Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণ কাহিনীতে অমৃতা ভট্টাচার্য

maro news
ভ্রমণ কাহিনীতে অমৃতা ভট্টাচার্য কুয়াশায় ঢাকা একটা ভোর, একটা সকাল। বড়া ইমামবাড়ার সামনে দাঁড়ালেও রুমি দরওয়াজা ভালো করে ঠাহর হচ্ছে না। এমন সকালে রাস্তায় ভিড় কম। কুয়াশার গন্ধ ঠেলে জবাবী দরওয়াজাকে পিছনে ফেলে আরও খানিক এগোলেই ব্যস্ত জীবনের চলাচল। সে জীবনকে দেখব বলেই সঈফের সঙ্গে আজ বেরিয়ে পড়েছি। সরু গলি চিপা গলতার মাঝখান দিয়ে মানুষের জীবন বয়ে চলেছে। সে জীবনকে ছোয়া তো সহজ নয়! বরং সেই জীবনের ঘাটে কয়েক দণ্ড বসে দেখা যায় মাত্র। সাধারণ মানুষের সকালের নাস্তাকে বুঝে দেখবার একটা সামান্য চেষ্টা কেবল। সেসব ভেবেই না সকাল সকাল রিজওয়ানজীর লুচাইয়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি! আড়াই প্যাচের জিলিপি ভাজা হলে মোষের দুধের স্বাদু দই দিয়ে আমরা জিলিপি খাই। তারপরে আসে লুচাই। ডাল, শুখা আলুরদম আর দইয়ের স্বাদ মিলেমিশে কুয়াশার পর্দা সরে যাচ্ছে তখন। মায়েরা টিফিন বাক্স এগিয়ে দিচ্ছে, বাক্সে বাক্সে লুচাই তখন ইস্কুলের টিফিনবেলার জন্য সেজে উঠছে মহল্লা জুড়ে। লুচির চেয়ে অনেকটাই বড়, স্বাদেও অন্যরকম। একখানা খেলে আপনার মনে হবেই আরেকখানা খাই। কিন্তু তা বললে কি হয়! আসফাক জী'র দোকানে তিরঙ্গা চা, গোলাপি চা না খেলে এমন বিহানবেলায় খানিক উত্তাপ কুড়ানো কি সহজ! বরং চা খেয়ে আবার চলুন গলিপথে মিশে যাই। আধো-অন্ধকারে মানুষের ব্যস্ততায় মিশে যাওয়ার সে এক আশ্চর্য সকাল। খুব চিপা গলিতে গাড়ি তো ঢোকে না! মানুষেরা তাই খচ্চরের পিঠে বোচকা চাপিয়ে বাড়ির পথ ধরে। সেসব গলি পেরিয়ে ক্রমে বড় রাস্তায় এসে পড়ি। কোতোয়ালির সামনে খাস্তা কচুরি খাই। আরেকটু হাটলেই মালাই পানের সেই ঐন্দ্রজালিক মায়া। সেসব কাটাবো কেনন করে! গুপ্তাজী বলেন, একখানা খেলে কি হয়? কালি গাজরের হালুয়া খাবেন না! আচারি মঠরি? সেসব ডাক পিছনে ফেলে আবার সেই গলিপথ, আবার হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ। জগদীশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে আপনি বেথোশাকের পুরি খেয়ে দেখবেন না তাও কি হয়! সেই অনন্ত গলিপথে মিশে যেতে যেতে দেখি চিকনকারির নক্সা আঁকছে ব্যস্ত সকাল। হাড়ি পাতিলে রান্নার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সেসব গন্ধের ওপারে জেগে আছে ইদ্রিসের দোকান। কুয়াশার সকালে বিরিয়ানি নামেনি এখনও। তাই বলে, নাস্তা! কুলচা দিয়ে নিহারি খাবে না মানুষ! খাবেই তো। নরম রুটি দিয়ে মাটন স্টু-ও খাবে। খেতে খেতে তারা কেবলই ভাববে ইতিহাসের শহর কত গল্পই ভাঙে আর গড়ে। এ শহর নিজেই বুঝি এক গল্প বলিয়ে। আশ্চর্য ওর জুবান। যে শহরে ইতরের( আতর) নাম দস্তক, সে শহর যে কোন মগ্ন চৈতন্যের অতলে ডাক দেয় কে জানে! ভেঙে পড়া ঝরোকার ওপার থেকে তাকে জিজ্ঞেস করতে সাধ হয়, ' অবনী বাড়ি আছো?'
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register