Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সমীপেষু

maro news
সমীপেষু

ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর

ইতিপূর্বে আমি বলেছিলাম গুরুমুখী না হলে সাধনায় ফুল ফোটে না। আমি তো এও বলেছিলাম যে বই পড়ে শাস্ত্রপাঠ হয় না। আজ বলবো শাস্ত্র ও তার অনুবাদ নিয়ে। কিছু পালি আর কিছু তিব্বতি পুঁথি বাদ দিলে মূলত সংস্কৃত ভাষায় রচিত আমাদের ভারতীয় শাস্ত্রগুলো। আর সমস্যাটা এখানেই। সংস্কৃত শব্দের বিস্তার নিতান্তই কম নয়। ফলে যখন সেটি অনুবাদিত হয় তা সে যে কোনো ভাষাতেই হোক না কেন তা মূল ভাব থেকে সরে আসে। আর মূলভাবটা যদি ধরাই না যায় তবে আর শাস্ত্রাধ্যয়ন কেন!!! আমার গুরুভগবান পরিব্রাজকাচার্য ভূতপূর্ব মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী বীরেশ্বরানন্দনাথ সরস্বতী পরমহংসদেব আমাদের প্রায়ই বলতেন, "কখনো কোনো অনুবাদব পড়বি না। মূল ভাষাকে জানার চেষ্টা করবি, তারপর পড়বি। দেখবি কষ্ট হলেও ভাব নষ্ট হবে না।" ওনার ইঙ্গিতে আমি কোরান আর হাদিসের শিক্ষাও গ্রহণ করি। সে ক্ষেত্রে আমার শিক্ষাগুরু হিসাবে পেয়েছিলাম আমার চোখে দেখা জ্যান্ত পীর হাজী আজিজুর রহমান সাহেবকে। ওনার থেকে প্রথমে একবছর আরবি পড়া, লেখা শিখি। উনি একটু একটু করে আমায় কোরান পাঠও দিতে থাকতেন। তারপর যখন আরবি বলতে, পড়তে, লিখিতে শিখলাম তখন উনি পুরোদমে কোরান, হাদিস পড়াতেন। আমিও মুগ্ধ হয়ে শুনতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। সে শিক্ষা কেমন ছিলো তা নিয়ে অন্য একদিন লিখবো। তবে ইদানিং কালে কবি তথা ভ্রমণকাহিনীকার, সম্পাদক দাদা গৌরাঙ্গ মিত্র এবং কবি, গদ্যকার, গবেষক আফজল আলির সঙ্গে আলাপকালে কোরানের শিক্ষাগুলো ঝালিয়ে নিতে পারি মাঝেমধ্যে। ওনারাও তাই গুরুই।
আজ সকালে আমার খুব পছন্দের পাত্র, মাতৃসাধক আদ্রীয়মান মিত্র একটি পোস্ট করে ফেসবুকে। অবশ্যই শাস্ত্রীয় আলোচনার।ওর শাস্ত্রপাঠের মতি যে ভীষণ তা আমার অজানাও নয়। তাই ওর পোস্টকে গুরুত্বপূর্ণ বোধ করেই সমীপেষুতে এই প্রসঙ্গে লিখছি। পোস্টের বিষয় বস্তু অনেকটা এমন—
কঙ্কালমালিনী তন্ত্রের কয়েকটি কথা উল্লিখিত হয়েছে। তার বঙ্গানুবাদ করেছেন অযোধ্যানাথ শাস্ত্রী। যার কারণে যত বিভ্রান্তি। ওনার অনুবাদ অনুযায়ী
১/ কলিকালে ডাকিনী, হাকিনী, কাকিনী, শাকিনী এদের সিদ্ধি সম্ভব।
২/ কলিতে কালী ব্যাতিত তারাসহ অন্য মহাবিদ্যাগণ নিদ্রিত। তাদের নিদ্রাভঙ্গ হলে সাধকের সিদ্ধিহানি হতে পারে।
৩/ স্ত্রী ও শূদ্রের পুরশ্চরণে অধিকার নেই।
এই তিনটি অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন কুলের বিভিন্ন সাধকগণ ভিন্নমত দিয়েছেন। তবে তাদের প্রত্যেকের মতই সেই ঘুরেফিরে এক — "এই তন্ত্রশাস্ত্রটি ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে। এর মান্যতা নেই।" এরকম। তাদের সকলকে সম্মান জানিয়েই আনন্দের সঙ্গে বলছি একটি কথাও ভুল লেখা নেই। আপনারা অনুবাদ পড়ে বিভ্রান্ত। আপানাদের বিচার ও ব্যাখ্যা সর্বৈব ভুল। আপনারা ওই শ্লোকের কিছুই মানে বোঝেননি। বরং অনুবাদক যা অনুবাদ করেছেন তা আপনাদের চিন্তাকে ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে।(ছবিতে শাস্ত্র ও অনুবাদ দুইই দেওয়া হলো)
