Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

|| প্রেমের বাসন্তী চিঠি সংখ্যায় || ঋত্বিক সেনগুপ্ত (রম্যরচনা)

maro news
|| প্রেমের বাসন্তী চিঠি সংখ্যায় || ঋত্বিক সেনগুপ্ত (রম্যরচনা)

বাসন্তী

বিভিন্ন মানুষ, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন ক্লাইমেট চেঞ্জ! তাই সরস্বতী পুজোর দিনও এতো ঠান্ডা। লেপমুড়ি দিয়ে সকাল হল আমার এইবছর। আবহাওয়া, মনের আকাশে তো পালটেছে বটেই।

সাদা প্রতিমার পাশে রাখা পাঠ্য বই। আশীর্ব্বাদের আকুতির চেয়ে, পড়তে না বসার আশ্বাসটা, অনেক শ্রেয় কারণ ছিল - অন্তত এই অধমের কাছে। এছাড়া, ছেলেবেলার সরস্বতী পুজোর স্মৃতি বলতে, যে ছবিটা ফুটে ওঠে, পলাশ ফুল, কাগজের সাদা মালা, চিনির-মঠ, দোয়াতে রাখা দুধ, আর তা'তে চোবানো খাগযবের কলম, প্রসাদের থালায় ভোগের খিচুড়ি আর তার পাশের থালায় নারকেলি-কুল, একটু দূরে রাখা বাটিতে, টোপা-কুলের চাটনি...ঠায় বসে অঞ্জলি দিয়ে, এক দৌড়ে খেলতে যাওয়া, আজকের খানিক বাঁধন ছাড়া চড়ে বেড়ানো; এই জিনিসগুলি যেন প্রেক্ষাপট জুড়ে।

যখন কৈশোরে পড়লাম, মনের দিগন্ত খানিক প্রসারিত হয়ে সরস্বতী পুজোর উৎসবের মুখাবয়ব চিনতে শিখেছে। বাসন্তী রঙের শাড়ি, একটা মাত্রা এঁকে দিলো পুজোর আমেজে । ছোট-ছোট দলে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে শাড়ি-পাঞ্জাবি পরণে ছেলে মেয়ের দল - আকাশের ছড়ানো-ছিটানো কিছু সাদা মেঘের মতন, গন্তব্য বিশেষ জানা নেই। ইস্কুলে, যে দিদিরা শাড়ি পড়েছে তারা তখন আমাদের চেয়ে একটু বড় - মঞ্চ সাজানো, কাইট পেপার কেটে ডেকরেশন আর আলপনা দেওয়া ওদের কাজ, আর লাইট লাগাচ্ছে নাইন-টেনের দাদারা। খেয়াল করতাম পুজোর পড়ে অনেক শাড়ি পড়া দিদি হয়তো বাড়ির পথের উল্টো দিকে হাঁটছে, হয়তো পরিচিত দলের বাইরে। দেখতে দেখতে, সেই অন্যপথে খানিকটা হাঁটার, চোরা-মাতামাতির খবর, শুক-শাড়ি পাখির মুখ বেয়ে আমার গোচর হল! পিয়ালিদি বলল, একটা কাজ করে দিবি, এই খামটা একটু আমাদের বি-সেক্শনের প্রান্তিককে দিয়ে আয়, খুলবিনা, দরকারি কাগজ আছে....আর বলবি বাসু বুক কর্ণারে পাওয়া যাবে। আরো কয়েক বছর পরে যখন পিয়ালিদির খামের মর্ম বুঝলাম, মনে হয়েছিল, আমি সেদিন পিয়ালিদির রাণার ছিলাম- সেই "কত চিঠি লেখে লোকে, কত সুখে-প্রেমে-আবেগে...", কিন্তু সেই চিঠির সাড়া পেয়েছিল কিনা, পিয়ালিদি, এখনও জানিনা। নাকি জানি?!

সাদা প্রতিমার সামনে, হালকা বাসন্তী রঙে যারা রঙ মাখে বা মাখায়, স্কুল বা কলেজের মাঠের একটা কোনাতে পাঁচ মিনিট বসে অনেক কিছু বলার ছিল - কিন্তু লাজুক মুচকি হাসিটা রেশ শেষ হবার, সুযোগ না দিয়ে, একজনের বেস্ট-ফ্রেন্ড এসে ছন্দপতন করিয়ে দিল, ডেকে নিয়ে গেলো, তাদের বাড়িতে! আজ বাড়িতে বসে কেন আড্ডা দেবে? একটু পথে পথে, গল্পে-হাসিতে সন্ধ্যা আসুক, কখন ও পকেট-মানি শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কল্পনা জড়ানো, মিঠে হাসি, বেলা বেড়ে, দিন গড়িয়ে উষ্ণ হয়ে ঊঠুক। বছরের অল্প কয়েকটা দিনই তো দেখেছি, আলু-কাবলিওয়ালা আর হজমিওয়ালা, দুপুর-দুপুর পসার গুটিয়ে বাড়ি যায় - ওদের বাড়িতে ও বেলায়-বেলায় বসন্তের ছোঁয়া লাগুক। একটা রাধাচুড়া গাছের পাতা দেখে মনে হল, বাবাকে বললাম দেখো, নতুন পাতাগুলো বাসন্তী রঙ না? বাবা , স্মিত হেসে বললেন, ঠিক বলেছো, চোখে তেমনই লাগছে। আমি বললাম, কিন্তু গতকাল তো এইরকম লাগছিল না! বলেছিলেন দেশে থাকতে আমি দেখেছিলাম, এইদিনে ক্ষেতের ফসলেও রঙ পাল্টায় - এটা বসন্ত আসার রঙ।

আসলে, এখনও দেখছি, গতকাল তো মনটা এইরকম লাগছিল না। আজ বোধহয় সকলের অন্যরকম লাগছে। সব ইস্কুলে পিয়ালিদিদের, আমার মতো পত্রবাহকদের, হজমিওয়ালাদের, রাধাচুড়ার পাতাগুলো - সব। আমি লিখছি, আর আমাদের বারান্দার দরজার ওপরে বসে দুটো পায়রা বিরামহীন বক-বকম করে চলেছে।

বসন্ত, এসে গেছে!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register