Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে যুথিকা সাহা (গল্প - শেষ পর্ব)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে যুথিকা সাহা (গল্প - শেষ পর্ব)

দাসী

কয়েক দিন কেটে গেল ভালোই ,বাবুনদা তার ভালোবাসার সবটুকুই মনের মানুষের কাছে যেন গচ্ছিত রেখে দিয়ে তার ভাললোবাসাকে সাথে নিয়ে চলে গেল । একথাটাও বলে গেছিলো আর দেরী নেই------সময় হয়ে এসেছে আর কিছু দিন পর সব সমস্যার সমাধান করে আমরা দুজনে দুজনের হয়ে তোমাকে আমার করে নেবো..... কারো ক্ষমতা নেই আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নেবার বুঝলে ! বাবুনদা আরো বলছিল অনিমাকে ---জানিস ওকে আমিই তৈরী করে নেবো ও পারবে আমি দেখেছি ওর মধ্যে সেই আগ্ৰহ আছে ।ইংরেজীতে কথা বলানো থেকে পড়া সব সব---- মানুষ সব পারে জানিস ,শুধু তাকে গড়ে তোলার কায়দাটা জানতে হয় ।বাবুনদা খুব ভালো দাবা খেলতেও জানতো ,কত প্রাইজ আছে ওর,ভালো ডিবেট করতে জানতো ।সুমি একবার দেখে ছিল কি বলার ভঙ্গিমা ! সত্যিই মায়ের আদর্শ ছেলে ,আর ব্যবহার ছিল খুব ভালো ,পাড়াতে সকলের সাথে মিশতো ,ক্লাবেও যেত ক্যারাম খেলতো ,আর একটা বড় গুন ছিল ও গীটার বাজাতো । আমাদের ওখানে বাউলের আখড়ায় গিয়ে ওদের গান শুনতো ...... এই করে বেশ কিছু দিন গেল ------ একদিন অনিমা ফোন করে সুমিকে বললো বাড়ি আছিস ? বলল হ্যাঁ । আমি আসছি তোর সাথে কথা আছে ...ওএল বললো বাবুনদা র চিঠি এসেছে,যে ও বলছে টুকিকে যেন ওর মাকে আমরা দেখাই আর এটা যে বাবুনদার মা এটা টুকিকে বুঝতে দিসনা কেমন! বললে ও ঘাবড়ে যাবে হয়তো আর মাকে সব বলে দিয়েছি মা জানে কোন আপত্তি তো করবেই না ,আরো ওর সাথে ভালো করে মিশবে । একটা কথা ওর মার সাথে কথা হয়ে গেছে পুজোর সময় এসে রেজিস্ট্রী করবে পুরো পাক্কা । যা করার তোরা করবি আমি গিয়ে শুধু সই মারবো ......!
বল এবারে কি করবি ?সুমি বললো,একটু ভাবতে দে ,ওর মার সাথে দেখা করানোটা তো আশ্চর্য কিছু নেই ,,,,,, মোদ্দা কথা টুকিদের বাড়িতে গিয়ে কি বলা সহজ হবে ভেবে দেখ একবার ? না বলেই কাজটা করবো ভাবছি কি বলিস তুই ....?ওদের বাড়িতে তো আমাকে পছন্দ করে না, আর তোকে ওরে বাবা !!আমাকে যে সুনজরে দেখে তাও না অনিমা বলে উঠলো দেখ কি করবি ...?দু- তিন মাসের ব্যাপার এর মধ্যেই সারতে হবে ।দেখছি বাবার সঙ্গে ভাবছি আলোচনা করবো । হ্যাঁ তাই ভালো কাকু কি বলে দেখ ,আমার বাবা তো সুরাট গেল মাল বুক করতে ,ওদের শাড়ির ব্যবসা ।তুই ভেবে যা করবি আমায় তাড়াতাড়ি জানাস কেমন .....
