনা করে নিজেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী মানব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। সেই সাধনা তার বহুদিনের৷ আর বহুদিন থেকেই পোষা কুকুরের মতো একটি প্রেতাত্মা তার গৃহপালিত। বলা ভালো অনুগত দাস৷ এমনই অনুগত যার নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি নেই, বক্তব্য নেই, ভালো-মন্দের বিচার নেই, কম বেশি কোন কথাও নেই ৷ গেনু শুধু আজ্ঞা পালন করতে জানে৷ তার প্রভু তাকে যা বলে সে তাই করে৷ আজ্ঞা পালনের জন্য সে ভুল করেও কখনও কম কিছু করেনি বরং কাউকে হাত ভাঙতে বললে সে শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে৷ মহাভারতের দুঃশাসন অনেকটা এরমই চরিত্র৷ দুঃশাসন, ধৃতরাষ্ট্রের তৃতীয় ও গান্ধারীর দ্বিতীয় পুত্র৷ অদ্ভুত লাগছে শুনতে? আরে না না অদ্ভুত নয়৷ দুর্যোধনের জন্মের পরে পরেই এক দাসীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে জন্মায় যুযুৎসুর। তারপর জন্মায় দুঃশাসন। গান্ধারীর দ্বিতীয় পুত্র হেতু দুঃশাসন ছেলেবেলা থেকেই দুর্যোধনের অনুজ ভাই এবং সবচেয়ে কাছের। মহাভারতের সমাজচিত্রে দেখা যায় বড় ভাইয়ের প্রতি ছোট ভাইয়েরা অনুবর্তীত। বড়রা গুরু বা পিতা সমান হয়ে যায়৷ ছোটরা কেবল তাদের আজ্ঞাবহ। দুর্যোধন কৌরবদের জ্যেষ্ঠ। তাই দুঃশাসন দুর্যোধনেরই আজ্ঞাবহনকারী ছোট ভাই। দুর্যোধনকে ওতপ্রোতভাবে অনুসরণ করলেও আমরা কখনই দুঃশাসনকে দুর্যোধন বলে দিতে পারি না৷ সে তার দাদার পাশে পাশে ঘোরা এক মৌন ধৃতরাষ্ট্রপুত্র। যুযুৎসুরকে নিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের বাকি একশ' জনের মতো দুঃশাসনও পড়াশোনা করেছেন, যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছেন। দুর্যোধনের ছায়া সঙ্গী না হলে হয়তো বাকি একশ' জনের ভিড়ে দুঃশাসনও হারিয়ে যেত, তাকে নিয়ে কোন চর্চাই হত না। আর চর্চা হলেও তা যে বিশাল পরিমাণ সে কথা বলবো না । কিন্তু দুর্যোধনের ছায়াসঙ্গী হেতু দুঃশাসন অনেকটাই আলোকিত। ধৃতরাষ্ট্রের একশ' এক জন পুত্রের মধ্যে দুর্যোধন ছাড়া তিনজন সম্পর্কে অল্প বিস্তার জানতে পারি। তাদের মধ্যে বিকর্ণ এবং যুযুৎসুর, দুর্যোধন ও দুঃশাসনের বিপরীতমুখী চরিত্র। ফলত দূর্যোধনের পাশাপাশি ধৃতরাষ্ট্রপুত্র হিসেবে এবং কুরুবংশধর হিসেবে দুঃশাসনের নামই উঠে আসে। দুঃশাসন যখন ছোট থেকে বড় হচ্ছে তার অবান্তর কোন ঘটনা নেই, বিরাট উল্লেখযোগ্যও কিছু নেই যা দিয়ে তিনি নিজের থেকেই হস্তিনাপুরে নামাঙ্কিত হন। অথচ যেই মুহূর্ত থেকে শকুনি এবং দুর্যোধন একের পর এক ষড়যন্ত্র করছেন সেই মুহূর্ত থেকেই অন্যতম অংশীদার হিসেবে দুঃশাসনকে দেখা যায়৷ তবে শুধুই দেখা যায়, শোনা কিছু যায় না৷ দুঃশাসন কে আমরা কোথাও কোনভাবে ষড়যন্ত্রের পরামর্শদাতা হিসেবে কিছু বলতে বা প্রশ্ন করতে দেখি না৷ কী আশ্চর্য তাই না! ষড়যন্ত্র বলি বা চক্রান্ত, তা পাণ্ডবদের বিরূদ্ধে করা হত কখনও সিংহাসনের অধিকার নিয়ে কখনও শকুনির ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যসাধন নিয়ে৷ আর সেই চক্রান্তের পেছনে সর্বদাই চারমাথাকে এক সাথে দেখা যায়। দুর্যোধন, শকুনি, কর্ণ ও দুঃশাসন। মূলত দুর্যোধন আর শকুনিই আলাপ আলোচনা করত, শকুনির পূর্বপরিকল্পিত চিন্তাভাবনায় বাকিদের পরিচালিত করত, মাঝে মধ্যে অপছন্দ, বাধা, সহমত ইত্যাদি পোষণ করতে কর্ণের দু-চারটি বাক্যালাপ দেখা যায়। কিন্তু দুঃশাসন সর্বত্র থেকেও বোবা! কিন্তু অপকর্মের সময় সবার আগে হম্বিতম্বিতে তাকে টপকানো কার সাধ্য! চরিত্রটি অদ্ভুত তাই না? ষড়যন্ত্র করার বুদ্ধি নেই, অথচ ষড়যন্ত্র চরম ভালোবাসেন৷ সত্যিই কি তাই? নাকি অন্ধ ভাতৃপ্রেম? . . চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register