Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - পনেরো

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - পনেরো

টুকরো হাসি - পনেরো

কার নামে দোষ দেব

গণেশ দীনবন্ধুকে বলল, দানাদা আমার জন্য কিছু একটা কাজ দেখ। বাবা রিটায়ার করেছে। ভালো পরীক্ষা দিয়েও চাকরিটা কতবছর ধরে ঝুলে আছে। শুনলাম এই প্যানেলটা বাতিল হতে পারে। তবে তো আশা ভরসা সব গেল। এদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বয়স বাড়তে বাড়তে বুড়ো হয়ে গেলে নাকি বার্দ্ধক্য ভাতা দেবে। সেটাও কি পাব? তখনও তো প্যানেল হবে । সেই প্যানেল যদি বাতিল হয়?
গণা তোর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে। কি বলতে চাইছিস গুছিয়ে বল। ভ্যাজর ভ্যাজর করিস না। 
আমার এবার একটা কাজ করা দরকার। না হলে চলবে না। তোমাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে।
কেন? তোর তো খুব লেখাপড়ার উপর ভক্তি। তাতে কিছু হল না?
এম এ পরীক্ষাটা দিতেই পারলাম না। এখন মনে হয় হাতের কাজ জানলে হয়ত পরিযায়ী পাখির মতো উড়ে অন্য কোথাও চাকরি পেতাম। শুনলাম আমাদের চাকরির প্যানেলটায় নাকি প্রচুর দুনম্বরি আছে। শুনেছি অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়ে গেছে। অথচ গাদাগুচ্ছের লিখেও আমার কিছু হল না। বাবা মাকে ফেলে দূরে যেতেও পারব না। এখন ভাবি কেন যে নেতাদের পিছনে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরলাম না!
তোরা অনেকেই সময়ের কাজ সময়ে করিস না। তখন ফালতু লেখা পড়া করিস। তোকে বললাম ছাই ওড়া। তুই আমার কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলি। বইতেই তো লেখা আছে যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই। আমি তো ছাই ওড়ালাম। গুড়ো ছাইয়ের সঙ্গে অল্প ডিটারজেন্ট মিশিয়ে। দোকানে দোকানে ব্যাপক বিক্রি।বাংলার মায়েরা বাসন মেজে ধন্য ধন্য করতে লাগল। সেদিন যদি আমার কথা শুনতি তাহলে আজ প্যানেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হত না।     
তুমি ঠিকই বলেছ। প্যারালিসিসের মতো ওই চাকরি পেয়ে লাভও হত না। ঠিক ঠিক মাইনে পাবার দাবিতে শীতের রাতে ফুটপাথে শুয়ে কাঁপতে হত।  আমার যে করে হোক রোজগার করা দরকার। তুমি যা করতে বলবে তাই করব।  সেই জন্যই তো তোমার কাছে এলাম দানাদা। তুমি কি সুন্দর বাড়ি গাড়ি করেছ।এলাকার লোকজন বলে তোমার রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। দেখলে নাকি চোখ জুড়িয়ে যায়। তুমি এখন কি করছ? কিসের ব্যবসা?
আমি শুধু দেখি আর ভাবি।
এ কেমন কাজ? কি দেখ তুমি? আমি দেখতে পারি না?
ছোটোবেলা থেকে তোদের মতো ছেলেরা কিছু দেখে না। শুধু লেখে।
মানে?
তুই যখন গরুর রচনা লিখতি, আমি তখন গরু দেখতাম। গোবরও দেখতাম। দেখতে দেখতে গোবর্ধন কথাটা মাথায় এল। বুঝলাম গোবরে ধন আছে। অমনি গোবরের চাকতি বানালাম। যাকে ঘুঁটে বলিস। তখনও বাংলার মায়েরা ধন্য ধন্য করতে লাগল। বেশি লাভের জন্য মাটি মেশাতে গিয়ে চোখ খুলে গেল। সেই চোখ দিয়ে গরু তো দেখলামই সঙ্গে মাটি, বালি, কয়লা।  দেখার চোখ থাকতে হবে। তবেই প্রচুর টাকা।
এটাই তোমার ব্যবসা? 
কেন! খারাপ কিছু মনে হল? মনস্থির করে লেগে যা আজীবন করে খাবি।
গণা কাজে লেগে গেল। দানা যেমন বলে দেয় গণা নির্দেশ মতো কোথাও থেকে টাকা নিয়ে আসে আবার কাউকে টাকা দিয়ে আসে। এই ভাবে লেনদেন করতে গিয়ে অনেক বিখ্যাত লোকেদের সঙ্গে দেখা হল। বিখ্যাত লোকেরা সবাই এই ব্যবসার মধ্যে আছে দেখে গণা খুব খুশি। নিজেকে বেশ সমাজের উচ্চপদস্থ মনে হল। অনেক টাকা রোজগার করতে শুরু করল সে।
এর মধ্যে পাঁচবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হাজতেও গেল। গোপনে প্রতিবারই ছাড়িয়ে আনল দানা। গণাকে বলল, ভাবিস না এটাও কাজের মধ্যে পড়ে। বইতে পড়িসনি দেশের জন্য একসময় কত মানুষ জেলে গেছে। চিন্তা করিস না এর জন্য বাড়তি টাকা পাবি।
লোকজনকে দানা ডেকে ডেকে জানাল গণাকে ভালো ছেলে মনে করে নিজের কোম্পানিতে কাজ দিল কিন্তু লেখাপড়া জানা লোক যে এত অসৎ হতে পারে তা সে বুঝতে পারেনি। শুধু অসামাজিক  কাজ করে যাচ্ছে আর দানার বদনাম করছে।
লোকজন শুনে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, সে তো বটেই। কী যে দিনকাল পড়ল।
কেমন করে চোরাচালান হচ্ছে আর কোথাকার টাকা কোথায় যাচ্ছে, এসব খতিয়ে  দেখবার জন্য একদল লোক এল। একটা বাড়ি ঘিরে ফেলতে গণা টের পেয়ে পালাতে গেল। পারল না। ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল।
দানা সারাদিন চিৎকার করে কাঁদছে। হাহাকার করছে।
লোকজন ছুটে এল। বলল, দানা তুমি এভাবে কেঁদ না। আমাদের কষ্ট হচ্ছে। গণা তো তোমার বদনামই করছিল। একটা লেখাপড়া জানা ছেলে যে এইভাবে বয়ে যাবে তা তো আমরাও ভাবতে পারছি না। শুধু শুধু ওর জন্য কেন কাঁদছ?  
দানা বলল, আমি গণার জন্য কাঁদছি না। তদন্ত করতে এসে যদি আমাকে সবাই মিলে জেরা করে তখন আমি কার নামে দোষ দেব।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register