এদিকে টুকিদের কোন চেনা আত্মীয় তার বাবার কাছে সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে। ছেলে ব্যাংক চাকুরে এখানে বাড়ি থাকে কলকাতায় ।তারা তো দেরী করবে না ,দেখতে আসবে তাই ওর মা ,দিদিরা, দাদা বাবা আলোচনা করে ওদের শহরের কাকার বাড়িতে নিয়ে গেল । ছেলে পক্ষ থেকে দেখতে এলো ......ওমা!!! এটা ছেলে সে তো শালা বাপের বয়সের কাছে .!!ওরে বাবা তারা তো ওকে দেখেই তখনই পারলে আশীর্বাদ করে .....! ওদের বাড়ির সবার এমনকি ওর বাবার ও পছন্দ ! ছেলেদের বাড়ি থেকে ঘন ঘন খবর আসছে বিঁয়ের জন্য .. এদিকে বাড়িতে একটু অশান্তি চলছে এসব নিয়ে ,ওই অমলের মা গেছিল সে দেখে এসে পাড়াতে কইছে সবাই কে ,ছেলের মাথা পুরো নেড়া এই মোটা কালো মোষের মতো .....!এর লগে কেউ মাইয়্যা দেয়! হায় হায় ! কলপাড়ে সব কথা ,মনা কইলো কেন ওরে এর আগে তো তো কোন সম্বন্ধ দেখায় নাই ,একটা দেখাইয়্যা কেউ বিঁয়া দেয় ,বিঁয়া মানে লাখ কথা ......... এবার প্রায় ঠিকই হয়ে গেছে ,টুকিকে জিজ্ঞেস করলে ও কেঁদে ফেললো ,ওদের বাড়ির সকলে বললো ছেলে ভালো ওসব কেঁদে লাভ নেই,আমরা যেটা ভালো বুঝবো করবো । মা তোমাকে বলে দিলাম এখানে যদি বিঁয়ে না হয় আমার সঙ্গে তোমাদের কোন সম্পর্ক নেই আর এই মেয়ের জন্য তোমাকে পথে নামতে হবে এই বলে দিলাম ।ওর বাবা বললো ওর কথায় সব হবে নাকি ,আমার জানা মানুষ কত বড় মুখ ক‍রে নিয়ে এসেছে এই সম্বন্ধ আমি ও আমার কথা রাখবো ,লোকেরা বলাবলি করছে তো তাদের কাছে গিয়ে থাক গিয়ে তারা বিঁয়ে দিক । বাড়িতে বাবাও এবার শুরু করলো অশান্তি,বললো রাঙামূলো এনে দিতে হবে ওনাকে? ঈস কি ভাষা-!!-- অমলের মা বাড়ি থেকে এসে জাম গাছতলায় যেখানে সবাই দাঁড়িয়ে ছিলো ওখানে সব বলতে লাগলো । সবাই বললো কেন বুড়ি হইয়্যা গেসে ,না কানা খোঁড়া যে এক সমন্ধেই বিঁয়া দিতে হইবো, এমন মানুষ দেখি নাই বাপু !! আরে না না গল্প আছে -----বাপু কিছু নিবো না শুনলাম তাই বিনে পয়সায় যদি বিঁয়ে হয় সেটা হাতছাড়া করবে না বুঝলে! কেন যে জম্ম দেয় !এর থেকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া ভালো ..... পাড়ার মানুষের মুখকে আটকাবে শুনি! মন্দ দেখলে ওরা বলবেই ,তার ওপর ওনাদের বাড়ির কেচ্ছা সবার জানা আছে ....
