Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - চোদ্দো

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - চোদ্দো

টুকরো হাসি - চোদ্দো

আমার কি বাঁশি শোনার বয়স

বিতানের ঠাকুমাকে প্রায় এক বছরের মতো করোনার ভয়ে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির সবাই বলেছে ঘরের ভিতর চুপটি করে বসে থাকতে। কথা শুনলেও মাঝেমাঝেই ছটফট করে উঠেছে।কড়া পাহারায় থেকে সারাক্ষণই গজ গজ করে শাপ শাপান্ত করছে করোনাকে। করোনার আগে ঠাকুমার কাজ ছিল দুপুরে খাওয়ার পরে একটা দোক্তাপান মুখে ঠুসে পোটলায় আরও কয়েকটা পানের পরিষেবা নিয়ে তার বয়সের কয়েকজনের দুয়ারে হাজির হওয়া। সেখানে হাজার গল্প। টিভিতে তো আমাদের আশপাশের পাঁচ সাতটা পাড়ার সব খবর দেয় না। ঠাকুমা বাড়িতে এসে দুয়ারে যা পাওয়া গেল তার উপরে কয়েক পোচ রঙ বুলিয়ে কয়েক ধামা ছড়িয়ে দিত। তাই শুনে বাড়ির সবার কান ঝালাপালা হয়ে যেত। ঠাকুমা কয়েকজনকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। তাদের অনেক কাজ। দুপুরে কোনো বাড়িতে মনসামঙ্গল পাঠ শোনা। নয়ত গল্প। সন্ধ্যায় কোথাও হরিনাম হবে শুনলে ঠাকুমা তার বৃদ্ধাশ্রী বাহিনী নিয়ে হাজির। কোথাও থেকে প্রসাদ ও ফুল হাতে না পাওয়া অবধি সেখান থেকে নড়বে না। সেই প্রসাদ কাটমানির ভাগের মতো বাড়ির সবাইকে নিতে হত। কেউ নাম সংকীর্তনের কথা ভাবার আগে ঠাকুমার বাহিনীর কুড়িজনের খিচুরি পায়েস আর টমেটোর চাট্‌নির কথা আগে ভাবত। সেই হামলার হাত থেকে বাড়ির লোকজন রেহাই পেয়েছে।করোনার দাপটে সেই বৃদ্ধাশ্রী বাহিনী ভেঙে ছত্রাখান। ঠাকুমার মতো কাউকেই বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও বাড়ির এর ওর ফোন নিয়ে বৃদ্ধাসংযোগ রেখেছে ঠাকুমা। বিতান বলেছিল, ‘তোমাকে একটা ফোন কিনে দিই?’ ‘না। ওই টাকা আমার ব্যাঙ্কে জমা কর। ট্যাবের বদলে টাকা পেয়ে যেমন ছাত্ররা নাচ গান করল আমিও তোদের টাকা পেলে একটা হরিনাম মেলা করব।’ একদিন টিভি দেখে ঠাকুমা রেগে গেল। বলল, ‘সবই তো চলছে। রাস্তার লোকদের দেখলে মনে হয় করোনা নেই। সবাই মহা আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ বলল, ‘আজ আমাকে কেউ আটকাবি না আমি যাবোই।’ বাড়িতে শান্তি রক্ষার জন্য সবাই বলল, ‘যাবে কিন্তু এক ঘন্টার বেশি বাইরে থাকবে না।’ ঠাকুমা বেরিয়ে গেল। মুক্তির আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।রঘুর দোকান থেকে দোক্তা কিনল। রামের দোকান থেকে পান। বাড়ির সবার জন্য যা মনে এল সব কিনল। ঘুরতে ঘুরতে একেবারে বড়ো রাস্তায়। সেখানে বাস,অটো, ট্যাক্সি,মোটর সাইকেল,সাইকেল সব বাই বাই করে ছুটছে। ঠাকুমার সেদিকে খেয়াল নেই। নিজের মনের আনন্দে চারিদিকের দোকান দেখছে আর ভাবছে কী কেনা যায়।পাশ দিয়ে সবরকম যান বাহন যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই। যে কোনো সময় ধাক্কা লেগে যেতে পারে। অল্প বয়সের একটি ছেলে হাত নাড়িয়ে ঠাকুমাকে সরতে বলছে। নতুন চাকরিতে ঢুকেছে। ভালো কাজ করলে যদি মাইনে বাড়ে চাকরি পাকা হয় সেই আশায় কাজে খুব উৎসাহ। সে হাত নাড়ালেও সেদিকে নজর নেই ঠাকুমার। গাড়ির তোয়াক্কা না করে হাঁটছে। কিছু একটা হলে চাকরি থাকবে না এই ভয়ে ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে ছেলেটি। ওই দৃশ্য দেখে রাস্তার দু’পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সবারই মনের অবস্থা এমন, ভাবছে বুড়ি রাস্তায় যেমন হাঁটছে যদি গাড়ি চাপা পড়ে! ভয়ে সবাই মিলে চিৎকার করছে। কিছুই কানে নিচ্ছে না ঠাকুমা। ট্রাফিকের ছেলেটি উত্তেজনায় পকেট থেকে একটা বাঁশি বের করল। বেশ কয়েকবার জোরে বাজাল।কোনো লাভ হল না। ইতিমধ্যে একটা বাসের ড্রাইভার ঠাকুমাকে চাপা দিতে দিতে কোনোরকমে পাশ কাটিয়ে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে বাঁচল। বাঁশি বাজাতে বাজাতে ছুটে এল ছেলেটি।বলল, ‘আমি তোমার জন্য সেই থেকে বাঁশি বাজাচ্ছি। তুমি শুনতে পাচ্ছ না?’ ‘কি বললি?’ তেড়ে উঠল ঠাকুমা। বলল, ‘তোর সাহস তো কম না। আমার দেখে বুঝতে পারছিস না। কী শখ দেখ। আমায় দেখে বাঁশি বাজাচ্ছে! আমার কি বাঁশি শোনার বয়স?’
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register