- 11
- 0
আই ফিল দ্য এন্ডিং, বিফোর ইট ইভেন স্টার্টস
বর্তমান সময়, অংশুমান আমাকে ছুড়ি দিয়ে মারার চেষ্টা করল। আমি কোনরকমে ওকে ঠেকানোর চেষ্টা করে বললাম,'কী করছিস টা কী? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?' 'না। আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি। অসুস্থ তুই। মনে আছে তুই কীভাবে পুলিশকে বলেছিলিস যে কৃষ্ণার মারা যাওয়ার দিন তোর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল?' 'হ্যাঁ হয়েছিল তো সত্যিই হয়েছিল। তুই তো রক্তও দেখেছিলিস।' 'ওসব মিথ্যে। খুব সহজে সেসব করা যায়। আমরা তিনজন তখন বাড়িতে ছিলাম একমাত্র তুই ছিলিস না। তোর কোনো অ্যালিবাই আছে?' 'না নেই। কারণ এতো রাতে ওই এলাকায় কেউ থাকে না। আর তুই কী বলতে চাস,আমি খুনি?' 'হ্যাঁ,কারণ কোনো স্বপ্ন তুই দেখিসনি কোনোদিন। সব বানানো, সাজানো ঘটনা।শুধু শুধু পরিস্থিতি বুঝে লাল জ্যাকেটের বাহানা দিলি তুই।' 'না না। আমি সত্যিই দেখেছিলাম ওটা, বিশ্বাস কর। ভেবে দেখ, যেদিন রীতেশ মারা যায় সেদিন তো তুই নিজেই আমার অ্যালিবাই ছিলিস....'
পাঁচ দিন আগে, কৃষ্ণার মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক ইনভেস্টিগেশন করা হয়ে গেছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত খুনির ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি। কেস কতদূর এগিয়েছে তাও জানি না। তবে আমাদের চারজনের মনমেজাজ একেবারেই ভালো ছিল না। সেইদিন আমরা চারজন আবার অংশুমানের বাড়িতে জড়ো হই। সত্যি সত্যিই কী হয়েছিল সেদিন?খুন? নাকি অন্য কিছু? আর আমার স্বপ্ন? সেটা কী কাকতালীয়? নাকি অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে? এইসব নিয়েই আমরা আলোচনা করছিলাম। চয়ন বলে উঠল,'আমার মনে হচ্ছে অনিন্দ্যর ওই স্বপ্ন দেখাটা মোটেও ফেলে দেওয়ার বিষয় নয়।' অংশুমান বলল, 'ঠিক কী বলতে চাইছিস?' চয়ন বলল,'আমাদের পুলিশকে খবরটা জানানো উচিত ছিল।' রীতেশ বলল, 'হোয়াট্ রাবিশ্? পয়েন্টলেস্ কথা যতসব।' চয়ন বলল, 'তাহলে কীকরে ও প্রেডিক্ট্ করল বিষয়টা?' এসব শুনে আমার প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিল। আবার মন খারাপও। এই নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি। অনেকক্ষণ পরে বললাম, 'চয়ন যা বলছে সেটা ভুল কিছু নয়।' অংশুমান বলল, 'না মোটেও না। কী বলবি পুলিশকে? ভোরবেলা স্বপ্ন দেখেছিস আর সেটাই সত্যি হয়ে গেল?' আমি বললাম,'হ্যাঁ তাই বলব।' রীতেশ বলল, 'আর পুলিশও মনে করবে তোর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো সুপার পাওয়ার আছে! যার জন্য ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিস।' অংশুমান এবার চিৎকার করে বলল,'হচ্ছেটা কী এসব? এটা ইয়ার্কি মারার বিষয়?' চয়ন বলল, 'আমি এখনো বুঝতে পারছি না তোরা কীকরে ওকে সাপোর্ট্ করছিস!' অংশুমান বলল,'হ্যাঁ করছি কারণ ওর অ্যাক্সিডেন্ট্ হয়েছিল।' -'অ্যালিবাই?' - 'নেই। তার মানে এই না যে ওই খুন করেছে।' চয়ন আর অংশুমান প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। কোনোরকমে ওদের থামালাম আমরা। আমি বললাম, 'তোরা শান্ত হ একটু। আমি অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছি। কিন্ত চয়ন এমন শুরু করল যে বলতেই পারছি না কিছু।' রীতেশ বলল,'চয়ন প্লিজ স্টপ্ দিস্ ননসেন্স। ওকে বলতে দে।' আমি মাথা নীচু করে বললাম, 'আমি একেবারে কথার কথায় আসছি। আমি আবার...