এই নিয়েই কয়েকদিন চললো খুব অশান্তি ,তার জ্বালা মা তার ওপর মেটাতে ছাড়ে না এখনো...... দিনের বেলা মারে না এখন ছুতোয় নাতায় তাকে রাতে চোরা মার মারে ! কে জানে কোন ব্যাপার আছে নাকি ,সেটাও ধরা পড়ে গেল অমলের মার চোখে । একদিন রাতে হ্যারিকেন নিয়ে ওদের বাড়ি গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ করে ওর মা গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে চেপে ধরে আছে ,আর বলছে বল কোন মিংসের সাথে কিছু করেছিস না বললে আজ ছাড়বো না তোকে চোখ কানা করে রেখে দেবো ভগবানের ও সাধ্যি নেই দেখি কে বাঁচায় ,সত্যিই অমলের মাকে মনে হয় ভগবানই পাঠিয়েছে ,দরজা ঠেলে তার হাত থেকে খুন্তি একঝটকায় মাটিতে ফেলে দিয়ে বলে ......তুমি এমন পাষন্ড তুমি না নিজে মাইয়্যা মানুষ ,এই কাম কেউ করে ? কিয়ের শত্রুতা ওর লগে? কইলো পাড়ার সক্বলেরে জানামু এতদিন কিছু কই নাই ----- তোমাগো বাড়ির অনেক ঘটনাই আমার জানা কইলো দেইখ্যো কি করি ,তোমার কামের নিকুজি করসি ,এই বলে ওকে বুলিদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে সব বললো ... কয় জানেন তো হ্যেগো বাড়ির নোংরা যা কাম আছে আমি জানি ----দরকার হয় ওরে আমি এখান থিক্যা সরাইয়া দিমু ,এরা মানুষ খুন করা লোক গো ...! ওর কাকা বলতেই,,,,,,, বুলির দাদা মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বললো।টুকি আর বাড়ি যায় নাই ,ওই অমলের মার বাড়িতেই ছিল । একদিন পর কি মনে হয়েছে যাই হোক বাড়িতে সব আলোচনা করে অমলের মার বাড়ি গিয়ে ওর মা বললো-----শোন যা হয়েছে তা ভুলে যাও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তুমি পাঁচকান কোরো না ,দেখ বিঁয়ে হলে হবে না হলে হবেনা ..। অমলের মাও বুঝলো এটা শেখানো বুলি ! তোমাগো কথা তো সক্কলেই শুনছে ,কথা কি আর চাপা থাকে দেওয়ালেরও কান আছে ,এই তো পার্টি অফিসে সব আলোচনা হইতাসে এইই তোসন্ধ্যা কয়া গেলো। জিগাও ওরে ডাইক্যা ? ও সন্ধ্যা অমলের মা ডাকলো ? সন্ধ্যা তো হলবলানি বললো ,বৌদি তোমারে এমন ভাবি নাই ! আমার ও তো কতগুলা মাইয়্যা কই আমরা তো এমন করিনা .. ছিঃ তোমরা কি করতাসো রাস্তায় ,পার্টি অফিসে জাইন্যা ফালাইসে,এমনিতেই ওরা লাল পার্টির লোক ,তোমাগো বাড়ির দেওর , ছেলে তো অন্য দল করে ভাইব্যা দেইখ্যো? ওরা এখন যার ঘরে এরকম হইবো বাড়িতে আইস্যা চড়াও হইবো---- এমেলের কানে গেলে কি হইবো জানোতো ? ওর নাম জানোতো কি ,এমনিতেই কতদিন থিক্যা এই অঞ্চলে গন্ডোগোল দুই দলে এখনো এইখানে অনেকেই ঘর ছাড়া, বিনা দোষে এসব কইর‍্যো না এই কয়াদিলাম ... এইবার ভয় ধরে গেল ---এর মধ্যেই শুনি ওনার ছেলেরে পুলিশ খোঁজে ,ধর্মের কল বাতাসে নড়ে দ্যাখ ঠ্যেলা বোঝ এখন ...!! তখন ওখানে বোমা বাজি ,খুন মারামারি লেগেই আছে ,দিন কি রাত ... যাক এখন সব চুপচাপ রয়েছে ,দুদিন পরে গঙ্গাপুজো ঐ ঘোষপাড়ার আগে প্যান্ডেল হয় পুজো হয় ,সবাই যায় । সেদিন সবাই গঙ্গায় যায় দশহরা ভালো দিন বুলিদের বাড়ির সবাই ,ছবি মনা অমলের মা সবাই যাচ্ছে -----তা বড় বৌ যাইবা না ? বললো না গো ,তাইলে তোমাগো পূজা কে দিবো ?