Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেসল্পে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

maro news
গল্পেসল্পে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

সৃষ্টি ছাড়ার দেশে, সর্বনাশের কালে

রঞ্জনের স্থূল দেহটা টেবিলের ওপর রয়েছে। সে টেবিল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। মর্গেতে ময়না-তদন্তের ডাঃ, ছুরি দিয়ে দেহটা ফালাফালা করে কী সব কাগজে লিখছে। একটু পরে টেবিলের ওপারে দাঁড়ানো ডোম ছেলেটাকে কিছু বলে কাগজ নিয়ে চলে গেল।

রঞ্জনও বাইরে এসে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে সুমনকে সব বৃত্তান্ত বলার চেষ্টা করলেও ছেলে বা ওর বন্ধুরা কেউই কোন উত্তর দিল না, ওর অস্তিত্বটুকুও ওরা অনুভব করতে পারছে না। তাওতো বটে, ওতো এখন বায়বীয়-রূপে রয়েছে। এবার সে নিশ্চিত হ'ল যে সে মরে গেছে। ঐ দেহটা না পোড়া পর্যন্ত তাকে এখন ওটার আশে-পাশেই থাকতে হবে। বড় অদ্ভুত, একবার বের হয়ে গেলে আর ঢোকার পথ বন্ধ--- অর্থাৎ তুমি এই ঐহিক লোকের আর কেউ নয়--- এখন দেখ কোথায় স্থান হয়!

হঠাৎ-ই ডোম ছেলেটা মর্গের বাইরে এসে জিজ্ঞেস করলো"বডিটা কাদের, বাড়ির কে আছে? "
ছেলে, সুমন এগিয়ে যেতেই বললো, "ফালাফালা করা বডিটা নিয়ে যাবে, না, সেলাই করে দিতে হবে;তাহ'লে কিন্তু এক হাজার টাকা লাগবে। "
"হ্যাঁ, সেলাই করে দাও" বলে, সুমন দুটো পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দিলে।
রঞ্জন অবাক! সেলাই তো ডাঃ করবে, এটা তো পুলিশ কেশ; আর তা ছাড়া ডোমের তো সেলাই করার কথা নয়;তবে কী এখানেও ভাগাভাগির ব্যাপার! তা বেশ, ছেলের বাপের সংগে হাজার টাকা ও গুণোগার গেল। ছেলেটা আজ তিনদিন ধরে ঠায় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে, ময়না-তদন্ত আর হয় না;আর ময়না-তদন্ত না করে, হসপিটালও দেহটা ছাড়বে না। কখন যে বেওয়ারিশ লাশ বলে হাড়-গোড় সব বিক্রি করে দেবে, - সম্ভাবনাই বেশী বলেই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সে মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
"ওরে, ডোম বাবা! ওরে ডাঃ! দেখ, আমি কী কিছু সংগে নিয়ে যাচ্ছি; সরকার থেকে মাইনে পাস, তবু উপরি-পাওনা পাবার লোভটা ক্রমশঃই বেড়ে যাচ্ছে। নিজের দায়িত্ব টুকু পালন করার কথা শুধু কথার-কথাই হ'য়ে আছে---ভালো রে বাবা--কী আশ্চর্য---কী শাসনতন্ত্রই না চালু হয়েছে, এ তো যন্ত্রনার একশেষ! আমি এখন বায়বীয়-রূপে আছি, তাই প্রতিবাদ করাও যা, না করাও তাই, এখন আমার পরিচিতি কেবল "বডি " বা লাশ। যা হোক, ওটার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে এদের আশেপাশে থাকতে হবে;সৎকার না হ'লে আবার অন্যলোকে যাবার ছাড়পত্র মিলবে না"ভেবে রঞ্জন হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষা করতে থাকে।
"আচ্ছা দেখি, ডাঃ কী লিখেছে রিপোর্টে! ওঃ বাবা ! দুর্ঘটনা! ওপরের চাপে, সব ওলট-পালট! সুমনের দলের রাজনৈতিক প্রতি --পক্ষ, সুমনকে বাড়িতে না পেয়ে আমাকে মারধোর করে মারলো, আর আমি মলাম দূর্ঘটনায়!, আরে রিপোর্টে তো তাই জ্বলজ্বল করছে--কী চমৎকার! "
"বেশ করেছ বাবা, আপনি বাঁচলে, বাপের নাম, এ তো পরের বাপ! তোমার পদোন্নতি হোক। সবই ওপর -ওয়ালার মহিমা! একটাই প্রার্থনা----
এ দেশে জন্মে মরেও কেউ পায় না শান্তি, শুধু মিথ্যাচার, কপটতা আর বিভ্রান্তি; বকশিশ দেবে, মিলবে তবে ডেড-বডি; নয়, লেখা হবে বলে লাশ বেওয়ারিশ, হাড়-গোড় সব একে একে হবে হাপিশ, ঠাঁই পাবে পণ্য-শালায় খণ্ডিত আকারে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register