Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিজয়া দেব (পর্ব - ৬)

গোপনে গড়েছে কত স্বপ্নিল সাঁকো

বিকেলে বেরিয়ে ছিলাম সান্ধ্যভ্রমণের জন্যে। এ শহরের আনাচকানাচে প্রথম যৌবন থেকে আজ অবদি সময় একই ফ্রেমে বন্দি আছে, নিজস্ব অনুভূতির দিক দিয়ে। কিন্তু এরকম ভিড়ভাট্টা, ট্রাফিক জ্যাম আগে ছিল না। একটা নিরুপদ্রব সহজ সরল শান্ত শহর, আন্তরিক পরিপাশ সেসব আর আগের মত নেই। বেরিয়েছি সান্ধ্য ভ্রমণে। সন্ধ্যা নামছে ধীরে, এ সময়টা বড্ড প্রিয়। তবে এই পথে এই অস্বাভাবিক যানজটের আড়ালে কখন সন্ধ্যা নামল টেরই পেলাম না। পশ্চিম দিগন্তে সূর্য কখন যে টুপ করে ডুবে গেল।একটি মোটাসোটা লোক পাশ থেকে বলে উঠল - সকালে হাঁটতে বেরোবেন ম্যাম। বিকেলে হাঁটার উপায় নেই। কেমন জ্যাম হয়েছে দেখেছেন? বলি - সকালে আমার সময় নেই ভাই। লোকটা বলে - হ্যাঁ ম্যাম, বুঝতে পারছি। আমার ছেলেটা পড়াশোনা করে তো? রাজেন, ক্লাশ নাইন। না করলে দেবেন দু ' ঘা। ক্লাস নাইনে আটকে গেলে খুব মুশকিল। সব আপনাদের ওপর ম্যাম। ছেলেটাকে দিয়ে দিয়েছি আপনাদের কাছে। ও ছেলের দায়িত্বও আপনাদের। যানজটে আটকে আছি। বললাম - এখন মারধরের নিয়ম নেই ভাই, এখন ওদের বুঝিয়ে কাজ করাতে হবে। এমন কি ওদের এমন কথা বলতে নেই যাতে ওদের মনের ওপর চাপ পড়ে। ৷ যানজট কিছুটা হালকা হলে পর নিজেকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে বলতে গেলে কিছুটা কসরত করে বাড়ি ফিরলাম। রাত জমাট বাধছে। সন্ধ্যাবাতি দিলাম। তারপর বই, তারপর খাওয়া, তারপর টিভি তারপর শুয়ে পড়া। গতানুগতিকতার ভিড় আর কাজ, এই নিয়েই পথ চলা। খানিকটা আবছা আলোআঁধারির খেলার পর ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছিলাম হয়তো। মনে হল একটি মেয়ের মুখ ঠিক খাটের পাশ ঘেঁষে। দু'চোখে জলের ধারা, এত করুণ মুখশ্রী কখনও দেখিনি। মেঝেতে বসে আছে সে আমার দিকেই তাকিয়ে। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। না, কেউ কোথাও নেই। নিবিড় নিশ্চুপ চারপাশ। কে ছিল? চোখে জল কেন? কাঁদছিল কেন? উঠে জল খেলাম। রাত আড়াইটে বাজে। প্রবালের মা-র কথা মনে হল। খুব আশা নিয়ে এসেছিল আমার কাছে। ছেলেটার পরীক্ষা যাতে খারাপ না হয়ে যায় তার জন্যে কাকুতি করছিল। ভেবেছিল ম্যাম তো একজন মেয়ে, নিশ্চয়ই আরেক অসহায় মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারবে। কিন্তু তাকে কী করে বোঝাতাম যে আমি কতটা অসহায় এ ব্যাপারে। ওরা ওসব বুঝে না, আমি বুঝিয়ে বললেও সেভাবে বুঝবে না। আমি কি এখন প্রবালের মা -কে দেখলাম? সবার স্বপ্ন থাকে। একটা গোটা জীবন স্বপ্নে স্বপ্নে চলে যায়। অনেকের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আর গরীবের স্বপ্ন তো ফলবতী হয় না। কিন্তু স্বপ্ন দেখাটা তাই বলে ফুরিয়ে যায় না। প্রবাল পড়াশোনায় ভালো, তার মা-র কত স্বপ্ন তাকে নিয়ে। জল খেয়ে ফের শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম এলো না। সেই কান্নারত করুণ মুখশ্রী যেন আমার পাশেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছে মনে হল। আমি জানি বিপন্নতার অনেক মুখ হয়। প্রবালের মা যেমন বাস্তবিকতায় বিপন্ন তেমনি আমি নিজের কাছে নিজে বিপন্ন, বিবেক ভারি কষ্ট দেয়, চারপাশের বন্দিত্বকে চিনিয়ে দেয়, আর তখন বারবার কলমটি খাতার কাছে টেনে নিয়ে যায়। ভেতরের কষ্টটাকে বাইরে টেনে নিয়ে আসে। একধরনের মুক্তির আভাস ভেতরটাকে হালকা করে দেয়। ঘুম আর আসবে না আজ। খাতা কলম টেনে নিলাম - মুক্তি কাজ ফুরোতেই দুয়োর দিলাম তাই বলে কি মুক্তি পেলাম? কাজ ফুরোতেই সন্ধ্যারানী মলিন মুখে দুয়োরানী। দুখের বুকে হাত রাখি আজ, সুখের ঘরে কপাট দিলাম। সন্ধ্যারানী ঘরের বধূ নির্যাতিতা শান্ত তবু। আজকে দেখি বাঁকের মুখে সন্ধ্যারানীর আবছা আঁচল সূর্য -ঢলা আগুন-রঙে আগুন - রঙা রক্ত - কপোল। দুখের ঘরে কপাট দিলাম, সুখের ঘরে হাত রাখিলাম। লিখলাম বটে, কিন্তু সত্যিই কি দুখের ঘরে কপাট দিলাম? সেই যে "সন্ধ্যারানীর আবছা আঁচল /সূর্য ঢলা আগুন রঙে আগুন রঙা রক্তকপোল... " এগুলো কি স্বপ্ন নয়? "সুখের ঘরে হাত রাখিলাম " কোথায় কোন সুদূরে কীসের অস্পষ্ট ছায়ারেখা? এর নাম বুঝি সুখ? ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register