বললো টুকিকে নিয়ে যাও ও দিয়ে আসুক ,বললো চল টুকি তখন খুব সকাল। সবাই চললো মনা মাসি কে বললো টুকি ,আচ্ছা যাওয়ার সময় তো অরবিন্দ আশ্রম পরবে যাবে মাসি ? বললো হ্যাঁ যামু ঐ খান দিয়া তো যামু রে। অনেক ফলের গাছ আছে ,আমি ও অনেক দিন যাইনা চল সবাই যামু ।সবাই গেল এগাছ দেখে ওগাছ দেখে ,বলে দেখ কিসুন্দর আম ধরেছে ,কত সুন্দর ফুল .......টুকি সেই মন্দিরের কাছে গেল------ পূজারী বললো কি গো মা তুমি তো আর আসো না এদিকে ? বললো একা তো আসতে পারিনা তাই ,,,, তা বেশ করেছো ,আজ কে এসেছে ? বললো ঐ দেখ কত মানুষ ,আজ গঙ্গা পুজো তো তাই সবাই গঙ্গায় চান করে পুজো দেবে ... এখানে পুজো হয়ে গেছে? বললো এখানে পুজোর কোনো শেষ নেই মা তুমি যখন খুশি প্রার্থনা করতে পারো । ঐ একটা গোলাপ নাও তার পর তোমার মনের বাসনা জানাও ঠিক পৌঁছে যাবে ঈশ্বরের কাছে আমি তো স্নান করিনি? ধুর তাতে কি !! মনের ভক্তি বড় ওতে কিছু হয়না । যদি পাপ হয় ? পাপ পুণ্যের বিচার আমরা করার কেউ নই মা ,মানুষই যত কুসংস্কার তৈরী করে ।তুমি কি সুন্দর কথা বলো মন শান্তি হয় ... হেসে বললো এখানে বসে তোমার মনের সব কথা খুলে বলো .. সত্যিই মনে হয় ঈশ্বর ওর ডাক শুনেছিল। এবার ওরা সব গঙ্গায় গেল । সবাই চান করছে ,আবার গঙ্গার জলে ফুল ফল ,প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে ভাসাচ্ছে .. বুলির মা বললো ---এই এদিকে আয় তোরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাক কেমন ,আমরা তোদের ধরে চান করিয়ে দিচ্ছি। অমলের মা বললো এখানেই থাক মা কত্ত লোক দায়িত্ব কইর‍্যা আনছি তো ? ঠিক আছে তোমার চিন্তা নেই । আমিকি ছোট যে তোমার কথা শুনবো না ...? ও দেখলো একটা নৌকা ,বললো তুমি কি এখন নৌকা চড়াবে ?.. .লা গো মেয়ে এই দেখছো না মানুষ গুলান কে ----ওরা আমাকে আগাম টাকা দিয়ে রেকেচে ওই খানে গিয়ে জলে পুজো করবে । ওরা হিন্দুস্থানী ও অলেক নেয়ম করে ..... আমি তো ঘাট পার করার কাম করি । আজ এই কাম করবো কিছু রোজগার হবে ।তুমি অন্য দিন এসো লৌকা চড়াবো .....সবাই চান করে ওখানে পুজো দিচ্ছে এই করে একে একে করছে ,এই টুকি বলে ডাকলো বুলির মা? বললো এই তো এখানে দাঁড়িয়ে আছি । থাক এরপর তুই করবি ।