Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

রম্য গদ্যে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়

maro news
রম্য গদ্যে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়

জলছবিকথা

পৌষ উৎসব বলতেই যে কথাটা প্রথম মনে আসে ভোর সাড়ে চারটে বৈতালিক সেরে ফিরে শ্রীসদনের চালতাতলা বাথরুমে চৌবাচ্ছার ঠান্ডা জলে চান। আর বড় দিদিদের কাছ থেকে কাজল আর কালো টিপ জোগাড় করে সাদা শাড়ি পরে সেজে গুজে গায়ে চাদর বা সয়েটার না পরে ছাতিম তলায় ছোটা। সাজলে সয়েটার পরতে নেই। সাজলে শীত তখন করত না। শীতের তখন করা মানা। শীত জানত মেয়েরা সেজেছে তাই তার কিছুই করার নেই। পৌষউৎসব আমাদের শুরু হত অবশ্য তার বেশ কিছুদিন আগেই। ক্ষমাদির সঙ্গে আম্রকুঞ্জে আলপনা দিতে যেতে হত। সেখানে টিফিন দিত। হষ্টেল জীবনে এই টিফিনের প্যাকেট যে কি important ছিল কি বলব। পৌষ উৎসবের সব থেকে বড় পাওনা ছিল আটটাকা। ঐ আটটাকা হাতে পেলে এত সুখ হত মনে হত আমরা সারা পৌষমেলা টা কিনে আনতে পারব ঐ আটটাকায়। আজ ঐ আটটাকার পৌষমেলা এত দুর্মূল্য। আসলে তখন সারা পৌষমেলা বলতে তো ছিল জৈন শিল্প মন্দির থেকে হজমিগুলির শিশি, ফুচকা, এক দুমুঠো মদন কটকটি, ঝালমুড়ি আর নাগোরদোলা। তবে নাগোরদোলা জমত মাঘমেলায় সেখানে কাঠের নাগোরদোলায় ঘুরতে ঘুরতে ফেলে দেওয়া হত রুমাল আর চীৎকার করা হতো দাদা জোরে। দাদার হাত প্রায় খুলে যাবার দশা। আমরা ঘুরছি বনবন করে সবাই চেষ্টা করছে রুমালটা তোলার না হলো না। না এবারো পারলো না। না এবারো miss। তারপর হঠাৎ কেউ শরীরের প্রায় অর্দ্ধেকটা বাইরে বের করে তুলে নিল সেই রুমাল তখন কি চীৎকার। আমরা তো নাগরদোলায় বসেই নাগরদোলার টিকিট কাটতাম। নাগরদোলাদাদারা আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতো না বলত এবার নামো আর নাগরদোলা ঘুরবেনা। আজও আমার মনটা এদিক সেদিক শান্তিনিকেতনের আনাচে কানাচে পড়ে থাকে। মনে হয় ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে হারিয়ে যাওয়া শান্তিনিকেতনকে তার উৎসব অনুষ্ঠানে খুঁজি। খুঁজি সেই হরিকে যার কাছে বসে বানিয়েছি কত দুল। হরির বানিয়ে দেওয়া দুল কানে পরে তার ভাঙা আয়নায় মুখ দেখে নিজেকে যখন ঐশ্বর্য রায় মনে হবে তখন তার দিকে তাকিয়ে বলি দুটাকা দিয়ে দাও ওকে। হরির দুল কানে সে যখন আমায় দেখে তখন আমি দেখি রামদার দস্তার গয়নায় পায়ের আঙ্গট। দর দাম করি পাঁচ থেকে তিনে নামলে সে দাম মিটিয়ে দেবে আমি সেই আঙ্গট পায়ে পরতে তখন ব্যস্ত থাকব। তার তখন "পদ পল্লব মুদারম্" চোখ । দেখা না দেখার ভাঙা বাদামের খোলায় কোঁচড় ভরে উঠবে। ভালোবাসার কথারা বুড়ির চুলের মতো গাঢ় রঙীন হয়ে উঠবে ঠোঁটের হাসিতে। বুড়ো বাউল মনের মানুষের গান গেয়ে যাবে বিনোদন মঞ্চ থেকে, হৃদ মাঝারে রাখব র সেই চেনা অঙ্গীকার। মেলায় ঘুরতে ভালোবাসার মানুষ লাগে। আর লাগে সেই বন্ধুগুলোকে যারা আসলে ছিল ছেলেবেলার আকাশে মনের কথার তারা। এই সব ভালোবাসার মানুষের মুগ্ধ চোখের গল্পে যারা আলোকিত থাকে আলোকিত রাখে আমাকে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register