Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৫৫)

রেকারিং ডেসিমাল


একখানা বাংলা সিরিয়াল চলছিল টেলিভিশনে। উঁকি মেরে দেখি ফুলশয্যার খাটে নতুন বউ বসে,  পাশে নায়ক দাঁড়িয়ে নানান সংলাপ দিচ্ছেন। 
ওদিকে বৌদিদি দাদারা আড়ি পাতবার বন্দোবস্ত করছেন দরজা জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে। 
বউ বেশ ডানপিটে। 
আমি ডেকে বলতে যাচ্ছিলাম, যে আরে কোমরে আঁচলটা ভাল করে গুঁজে নেমে পড়। খাটের পাশে টেবিলে একটা বড় জলের জগ দেখতে পাচ্ছি তো। ওইটেই যার যার মাথায় পারিস ঢেলে দে গিয়ে। 

মোদ্দা কথা, আমাদের ফুলশয্যার রাতটা বেশ মনে পড়ে গেল আর কি। 

ওহ, সে কী কান্ড। 
একে মস্ত ফুলের মুকুট মাথায়। তার তারের খোঁচায় যন্ত্রণা করছে সন্ধ্যে থেকে। বাইরের লোকজন চলে যেতেই খুলে রেখে কিছুটা বেঁচেছি। 
তায় বড্ড বেশী চুল ছিল। দুটো মোটা বিনুনি করে তাদের পেঁচিয়ে মস্ত খোঁপা করতে সামনের বাড়ির দিদির অজস্র কাঁটা লেগেছে। সেগুলো নানা দিক থেকে ফুটছে মাথায়। 
গলায়, হাতে ফুলের গয়না, এমনি গয়না, আবার জরি দেয়া বেনারসি, কোমরে আমার ঠাকুমার বিশ ভরির ওপরের রূপোর বিছেহার দিয়ে বেল্টের মত আটকানো। 
অস্থির হয়ে আছি। 
জিন্স আর টি শার্ট, আর হাসপাতাল থেকে বেরলেই খোলা চুল, এই যার নিত্যকার সাজ, তার তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। 
খুড়শ্বাশুড়ি এবং শ্বাশুড়ি মায়েরা টের পেয়েছিলেন মনে হয়। 
তাড়াতাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো ছোট্ট ঘরে নিয়ে গিয়ে বললেন চুলটা খুলে নে, আর ফুলশয্যার জন্যে তত্ত্বে এই যে শাড়ি এনেছেন বাবা মা সেইটা পড়ে ফেল। 
একটা আগুন রঙ নরম রেশম, তাতে লাল আর গাঢ় সবুজ ছোট্ট ছোট্ট ফুল, সবুজের নক্সা করা পাড়। দোকানে বলেছিল, এর নাম কাশ্মীরি কাতান। হবেও বা। 
বাঙলা করে সেইটা পড়ে একটু আরাম হল। 
মাথায় ঠাকুমার হাতির দাঁতের চিরুনী ছিল অর্ধচন্দ্রাকার সোনা দিয়ে বাঁধানো। ওপেন তিনটে সোনার ফুল বসানো। প্রতিটি ফুলের মধ্যে একটা করে লাল চুনি। বার্মিজ ব্লাড। ছোট বেলা থেকে শখ ছিল, যেদিন বিয়ে হবে মাথায় দেব এইটা। আর বিছেহার কোমরে। এগুলো মায়ের চিহ্ন বলে বাবা খুব যত্নে তুলে রাখতে বলতেন আমার মাকে। 
বৌভাতে চিরুনীখানা মাথায় দিতে না করেছিলেন কি যেন ভেবে। বোধহয় মেয়ে কতটা ট্যালা জানতেন তাই। 
সে যাক। 
তখন এ সব মাথায় ছিল না। বাঁধা চুল আর খসখসে শাড়ি থেকে মুক্ত হচ্ছে আমার তখন লাফালাফি করার উৎসাহটা আবার ফিরে এসেছে। আমি জরির ফিতে, কাঁটা, চিরুনী সব বালিশের তলায় চালান করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। 
ও মা!  
পাশে ঘোরানো বারান্দার ও দিকে বৌয়ের সিংহাসনে এ কি কাণ্ড ? 
খালি গা। একখানা মস্ত টাওয়েল বাঘছালের মত পেঁচানো কোমরে, মাথায় আমার ফুলের মুকুট, একে ?  
চারপাশে শুধু হাহা আর হিহি আওয়াজ। 
সিংহাসনের দখলদার বলছেন, হা হা আমি লোমশ বাবা সোজা হিমালয় থেকে এখুনি এসে নেমেছি। শিগগির প্রণাম কর সবাই। 
-- হে হে ভাইকাকু
-- এই ভাই মামা 
-- দেখ দেখ ভাই 

এই সব আওয়াজ ভেসে আসছে নানা ধরনের হাসির সঙ্গে। 
ও কপাল। 
বুঝলাম সবচেয়ে ছোট খুড়শ্বশুর, পুলিশ তিনিও, আজ প্রধান চরিত্রে আছেন। 
আমিও গুটিগুটি দাঁত বের করে পৌঁছে যাচ্ছিলাম ওই দিকে। হঠাৎ দেখলাম দাদু দিদার ঘর থেকে দিদা এক হাতে পায়ের এক পাটি হাওয়াই চপ্পল নিয়ে দৌড়ে গেলেন। 
-- নাববি?  নাববি বৌয়ের চেয়ার থিকে?  হ্যাঁ! 
আক্কেল কি গজাবে না রে?  জুতা পিটা দেব। 
শ্বশুর হয়েছিস না হতভাগা ? নতুন বউ কি ভাবছে এই সব দেখে ? 

নতুন বউ আর বলার সুযোগ পেল না যে সে যার পর নাই খুশী হয়ে গেছে এই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখে। 
তার আগেই অভিনেতা এবং অডিয়েন্স ছত্রভঙ্গ। 
খালি হিমালয় থেকে সড়াৎ করে নেমে আসা লোমশ মুনি অমর হয়ে রইলেন সব্বার মনে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register