ওমা এর মধ্যেই টুকি ও চান করতে গেল ---এইই তো এখানে কর ,ডুব দিয়ে উঠে পর বলতেই হঠাৎ কতগুলো মেয়ে মানুষ ওখানেই চান করতে লাগলো দল বেঁধে ! টুকিকে দেখছেনা অমলের মা ! এইখানেই তো ছিল? এরা আবার দল বেঁধে কোথা থেকে হঠাৎ করে নেমে পরলো কিরে বাবা!!! বুলির বৌদির সাথে তো তক্ক লেগে গেল ! কেন আপনাদের জায়গা তো ওদিকে ? ওরা হিন্দস্থানী ওরা কি শোনে! উল্টে বললো ,আরে আপনা কাম করো না ..?এই ওপরে দেখতো ? সে ওপর নীচে এদিকে ওদিকে কোথাও নেই! অমলের মা তো কাঁদতে লাগলো ----কি সব্বনাশ হইলো !! এহন আমি কি করুম ঠাউর ... সবাই তো খুঁজে পেল না ঘাট ও প্রায় ফাঁকা হতে লাগলো ,বেলা বেড়ে গেলো ।এই দেরী দেখে ছবিদির ছেলে ডাকতে এলো এতো বেলা তো হয় না ......! এসে দেখে এই অবস্থা ,ও ওর বন্ধুদের নিয়ে এদিকে ওদিকে দেখতে লাগল ,আর কোথায় পায়? মা যে ওকে কোলে নিয়ে গেছে ,আর মায়ের থেকে তাকে কে নেবে শুনি .......! চার দিকে খবর ছড়িয়ে পরলো । সুমি শুনে তো প্রায় অজ্ঞান অবস্থা ! অনিমা খবর পেল সে তো কান্না কাটি পড়ে গেল ...আজকাল পুজোর প্যান্ডেলে তো ঠাকুরের গান বাজে না তাই ঐ সেই মিঠুনের সিনেমার গানটা চলছিল "ও আমার সজনী গো ..."। ওর প্রায় কাছেই ছিল সুমিদের বাড়ি ,ওদের বাড়িটা বিশাল লম্বা আর বড় পেছনে ওদের কারখানা .....চিৎকার করে বলছে ওমা .....মা বলোনা মাইকটা বন্ধ করতে ,আমি শুনতে পারছিনা .....! হাতের কাছে যা ছিল সব ছুঁড়ে ফেলতে লাগলো ....ওর ঠাকুমা ,জেঠিমা সব ছুটে এল বললো জল দে মাথায় ওর না মাথাটা খারাপ হয়ে যায় ! এত সাহসী মেয়ে তার এই অবস্থা .....! এদিকে রাস্তায় মোরে মোরে জটলা ওমুকের মেয়ে জলে ডুবে মরেছে ..... সারাদিন কাটলো এই ভাবে ,বিকেলে ওর দেহটা ভেসে উঠল মাধাই পুরের ঘাটে । ওখানের এক মাস্টার এই সামনের স্কুলে পড়াতেন সেই সুবাদেই টুকিকে চেনে ওখানেই ওনার বাড়ি। মাস্টার মশায়ের ছোট ছেলে শুনেছে যে ঘাটে একটাবডি পাওয়া গেছে ....সে শুনে সবাই গেছে ,গিয়ে বডিটা ওল্টাতেই দেখে এতো টুকি ..!! সঙ্গে সঙ্গে সবখবর হয়ে যায় চারদিকে ,পুলিশ আসে ওদের বাড়ির লোকজন ও সব আসে ... কত মানুষের ভিড় হলদে রঙের ফ্রক পরা ,মুখটা কি মায়াবী মনে হয় কত শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। সবাই কাঁদছে ,ওর বন্ধুরা তাদের বাবা মা সবাই দেখতে এসেছে ।এখন পুলিশ কেস্ হয়ে গেলো,সে নানা প্রশ্ন ......????বডিটাকে বেঁধে নিয়ে গেল পোস্টমর্টেম করতে ..!বললো কাল বডি আসবে ওখানকার কাউন্সিলর বললো আমরা সব ব্যবস্থা করছি ,যা বাব্বা চলে গেলো পার্টির হাতে .!!!... সেদিন তো কারো ঘরে খাওয়া নেই ,কেউ বললো বাঁচলো মেয়েটা ,আবার কেউ বললো চোখে দেখা যায় না গো!! চোখের সামনে বড় হইলো ...এই নানা প্রশ্ন ..?? অনেকে ওর মাকে দেখিয়ে বললো নে আর কাকে মারবি শয়তান ,তোরও কি অবস্থা হয় দেখিস ..গ্ৰামের ব্যাপার ,সব কত শাপ শাপান্ত করতে লাগলো .....