এবার আমি এর অনুবাদ আর ব্যাখ্যার চেষ্টা করবো। যেমন উপরে ১,২ ক্রমিকে সমস্যা সাজিয়েছি ওই ক্রমিকেই উত্তর সাজাবো।
১/কলিকালে ডাকিনী, হাকিনী, কাকিনী, শাকিনী এদের সিদ্ধি সম্ভব। আলবাত সম্ভব। তবে তারা অশরীরী কোনো যোনীদ্ভুত অতিপ্রাণ নয়। আমাদের ঈড়া পিঙ্গলা সুষুম্নাদি নাড়ী আর ষড়চক্র দর্শনে চক্রের শক্তিরূপে ওদেরই বাস। যেমন বিশুদ্ধচক্রে শাকিনী, আজ্ঞাচক্রে হাকিনীর বাস। সুতরাং ভুল কিচ্ছুটি নয়। যার চক্র জাগরিত নয়, বা যার জাগরণের চেষ্টা নেই সে আবার কীসের সাধক। আর কী বা সাধনা।
২/ কলিতে কালী ব্যাতিত তারাসহ অন্য মহাবিদ্যাগণ নিদ্রিত। তাদের নিদ্রাভঙ্গ হলে সাধকের সিদ্ধিহানি হতে পারে। এ বিষয়েও আমি কোনো ভুল পেলাম না। যেকোনো মন্ত্রই নিদ্রিত। গুরু সিদ্ধবীজ দান করেন। তার মন্ত্ররহস্য, মন্ত্রগুপ্তি, মন্ত্রোদ্ধার, প্রয়োজনে মন্ত্রের শাপোদ্ধারও করান। মহাবিদ্যার জপ অবশ্যই হানিকর হবে অনধিকারীর ক্ষেত্রে। এই লিমিটেশন না দিলে কুলকর্মের প্রয়োজনীয়তা কী!!!! কালী সর্বজনের কাছের এবং জপমাত্রই পূর্ণফল দান করেন এ তারই প্রমাণ।
৩/ স্ত্রী ও শূদ্রে পুরশ্চরণে অধিকার নেই। এটির সাথেও আমি সহমত। একধিকবার শ্লোকগুলি পড়ে আমি কোনো ভুল পাইনি।আপনারাও পাবেন না আশা করি। প্রথমে আসি স্ত্রী প্রসঙ্গে। স্ত্রী শব্দের ভাব এখানে অতটাও সোজা নয়।
শব্দ-উৎস: সংস্কৃতি स्त्री স্ত্রী>বাংলা স্ত্রী।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: √স্ত্যৈ (সংহত) +র (ড্রট) +ঈ (ঙীপ্), অধিকরণবাচ্য
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | নারী | ব্যক্তি | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: নৃজাতির স্ত্রীসত্তা। পুরষের দ্বারা গর্ভবতী হয়ে, গর্ভে সন্তান সংহত বা স্থিত হয়, এই অর্থে স্ত্রী। ঠিকই তো আছে গর্ভবতী কখনোই পুরশ্চরণ করতে পারবে না।
এবার আসি শূদ্র প্রসঙ্গে। পূর্ণাভিষেক ব্যক্তির গোত্রতো পরিবর্তন হয়ে গুরুগোত্রে স্থিতি পায় তা সে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য বা শূদ্র যাই হোক না কেন। এক্ষেত্রে শূদ্র সে কখনই থাকে না। আর অনভিষিক্ত ব্যক্তি তন্ত্রে শূদ্রবতই অনধিকারী। সুতরাং এক্ষেত্রেও ভুল নেই।
সুতরাং বাংলা বা যেকোনো অনুবাদ পড়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত কী ভয়ংকর হতে পারে তার প্রমাণ দিলাম। আর মনে করাতে চাইলাম আরও একবার গুরু না ধরে শাস্ত্র অধ্যায়ন হয় না। আরও বলবো, আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে বা যিনি বা যারা কোনো শাস্ত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যোগ্যতা রাখি। যিনি ওই শ্লোকগুলো গ্রন্থন করেছেন তিনি আমাদের চেয়ে অবশ্যই যোগ্যতর। নইলে ওই শ্লোকবাক্য উদ্ভাসিত হতে পারতো না।
আজ সকালে উঠেই যেমন দেখলাম সঙ্কর্ষণ আমায় একটা কবিতা পাঠিয়েছে ছাপতে। আমি তো আশা করেছিলাম ও গদ্য পাঠাবে। আমার আশার উপর ওর পাঠানো নির্ভর করলো কি!!! সত্যকে চিনতে হয়, সত্যকে খুঁজতে হয়, আগে থেকে মিথ্যে মিথ্যে করে চিল্লাতে নেই। সবেতেই ভুল ভুল করতে থাকলে জীবনের অন্তিমকালে ওই ভুল খুঁজতেই ভুল করেই চলে যাবে সময়টা। সত্যকে চেনা হবে না। জানা হবে না, সত্যিই শিব সুন্দর

শাল্যদানী

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register