Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে তনিমা হাজরা (পর্ব - ৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে তনিমা হাজরা (পর্ব - ৮)

ছড়িয়ে জড়িয়ে

খনার বচনের কথা বলছিলাম। বিজ্ঞানে যেমন সূত্র বা তত্ত্বে আবিস্কারকের পেটেন্ট থাকে এবং সেগুলোকে যত্ন করে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে সেইরকম খনার বচনগুলিকেও খুব দায়িত্বশীল ভাবে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। আগের পর্বে কৃষি ও বৃষ্টিপাত, সার ও ভূমিকম্প সম্পর্কীয় বচন গুলির কথা বলেছিলাম। আরও কিছু বিবিধ বিষয় নিয়ে রচিত বচন গুলির কথা এখন বলিঃ-
হালচালন শুরু করতে হবে দিনক্ষণ বুঝে এবং দিক নির্ণয় করে। জমির আকৃতি এবং ঢালু বুঝে আর শস্যও বুনতে হবে এসব বিবেচনা করেই।
(১) শুভক্ষণ দেখে করো যাত্রা, পথে যেন না পাও অশুভ বার্তা, মাঠে গিয়া করো দিকনিরূপণ, পুবদিক হতে হালের চলন, পূর্ণিমায় অমায় যে ধরে হাল, তার দুঃখ বৎসর কাল, তার বলদের হবে বাত, ঘরে আকাল হবে ভাত।।
(২) গাঁ গড়ানে ঘন পা, যেমন মা, তেমন ছা। থেকে বলদ না চষে হাল, সে আহাম্মক চিরকাল। আঁতে পুতে চাষে যাই, পুতের অভাবে সোদর ভাই। বসে খাটায় আধা পায় খাটে খাটায় দুনো পায়।।
মা অর্থ্যাৎ জমির চরিত্র বুঝে বীজতলার দুরত্ব নির্ধারণ করতে হয়। যেমন ধরো জমি গড়ানে অর্থাৎ ঢালু হলে ঘন করে বীজ রুইতে হয়, এতে মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে। আবার সমতল হলে গায়ে গায়ে না রুয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখা সমীচীন। ঘরে বলদ গরু থাকলে তাকে বসিয়ে খেতে না দিয়ে হাল চষার কাজে লাগানোই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। নিজের জমিতে বাইরের লোককে চাষের অধিকার না দিয়ে পুত্রগণকে নিয়ে চাষ করাই উচিত, কিন্তু নেহাৎ পুত্র না থাকলে সহোদর ভাইকে নেওয়া যেতে পারে। এতে ঘরের ফসল ও তার মুনাফা ঘরেই থাকবে। যে নিজে ঘরে বসে থেকে জমি ভাগে চাষ করতে ইজারা দেয় সে আধা লাভ পায়, আর যে নিজেও খাটে তার লাভ দ্বিগুণ।
এবার হচ্ছে উপযুক্ত শারীরিক লক্ষণ দেখে সক্ষম গাই বা বলদ চিনে কেনার কথা। (১) ছ'ঘর ন'ঘর ভাগ্যে পাই, সাতুল দেখে দূরে পালাই, গরু চিনো বা না চিনো ধলা, ঘুঁচি দেখে কিনো, কালো গাইয়ের দুধ মিঠে, বাঁকা শিঙের তাকত বটে। গাই কিনবে খ্যাঁকরা, বউ আনবে নেকরা। গাই কিনবে দুয়ে, বলদ আনবে বেয়ে।।
ছয়টি বা নয়টি দন্তবিশিষ্ট গরু সবচেয়ে ভালো। সাতটি দাঁতওয়ালা গরু নৈব নৈব চ। সাদা রঙের এবং উঁচু ঘুঁচি অর্থাৎ ঘাড়ের হাড়বিশিষ্ট বলদই চাষের পক্ষে সর্বোত্তম। কালো গরুর দুধ মিষ্ট এবং বাঁকা শিঙওয়ালা বলদের গায়ের জোর বেশি। গোরু খেঁকরা অর্থ্যাৎ মেদহীন কেনা উচিত বৌ নেক অর্থাৎ বিশ্বস্ত আনা উচিত। গাই দুয়ে এবং বলদ হাল চষে পরীক্ষা করে কিনতে পারলে ভালো।
বাস্তু অর্থ্যাৎ গৃহ নির্মাণের বিধিও খনার বচনে পাওয়া যায়। (১) পুবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ, উত্তরে কলা দক্ষিণে মেলা দক্ষিণে ছেড়ে, উত্তরে বেড়ে ঘর করোগে পোতা জুড়ে।। (২) নিম নিশিন্দা তেঁতুল তাল ঘরে পুঁতো না কোনো কাল। বক বকুল চাঁপা, তিন পুঁতো না বাপা।
শিলাবৃষ্টি বা গুটিকাপাত এর স্থান সংক্রান্ত শুভাশুভ লক্ষণের কথাও আছেঃ-
যেবার গুটিকাপাত সাগরতীরেতে সর্বদা মঙ্গল ঘটে কহে জ্যোতির্বিদে। খনা কহে মিহির কে - নাহিকো সংশয়, নানা শস্যে পরিপূর্ণা বসুন্ধরা হয়।।
সাগরে গুটি শস্য ভরা সুখবছরা বসুন্ধরা।।
বাঁশ চাষের ও কর্তনের পদ্ধতির বিষয়ে বচনগুলি এবার শুনে নিই তাহলেঃ- (১) শুন বাপু চাষার ব্যাটা বাঁশঝাড়ে দাও ধানের চিটা। দিলে চিটা বাঁশের গোড়ে, বিঘে ভুঁই ভরবে ঝাড়ে।। (২) ফাগুনে আগুন, চৈতে মাটি, বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি, ছেড়ে বাঁশের লাতি, আগে বাঁশের পিতেমকে কাটি।।
অর্থাৎ কিনা ফাগুন মাসের বাঁশ গাছের গোড়ার আগাছা জ্বালিয়ে দিয়ে চৈত্র মাসে নতুন মাটি দিলে বাঁশের ঝাড় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বাঁশের নাতি অর্থ্যাৎ কচি বাঁশ না কেটে বাঁশের পিতেম বা পিতামহ বা পাকা বাঁশ আগে কাটতে হয়।। (৩) বাঁশের নাতি কলার পো, বছর বছর তুলে রো।।
বাঁশ ও কলাগাছের চারা প্রতিবছর তুলে পুনরায় রোপণ করলে উচ্চফলন ঘটে।। (৪) দাতার নারিকেল বখিলের বাঁশ, কাট না কাট বাড়ে বারোমাস।।
নারিকেল গাছের ফল কাটলে অধিক ফলন আর বাঁশগাছ না কাটিলে অধিক ফলন।। (৫) নারিকেল গোড়ে দিলে লুন, ফলন বাড়ে হয়ে দশগুণ।। (৬) একপুরুষে রোপে তাল, পরপুরুষে করে পাল, আর পুরুষে ভুঞ্জে তাল। বার বছরে তালের গতি, পোঁতে পিতেম খায় নাতি।।
তাল গাছ পুঁতবার বার বছর বাদে ফল দেয়। এক পুরুষে পুঁতলে দুপুরুষ বাদে ফল জন্মে।।
এরপরের পর্বে বলব নানাপ্রকার শস্যচাষে খনার বচন গুলির কথা।।

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register