এদিকে সুমির ঘুম খাওয়া সব উঠেছে,ডাক্তার এসেছে বললো, প্রচন্ড মানষিক আঘাতের ফলে এই অবস্থা ,ঘুমের ইনজ্যাকশান দিয়ে যাচ্ছি ওর ঘুমের প্রয়োজন ... অনিমাও ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে ওঠে ,ওর মা ঠাকুমা তো চিন্তায় পড়ে গেল । ওর বাবাও নেই ,ওর কাকিমা ও কাকা কে খবর দেওয়া হলে তারা এল ... ওর কাকিমা এসে বুঝিয়ে টুঝিয়ে বললো এখন অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেল তোদের বুঝলি ! বাবুনদার কিহবে ??পাড়ায় তো কেউ জানেনা টুকি বাবুনদার কথাটা---- ওর মা কেও তোরা টুকি কে দেখাসনি ..? এবার আরো কঠিন কাজ, সুমির বাড়িতে গিয়ে সুমিকেও বোঝালো ।বললো ওর এই কেরিয়ার নষ্ট করা যাবে না ,ওকে তোদের এই দু তিন মাস প্রক্সি দিতে হবে রে --- আমি তোদের সাথে আছি। কাকিমা বললো চুপচাপ কাজ চালিয়ে যেতে হবে । এখন কে বল ওর হাতের লেখা নকল করতে পারবি .....? বললো সুমি এগুলো ভালো পারে ....? সুমি বললো আমি!!! না পারবোনা কিছুতেই না----- ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে পারতেই হবে। একজন মরে গেছে আর একজন সব হাতের কাছে পেয়ে সব হারাবে বল ??.. ওআগে আসুক তো তখন দেখা যাবে .....একটু বোঝ মা ...
এই করে সুমি নকল করে লেখে আগে টুকি যেভাবে লিখতো ঐ ভাবেই । ওর কাকিমা বলে দেয় চলে এই ভাবেই... পুজো এসে গেল প্রায় ওরাও ভয় পাচ্ছে ..!কাকিমা বললো শক্ত কর মনটাকে । আগের বার বাবুনদা কত কিছু এনে ছিল আমাদের সকলের জন্য জানো কাকিমা ? টুকির জন্য টাকা রেখে যায় ওর ভালো জামা কাপড়ের জন্য ,কিন্ত আমরা ভেবে ছিলাম নতুন জামা পরলে ও ধরা পরে যাবে ওর মার কাছে .... তাই পুজোর সময় তো আমরা এর ওর জামা পাল্টে পরি তাহলে কিছু হবেনা ।
পরশু পঞ্চমী ওই দিন আসবে বলেই জোরে কান্না .... .বললো চুপ কর মা। যথা সময়ে বাবুনদা এসে হাজির তার বাড়িতে । কিছু বাদেই সুমির বাড়ি ,সে কি আনন্দ .......ঠাকুমা বললো এই যে এসেছো ,এবার নাড়ু ,মালপোয়া সব খাও ,কিন্ত এই বুড়িটার কথা মনে পড়ে বাপ? .. .কি যে বলো না ..... সুমি কই ? এই তো আয় আয় ..চল কি খাবি বল ? আগে আমার সব খবর দে ...? অনিমাও এলো বললো সব হবে । বাবুন বললো কাল বেরোচ্ছিস তো ? গাড়ি নিয়ে একটু বাইরে কৃষ্ণনগর যাবো বুঝলি ।আরে টুকি তো ওর কাকার বাড়ি ওকে তো আনতে যেতে হবে ? এক কাজ করলে হয়না ওদের বাড়িতে বাবা আর কাকু কে পাঠালে কেমন হয় ,,,,, ধর বিঁয়ের প্রস্তাব দিয়ে....... ভেবে দেখছি .... পরদিন আবার এলো কি রে তোরা এবার গা ছাড়া ভাব ......?? না না কি যে বলিসনা ! দেখ ওর মনে হয় বিঁয়ে ঠিক করছে ? এই ঠাট্টা করিসনা ...! সুমি হঠাৎ কেঁদে উঠল জোরে ....... এই তোর কি হলো পুজোর দিনে ? ওকে টানতেই ও ....