Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৮)

পুপুর ডায়েরি

জীবন মানে যে ঠিক কি কেই বা জানে , কেই বা বোঝে ।

সেদিন সকালে খাটে হেলান দিয়ে গান শুনছিলাম । এটা ২০২৫ সাল , ইংরেজিতে । বাংলা হিসেবে, ১৪৩২ । তাই এখন গান শুনি হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইল ফোনে ।

বাবা মশাই , মানের আমার প্রাণের বন্ধু , “বা”-কে তো এদ্দুর দেখাতে পারিনি । তবু , ২০০৪-এ তবু যতদূর এসেছিল প্রযুক্তি , তাকেই বা কাজে লাগিয়ে ফেলেছিলেন আই সি সি উ-র বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাসপাতালে । হাসতে হাসতে বলছিলেন , ফোন কর কুমারকে । সামনে ধর , গান শুনিয়ে দিই । পুরোপুরি সুরে তালে গান চলে গেল , আমার কর্তা ,মানে , বাবার জামাই , কুমার সাহেবের কাছে । “ জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ —” ডায়ালিসিস চলা এক দিলদরিয়া মানুষের এমন আনন্দের গান ক জনের শোনার সৌভাগ্য হয়? সে দিন ফেলে এসেছি , ২১ বছর পিছনে । ২৬শে মে মাস। দৌড়ে চলছে জীবন নামক চলন্ত সিঁড়ি । ট্রেডমিলের মত ।

তাই ৫৭ বছরের রাস্তায় পিছন ফিরে দেখে দেখে বুঝছি , ওহ , একেই বলে জীবন ? এই চলে চলে ফেলে রেখে যাওয়া , মহাপ্রস্থানের পথে । চলতে চলতেই শিখি । আগে বড়োদের থেকে শিখেছি , এখন , ছোটোদের থেকে । তাই , ফোনে গান খুঁজে পাচ্ছি । যে গানের লং প্লেয়িং রেকর্ড , বা-মশাই কিনে দিয়ে শুনিয়ে রেখে গেছেন । সে গান পাচ্ছি দেবব্রত জর্জ বিশ্বাস বাবুর গলায় । “ ওরে চিত্ররেখা ডোরে বাঁধিলো কে …” কী ভালো লাগছে নরম বৈশাখ সকাল ।

কত কিছু যে পরে খুঁজে পাওয়া যায়। ৫০ বছর বয়েস পেরিয়ে , গুগল খুলে পড়ে নিয়েছিলাম পুরোটা, সেই যে গান ; " এভরিথিং আই ডু "। ছোটো মানুষদের জন্য মায়া হয়েছিল খুব। এত তাড়াতাড়ি দিন কেটেছে, পুরো ত পড়ে বা শুনে তখন দেখা হয়নি। কিশোর কাল পেরিয়ে তরুণ বেলায় পা দিতে দিতে যে মন বলছিলো , আই ডূ ইট ফর ইউ …, তার সাথে , আরও কত কিছু করবার দেবার শপথ ছিল , সে তখন শুনে জেনে নেওয়া হয়নি । তাই জবাব ও বাকি থেকে গেছে হয়ত। সব কথা সবাই নিজে নিজে বলতে কী আর পেরে ওঠে।

আমি বইয়ে পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে “শেষের কবিতা ” পড়াতাম অন্য বন্ধুদের ইস্কুল শেষের পর্যায়ে । তত দিনে, আমি আর আমার প্রাণসখী সোমা , দুইজনেই “ শেষের কবিতা ” ফ্যান । ওকেই গীতা ভেবে আউড়ে চলি অহর্নিশ।

তবে তাই বলেই, সবাই শেষের কবিতা বুঝবে না। বোঝেওনি।

মাঝে মাঝে মনে হয়ে হেসেই ফেলি। কি জন্যেই বা লোককে পেন্সিল দিয়ে আণ্ডারলাইন করে জবরদস্তি পড়িয়েছি। কপাল কপাল।

পয়লা মার্চ ২০২৫ তারিখে খবর পেলাম, চলে গেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রবার্টা ফ্ল্যাক, এ বছর চব্বিশে ফেব্রুয়ারিতে। ইন্সটাগ্রাম ওনার গান আর জীবনকে তুলে ধরছিল নানান রঙের ছবিতে। মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্য মাখা দিনগুলোতে প্রিয় বন্ধুর শোনানো গান…. “ কিলিং মি সফটলি উইথ হিস সং…” কত রাস্তা পেরিয়ে এলাম, মরতে মরতে, বাঁচতে বাঁচতে…

সেই যে ছোটো বেলায় ক্যাসেট শুনতাম, আঁধার আলোর এই যে খেলা, এই তো জীবন, কান্দো কেনে মন...মনে পড়ে গেল সে সুর।আর কাঁদলাম খুব। জীবনকে ভেবে ভেবেই।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register