Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

অস্তাচলের সূর্য

  এতরাতে পাশের বাড়ির ডাকাডাকি শুনে চমকে উঠে এগিয়ে গেলাম জানালার কাছে। কাঁচের জানালার ওপাশে নিস্তব্ধ পাড়াটা কেমন অসাড় হয়ে পড়ে আছে। আজ ঠান্ডাটাও পড়েছে জাঁকিয়ে। আমাদের এদিকটাতে তো এক্সট্রিম ওয়েদার থাকে। শীতে ৩/৪ ডিগ্রী আর গরমে ৪৪/৪৫ ডিগ্রী। আজতো বিকেল থেকেই পথঘাট শূনসান। সব বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ। তার মধ্যে রাতের এগারোটাতে এমন হাঁকডাক কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বৈকি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির লোকজনের কথা শোনার চেষ্টা করছি। একটু একটু যা কানে এল তাতে বুঝলাম যে বামুন বাড়ির কর্তামা'র কিছু একটা প্রবলেম হয়েছে। অবশ্য কর্তামা' কিন্তু বুড়ি থুরথুরি হয়ে যাননি। আসলে এই কর্তামা' হলেন স্বর্গীয় কর্তামশাইয়ের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। কর্তামশাই ছিলেন তখনকার দিনের সরকারী হাসপাতালের কম্পাউন্ডার। অত্যন্ত ভালো এই মানুষটা পাড়ার লোকের কাছে পুরুতডাক্তার নামেই পরিচিত ছিলেন। পাড়াপ্রতিবেশীর হাঁচিকাশি জ্বরজ্বালার ওষুধ ইনজেকশনের যোগান তিনিই দিতেন। মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে যা দিত তাতেই তিনি খুশি। টাকাপয়সা হোক বা বাড়ির গাছের ফলমূল শাকসব্জি যে যা দিতে পারত তাই হাসিমুখে রেখে দিতেন। কোনোদিন কারোর কাছে কিছু চাইতেননা। তবে কেউ চিকিৎসায় গাফিলতি করলে তিনি তাকে পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতেন। এমন একজন মানুষের প্রথম স্ত্রী যখন ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান তখন মাহারা অসহায় শিশুদের জন্যই আবার বিয়ে করতে বাধ্য হন। আগের স্ত্রীর পাঁচটি সন্তানের দায়িত্ব নিতে যিনি এলেন তিনিও তিন ছেলের জন্ম দিলেন। চতুর্থবারে আর ফিরলেননা। এবার আট ছেলেমেয়ের দায়িত্ব কে নেবে? এদিকে বড় মেয়ে দুটোর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তাঁর মায়েরো অনেক বয়স হয়েছিল। বাধ্য হয়ে আবার একজনকে বিয়ে করে আনলেন। নতুন মায়ের সাথে মেয়েদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ছেলেরাও মাকে সম্মান করে। নতুন মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় মেয়ে দুটোর বিয়ে হল। বড় ছেলের বিয়ের জন্য যখন মেয়ে দেখা চলছে তখনই নতুন মায়েরো প্রথম ছেলে হল। এদিকে পাত্রীপক্ষের লোকজনের আসাযাওয়া লেগে আছে ওদিকে নতুন মা আঁতুরঘরে। সংসারে তখন ডামাডোল দশা। অবস্থা সামলাতে তখন নতুন মায়ের ছোটবোন এল এবাড়িতে। সেই থেকে নতুনমাসি এবাড়িতেই রয়েছেন। অবশ্য নিন্দুকেরা বলে মাসি হলেন কর্তার অলিখিত স্ত্রী। সে যাইহোক সেই কর্তামা'ই যখন আজ আলোচনার বিষয় তখন বুঝতে বাকি থাকেনা যে এবার সূর্য অস্তাচলে যাবার সময় হয়ে এল। ভালো থাকবেন কর্তামা।আপনার মতো মানুষ আজকের দিনে বিরল। পরের ছেলেমেয়েদের আপনি যেভাবে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছেন এমনটা সচরাচর দেখা যায়না। এজন্য আপনার ছেলেমেয়েরাও আপনাকে খুব ভালবাসে। শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। ভালো থাকবেন নতুন মাসি। আমরা সংজ্ঞা আর ছায়ার গল্প পড়েছি। সে গল্পের বাস্তব উদাহরণ সমাজে কত যে লুকিয়ে আছে জানা নেই। আপনার মতো ছায়াসঙ্গীরাও অবশ্য প্রণম্য।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register