ওবাবুনদা.....দা বলে জোরে চিৎকার করে উঠে বললো.. ... আমি আর কত মিথ্যের বোঝা বইবো বলতে পারিস তুই ? বলতে পারিস ...? কি হলো হঠাৎ তোর .? .হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলছি রে জোরে বললো টুকি ....অ্যাঁ অ্যাঁ করে .......কি বল? ও .....ও মরে গেছে জলে ডুবে গঙ্গা পুজোর দিন ... তখনো পুজো প্যান্ডেলে ঐ হিট গান ..."ও আমার সজনী গো.."বাবুন গানটা এতক্ষন শুনছিল হঠাৎ ওর কথা শুনে বললো আরে কি আজেবাজে বলছিস ...??? অনিমার কাকিমা বললো---হ্যাঁ ঠিক বলছে বাবা । সুমির ঠাকুমা ,মা,বাবা সবাই বললো ----চোখের জল ফেলতে ফেলতে হ্যাঁ রে বাবা ঠিক কথা। বাবুন কেমন হতাশ অবস্থায় ডুকরে কেঁদে উঠলো..... আমাকে তোরা একবার ও জানালিনা না কেন? কেন ???..... বলে সে কি কান্না ... সবাই বললো তোমার জীবনের কেরিয়ার শেষের মুহূর্তে এই কথাটা বললে তোমার জীবনের যে সব ছারখার হয়ে যেতো বাবু। মা বাবারা তো চিরদিন থাকবেনা বলো ,তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে যে বাবা ,তোমার জীবনের এতবড় সাফল্য কি করে পন্ড করি বলোতো .....? আর আমার জীবনটা যে ছারখার হয়ে গেলো ?আমার ভালোবাসা কি মিথ্যে .??. বলেই জ্ঞান হারালো ...!!তারপর ওদের বাড়িতে খবর দেওয়া হলো। সবাই এলো ---সুমির বাবা ডাক্তার আনলো ,বললো ভয়ানক মানষিক আঘাত ,ওষুধ দিচ্ছি ঠিকই ,কিন্ত আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে ,যা শুনলাম একে পড়াশোনার চাপ তার ওপর এই অবস্থা,,,, আমি বলছি কলকাতায় আমার এক বন্ধু আছে ,ও বড় প্রফেসর ডাক্তার ও আপনাদের সাহায্য করবে ।সুমির বাবা বললো, আমি নিজে আপনাদের সাথে যাবো ওখানে আমার তো একটা বাসাও আছে কোন অসুবিধা হবে না ... বাবুনের মা তো কেঁদেই চলেছে .....ও যদি পরিষ্কার করে বলতো ওই মেয়েকে আমরা আশীর্বাদ করে বিঁয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রাখতাম । ওর বাবা কে তো জানেন কেমন হুজুগে মানুষ ,ও ফোনে বললো পুজোর সময় তোমাকে সব বলবো আর বাড়িতেও আমি তাও বললাম ওরে তুই যেটা ভালো মনে করবি তাই করিস। এখনো করতে পারিস। ওআমাকে বললো---মা এখন করলে হবে ? আমি তাও বললাম রেজিস্ট্রি করে রাখ ,তোর যখন পছন্দ ..... কি হয়ে গেলো গো ...!!!তারপর কলকাতায় নিয়ে চিকিৎসা চলে ছিল অনেক দিন ... ওর দাদাও ভাইয়েরা খবর পেয়ে লন্ডন থেকে চলে আসে কলকাতায় ।সেখানে বাড়ি করেছে শুনেছি । এখান থেকে মাকে বাবাকে নিয়ে গেছে ,আর ওর বাবাও ছেলের শোকে হার্ট আ্যটাকে মারা গেছে ...!