আমি আবার একটা স্বপ্ন দেখেছি।' চয়ন বলল, 'দেখলি, দেখলি তোরা? এসে থেকে কিচ্ছুটি বলেনি। হঠাৎ করে স্বপ্নের কথা বলে উঠল। আমি তোদের বলে দিচ্ছি ও আমাদের সবাইকে মারবে।' অংশুমান বলল, 'আর একটা কথা বললে তোকে আমি বাড়ি থেকে বার করে দিতে বাধ্য হবো।' চয়ন বলল, 'না না তোকে কষ্ট করতে হবে না, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি। তার আগে শুনে যাই আজ রাতে কে মরতে চলেছে!' আমি বললাম, 'আমি তোকেই দেখেছি চয়ন। যেটুকু বুঝতে পেরেছি তা হল কোনো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে…' চয়ন চিৎকার করে বলল, 'জানতাম আমি জানতাম। আজ যেহেতু আমি ওর বিরুদ্ধে এত কথা বলছি তাই আজ ও আমাকেই মারবে। আমি আজ থাকব না এখানে চললাম আমি।' অংশুমান বলল, 'বোকামি করিস না। একসাথে থাকলে তোর কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।' রীতেশ বলল, 'ঠিক আছে চয়ন,আজ রাতে তুই আমার সাথে থাক পাশের ঘরে। ওরা দুজন একসাথে থাকুক।' অংশুমান বলল, 'হ্যাঁ, তাহলে কোনো ভয় নেই তো।' চয়ন বলল, 'আমার আর একটা কথা আছে। আমি চাই তোদের রুমটা বাইরে থেকে লক করা হোক। আর চাবি যেন আমার কাছেই থাকে।' তিনজনে মিলে আবার তর্কাতর্কি শুরু করল। আমার আর ভালো লাগছিল না। বললাম, 'ঠিক আছে,তাই হবে। অংশুমান তোরও আমার সাথে থাকতে হবে না। এভাবে যদি তোরা প্রমাণ পাস যে আমি নির্দোষ তবে এভাবেই হোক।' আমার কথা মতো রীতেশ আর চয়ন একসাথে থাকল। অংশুমান নিজের রুমে। আর আমি একা একটা রুমে,যেটা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এসব ভাবতে ভাবতেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুম যখন ভাঙল তখন আমার সামনে অংশুমান বসে আছে। আমাকে ডেকে তুলল। বললাম, 'কী রে? এরকম হতাশ কেন লাগছে?' অংশুমান ধীরে ধীরে বলল, 'রীতেশ মারা গেছে। বাড়ির ছাদ থেকে…' আমার যেন বুকে বাজ পড়ল। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম। অংশুমান বলে চলল, 'তুই চিন্তা করিস না, তোর কোনো দোষ নেই। দরজা সকালে আমিই এসে খুলেছিলাম। গোয়েন্দারা বলছেন মৃত্যুর সময় ভোর চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে। এখন বাজে সাড়ে ছয়। একটু পরেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। তৈরি থাক।'
জেরা চলল প্রায় তিন-চার ঘণ্টা ধরে। গোয়েন্দারা আপাতত সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে। তবে সত্যিই আমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ ওনারা আসার পরেই নাকি আমার ঘরের তালা খোলা হয়েছিল। কিন্ত এরপর যা হল, সেটা আমি ভাবতেও পারলাম না। ঠিক পরেরদিন গোয়েন্দা পুলিশরা এসে চয়নকে ধরে নিয়ে গেল। তারা যেভাবে ঘটনাটা সাজিয়েছে তা হল এমন। গতকাল বাড়ির ছাদে গোয়েন্দারা দুটো আধ খাওয়া সিগারেট পায়। একটা সিগারেটের সাথে রীতেশের ডিএনএ ম্যাচ করে। কিন্ত অপরটি নয়। এবার গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকা থেকে প্রথমেই আমি বাদ গেছিলাম কারণ আমার ঘরে তালা দেওয়া ছিল। অংশুমান রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোয়, সুতরাং ওর ঘুম থেকে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাকি রইল শুধু চয়ন,যে রীতেশের সাথেই ছিল। আর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হল ওই অপর আধ খাওয়া সিগারেটে যে ফিংগারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে তা হল চয়নের। রীতেশের বডি চিত হয়েছিল। অর্থাৎ সুইসাইড কোনোভাবেই নয়। আর অতো রাতে ছাদে গিয়ে কারুর সাথে সিগারেট খাওয়া মানে সে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য কেউ। সুতরাং, চয়ন। তবে পুলিশেরা আপাতত ওকে ধরে নিয়ে গেছে রীতেশের খুন করার অভিযোগে। কৃষ্ণার খুনি কে? তা এখনও আমরা কেউ জানি না।
0 Comments.