ওকে ওর দাদা বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করে ভালো করেছে ঠিকই কিন্ত আর বিঁয়েই করেনি.. ...! কেমন বড়চুল,মোটা ফ্রেমের চশমা ,বাইরেই থাকে ,,,, সুমির বাবার সাথে শেষ কলকাতায় দেখা ... সুমির কাছে একবার শুনে ছিলাম প্রেসিডেন্সি কলেজে কি অনুষ্ঠানে ওর ডাক পড়েছিল কি বিষয়ে লেকচার দেওয়ার জন্য ......। সুমি কলকাতার ওদের যত আত্মীয় স্বজন ,এমন কি ওর এক পুলিশের বড় অফিসার দাদাকে দিয়েও খোঁজ নেয়..... ওদের সাথে কত বড় মানুষের যোগাযোগ তাও পারলো না মেয়েটা .. অনেক চেষ্টা করেও ওর ফোন নম্বর জোগাড় করতে পারেনি .....! .সবাই বলেছিলো পারলে সুমিই পারবে ,ও পারেনা এমন কোন কাজ আছে! এত মানুষের জন্য করে ও এবং ওর পরিবার ...। ভগবান ওকে শক্তি নিশ্চয়ই দেবে ,,,,, কিন্তু আজোও পারেনি এটা যে ওর বুকের কত বড় যন্ত্রনা আজো বয়ে বেড়ায় ..... ওর বিশ্বাস বাবুনদাকে একদিন ও খুঁজে পাবেই ... কিন্ত এটা বাবুনদার ওর ওপর দীর্ঘশ্বাস না অভিশাপ ..???.ও যে অন্যায় করেছিলো সেটা তো বড়দের কথা শুনেই !!অনিমার বাবা নাকি দেখেছিল ওর কাকার শ্রাদ্ধের সময় একজন মানুষকে চুপচাপ গম্ভীর ওই দাড়ি বড়চুল মনে হয়েছিল ওনার যে অনেকটাই ! অমন চেহারার মানুষ কে বলতে সাহস পায়নি অত লোকজনের মধ্যে তাই কিছু জিজ্ঞেসও করেনি ,,, কি জীবন !!! একজন মেয়ে ঝি ,চাকরের থেকেও অধম দাসীবৃত্তি করে গেল সংসারে ,তাও কিনা তার নিজের বাপের ঘরে! নিজের মায়ের কাছে ,দাদা ,দিদি দের কাছে .......! তবু ও তার জীবনে সত্যি কারের ভালোবাসা এসেছিল গোপনে ,সে ভালোবাসা সত্যি কি অমরত্ব লাভ করেছে ............
আমার (সুমির) আজো অজানা ,আমিও তো একজন নারী তাই ,সংসার করতে করতে বুঝতে পারি না আমরা কি সত্যিই নিজেদের মতো বাঁচতে পারিনা ??? সব কিছুর আড়ালে একটা কোথায় যেন দুঃখ লুকিয়ে রাখি যা চিরদিন চাপা দেওয়া থাকবে অন্তরে?? বাইরে হাসি খুশি দিয়ে সকলের ভালোলাগার জিনিস ভালো না লাগলেও ভালোবেসে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে? নিজের ইচ্ছেগুলোকে গলা টিপে হত্যা করে ,যা অনেকটা দাসী বৃত্তিরই কাজ বলে গণ্য এই সমাজে ......! আমরা নারীরা কোন না কোন দিক দিয়েই হয়তো "দাসী "ই এই সমাজে । জানিনা এই সমাজ কখনও পাল্টাবে কিনা ............
"দাসীর" ইতি টানতে হলো চোখের জলে ..........
বিশেষ দ্রব্যষ্টঃ....[এখানের সব চরিত্রই বাস্তব গল্পের কারনে দু একটা নাম বদলাতে হয়ছে ঠিক ই কিন্ত চরিত্র গুলোর মধ্যেই যে আমরা সবাই ঘুরে বেড়াই ...শুধু দুজন ছাড়া ..একজন পৃথিবী ছেড়ে আর একজন থেকেও নেই ...এখনো আমরা সংসারে থেকেও সবাই একসাথেই আছি কথা হয় ..শুধু বয়সটাই এগিয়েছে মনগুলো সেই আগের মতোই ...]🙏
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register